চাঁদাবাজি ও মজুতদারি বন্ধ করতে না পারায় নিত্যপণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ সরকার
Published: 29th, January 2025 GMT
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজি বন্ধ ও মজুতদারি বা অযৈাক্তি মূল্য নির্ধারণের মতো অনিয়ম মোকাবিলা করতে পারেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাই নিত্যপণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সাহসী ও জরুরি পদক্ষেপ না নিলে মূল্যস্ফীতির হার কমানো কঠিন হবে।
আজ বুধবার ধানমন্ডিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৪-২৫: সংকটময় সময়ে প্রত্যাশা পূরণের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ফাহমিদা বলেন, সিপিডির পর্যবেক্ষণে পেঁয়াজ, আলু, বেগুন, ডিম, রুই মাছ, হলুদ, গম, মসুর ডাল, চিনি, গরুর মাংস, রসুন, আদা, সয়াবিন তেল এবং পাম তেলসহ ১৪টি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খল বিশ্লেষণে দামের ওঠানামা এবং অদক্ষতার জন্য বেশ কিছু বাধা দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে, প্রাথমিক বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে মজুতদারি, কমিশন এজেন্ট বা গুদাম পরিচালনাকারীদের আধিপত্য, অপর্যাপ্ত কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা এবং কৃষি পদ্ধতি, উচ্চ উপকরণ খরচ, নিম্নমানের সংরক্ষণ এবং পরিবহন সুবিধা এবং সামগ্রিক সরবরাহকে প্রভাবিত করে এমন অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া।
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, চালের বাজার ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত জটিল। সে কারণে সিপিডি চালের সরবরাহ শৃঙ্খলে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা নিরূপণের জন্য মাঠ পর্যায়ে একটি অনুসন্ধানমূলক জরিপ পরিচালনা করে, বিশেষ করে মাঝারি-পাইজাম চাল। যার লক্ষ্য ছিল প্রধানত দামের যে অস্থিরতা তার মূল কারণগুলো সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি করা।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, চাল সরবরাহ ব্যবস্থায় অসংখ্য বাজার এজেন্ট রয়েছে। বাজার মূল্যের ওপর গুদাম মালিকদের বা অটো রাইস মিলারদের উল্লেখযোগ্য আধিপত্য লক্ষ্য করা যায়। ফলস্বরূপ ধান চাষীরা প্রায়শই সঠিক দাম পান না। কিন্তু ভোক্তারা অযৌক্তিকভাবে উচ্চ মূল্যের সম্মুখীন হন, যার ফলে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়।
খাদ্য মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গে সিপিডি বলছে, বাংলাদেশে পূর্ববর্তী কর্তৃত্ববাদী সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতির মাধ্যমে একটি অকার্যকর অর্থনীতি রেখে গেছে, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ঠিক করতে হবে। বেশ কিছু খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ শৃঙ্খলের বিশ্লেষণে মধ্যস্থতাকারীদের একটি জটিল নেটওয়ার্কের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
সিপিডি বলছে, অর্থনীতিতে মুল্যস্ফীতির চাপ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধির অনুমতি দিয়েছে এবং নীতি সুদহারও বৃদ্ধি করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের উপর উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির বোঝা কমাতে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সরবরাহ-পক্ষীয় ব্যবস্থাও বাস্তবায়ন করেছে, যেমন ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশের মাধ্যমে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি করা এবং ঢাকার ভেতরে ও বাইরে ন্যায্য মূল্যের বাজার প্রতিষ্ঠা করা। তবে দুঃখের বিষয় হলো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে চাঁদাবাজি, মজুদদারি বা অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের মতো অনিয়ম মোকাবেলায় উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে পারেনি। তাই মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলি এখনও পর্যন্ত বাজারে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ হয়েছে।
সংস্থাটি আরও বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার যদি প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সাহসী এবং জরুরি পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে মূল্যস্ফীতির হার কমানো কঠিন হবে।
রাজস্ব প্রসঙ্গে সিপিডি বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে ২০২৫ অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত মোট রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩.
