নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, রোগীদের সঙ্গে নার্স চিকিৎসকদের অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে বাগেরহাট ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানে বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণও পেয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ২ ঘণ্টাব্যাপী এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

দুদক কর্মকর্তারা প্রথমেই বিভিন্ন অনিয়ম ও অভিযোগের বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক অসীম কুমার সমাদ্দারের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরেই তত্ত্বাবধায়ককে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে অভিযান পরিচালনা করা হয়। 

অভিযানে হাসপাতালের রান্নাঘরে অনিয়ম, রোগীদের খাবারে কম দেওয়া, চিকিৎসকদের স্বেচ্ছাচারিতা ও সঠিক সময়ে হাসপাতালে না আসা, রোগীদের সঙ্গে অসদাচরণ, হাসপাতালে সুযোগ থাকা সত্বেও বেসরকারি ক্লিনিক ডায়গনস্টিক সেন্টারে রোগ নির্ণয় পরীক্ষার জন্য চাপ প্রয়োগের সত্যতা পায় দুদক। দুদকের এমন ঝটিকা অভিযানে খুশি রোগী ও তাদের স্বজনরা।

পেটের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসা মো.

মোজাফফর হোসেন মোজাম বলেন, ডাক্তার দেখাতে আসছিলাম। অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়েছে। হাসপাতালে কয়েকটা করিয়েছি, আর বেশিরভাগ বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করাতে হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের টয়েলেট, খাবারসহ বিভিন্ন জায়গার নানা সমস্যা রয়েছে। নার্স ও চিকিৎসকদের ব্যবহারও অনেক খারাপ। দুদক যে অভিযান চালিয়েছে, এতে আমরা খুব খুশি।

আরেক রোগী মিন্টু বলেন, হাসপাতালে আমরা তেমন কোনো সেবা পাই না। দুর্নীতির কোনো শেষ নেই। রোগীদের খাবার ঠিকমত দেওয়া হয় না। দুদক অভিযান চালিয়েছে, এখন যদি কিছুটা ভাল হয় নার্স ও ডাক্তাররা।

অভিযান শেষে দুদক বাগেরহাট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান বলেন, হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে হাসপাতালে সুযোগ থাকা সত্বেও সিটিল্যাবসহ বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার জন্য রোগীদের চাপ দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছি। এ সংক্রান্ত কিছু নথিপত্রও সংগ্রহ করা হয়েছে। নার্স ও চিকিৎসকদের দুর্ব্যবহারেরও প্রমাণ পেয়েছি আমরা। হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই, যারা আছেন তারাও ঠিকমতো আসেন না।

হাসপাতালের খাবার সম্পর্কে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, হাসাপাতালের রোগীদের জন্য খাবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রোগীদের খাবার নিয়েও অভিযোগ ছিল। আমরা রান্নাঘর পরিদর্শন করেছি। যিনি মূল রান্নার দায়িত্বে তিনি রান্না করেন না। আর খাবারে কম দেওয়া হয়। রোগীদের জন্য দেওয়া এক পিস মাংসের ওজন হবে ৯৬-৯৭ গ্রাম। কিন্তু রোগীদের খাবারে দেওয়া দুই পিস মাংস মিলে হয়েছে ৯২ গ্রাম। এ থেকেই বোঝা যায়, কত বড় অনিয়ম হয় এখানে।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে বজ্র ব্যবস্থাপনার জন্য এক কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সে সংক্রান্ত মালামাল আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। কিছু নথিপত্রও চাওয়া হয়েছে। এছাড়া সকাল থেকেই গোপনে আমাদের টিম কাজ করেছি। আমরা চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও খাবার সম্পর্কে বিভিন্ন সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে। এসব বিষয় পরবর্তীতে আবারও ফলোআপ করার কথা বলেন এই কর্মকর্তা।

বাগেরহাট ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এই মুহুর্তে আমাদের ৩৪ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। নার্স প্রয়োজন ২০০ জন, সেখানে রয়েছে মাত্র ৭০ জন। জনবলসহ বিভিন্ন সংকট পূরণ করা গেলে দুদকের পক্ষ থেকে যেসব সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের করা সম্ভব হবে বলে জানান হাসপাতালের শীর্ষ কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেন, বাগেরহাট ২৫০ শয্যা হাসাপাতালে প্রতিদিন ৪ থেকে সাড়ে ৪শ’ রোগী ভর্তি থাকেন এবং বহির্বিভাগে সহস্রাধিক রোগী চিকিৎসা গ্রহন করে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী সংকটের কারনে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

জামায়াত আমির শফিকুর রহমানের হৃদ্‌যন্ত্রে অস্ত্রোপচার সকালে

রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের হৃদ্‌যন্ত্রে আগামীকাল শনিবার সকালে বড় ধরনের অস্ত্রোপচার (ওপেন হার্ট সার্জারি) করা হবে। সকাল সাড়ে সাতটায় তাঁকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হবে।

আজ শুক্রবার বিকেলে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার রাজধানীর মগবাজারে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তিনি দলের আমিরের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জানান, দলের আমির শফিকুর রহমানের আর্টারিতে (ধমনি) ছোট-বড় মোট ৫টি ব্লক ধরা পড়েছে। এর মধ্যে ৩টি ব্লক বড় (প্রায় ৮৬ শতাংশ)। বাকি ২টি ব্লকের একটি ৬০, অন্যটি ৬৭ শতাংশ। গত ৩০ জুলাই ইউনাইটেড হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করা হলে এই ব্লকগুলো শনাক্ত হয়। ১৯ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের জাতীয় সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি দুবার মঞ্চে ঢলে পড়েন। এরপর তাঁর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, জামায়াত আমিরের পরিবার ও দলের পরামর্শ ছিল দেশের বাইরে অস্ত্রোপচারের। কিন্তু তাতে আমির সম্মত হননি। তিনি দেশের চিকিৎসকদের প্রতি আস্থা রেখেছেন।

জামায়াতের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়, সুচিকিৎসার সুবিধার্থে দর্শনার্থীদের হাসপাতালে ভিড় না করতে। সবাইকে দোয়া করার আহ্বান জানানো হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জামায়াত আমির শফিকুর রহমানের হৃদ্‌যন্ত্রে অস্ত্রোপচার সকালে
  • ড্যাবের নির্বাচন ৯ আগস্ট, দুটি প্যানেলই শক্ত