২০২৫ অর্থবছরের মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অর্থবছরের বাকি সময় ৪৫.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে যা মোটেই বাস্তবসম্মত নয়। সামগ্রিকভাবে কর রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক। কর রাজস্বের দুটি উৎসেই (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত ও বহির্ভূত) একই চিত্র দেখা গেছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ওই সময়ে মূসক এবং সম্পূরক শুল্ক আহরণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। জুলাই-আগস্টের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে শ্লথগতি এর বড় কারণ। কর রাজস্ব আহরণের পরিস্থিতি বহুলাংশেই সরকারকে মূসক এবং সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধিতে ধাবিত করেছে। তবে আইএমএফের শর্তপূরণের চাপও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান উচ্চ-মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতিতে এ ধরনের উদ্যোগ মোটেই কাম্য নয়। কারণ পরোক্ষ কর সকল ধরনের আয়ের মানুষের জীবনেই প্রভাব ফেলে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন ত যপণ য পদক ষ প যপণ য র ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
সবজির দাম কমতির দিকে, আটার দাম কেজিতে বাড়ল ৫ টাকা
বাজারে বেড়েছে আটার দাম। খুচরা পর্যায়ে কেজিতে আটার দাম ৫ টাকা বেড়েছে। কমেছে খোলা চিনি ও কিছু সবজির দাম। আর খুচরা দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ আগের তুলনায় কিছুটা কম রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
বিক্রেতারা জানান, খোলা ও মোড়কজাত (প্যাকেট) উভয় ধরনের আটার দামই বেড়েছে। ঢাকার বিভিন্ন খুচরা দোকান থেকে দুই সপ্তাহ আগে মোড়কজাত আটা (দুই কেজি) কেনা যেত ১০৫-১১০ টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। আর খোলা আটার কেজি ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা হয়েছে।
এর আগে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে আটার দাম এক দফা বেড়েছিল। তখন দুই কেজির মোড়কজাত আটা ৯০-৯৫ থেকে বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছিল। খোলা আটার দাম বেড়ে হয়েছিল ৪৫-৪৮ টাকা। মাঝে আটার দামে ২-৩ টাকা ওঠানামা হয়।
চালের বাজারে দরদামে কিছুটা পরিবর্তন আছে। সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে মঞ্জুর, সাগর, ডায়মন্ড ও আনোয়ার—এই চার ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের দাম কেজিতে এক-দেড় টাকা বেড়েছে। তবে খুচরা বিক্রেতারা আগের দামেই অর্থাৎ ৮০-৮২ টাকা কেজি এসব চাল বিক্রি করছেন। এ ছাড়া নাজির, পাইজাম প্রভৃতি চালের দাম আগের মতো রয়েছে।
ব্রয়লার, সোনালি মুরগি ও ডিমের দাম গত সপ্তাহের মতোই রয়েছে। গতকাল ঢাকার বাজারে ফার্মের মুরগির এক ডজন বাদামি ডিম ১৪০ টাকা বিক্রি হয়েছে। আর সাদা ডিমের দাম ডজনে এর চেয়ে ৫ টাকা কমে পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৯০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়েনি। তবে ডিলার পর্যায়ে দাম কিছুটা বেড়েছে। এতে বিক্রেতাদের কমিশনের পরিমাণ কমেছে। সপ্তাহ দুই আগে খুচরা বিক্রেতারা ডিলারের কাছ থেকে ৫ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল কিনতেন ৮৯০-৮৯৫ টাকায়; বিক্রি করতেন ৯১৫-৯২০ টাকায়। এখন সেটি ৯০০-৯১০ টাকায় কিনে আগের দামে বিক্রি করছেন।
বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহও কিছুটা কম রয়েছে। অর্থাৎ কোম্পানিগুলো অথবা ডিলাররা বাজারে কম পরিমাণে তেল সরবরাহ করছেন। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের খুচরা মুদি বিক্রেতা হুমায়ুন কবীর জানালেন, গত মঙ্গলবার ডিলারের কাছে ৫ লিটারের ৫ কার্টন তেল চেয়েছিলেন। বুধবার ডিলার মাত্র ২ কার্টন তেল দিয়ে গেছে।
শীতে সাধারণত চায়ের চাহিদা বেড়ে যায়। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, শীত আসার আগেই বেড়েছে চা–পাতার দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে (প্যাকেটজাত) চা–পাতার দাম কেজিতে ১০০ টাকার মতো বেড়েছে। বর্তমানে চা–পাতা বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকা কেজি। অবশ্য বাজারে দাম কমেছে চিনির। ১৫ দিন আগে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। গতকাল তা ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে আটার দাম এক দফা বেড়েছিল। তখন দুই কেজির মোড়কজাত আটা ৯০-৯৫ থেকে বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছিল। খোলা আটার দাম বেড়ে হয়েছিল ৪৫-৪৮ টাকা। মাঝে আটার দামে ২-৩ টাকা ওঠানামা হয়।এ ছাড়া ব্রয়লার, সোনালি মুরগি ও ডিমের দাম গত সপ্তাহের মতোই রয়েছে। গতকাল ঢাকার বাজারে ফার্মের মুরগির এক ডজন বাদামি ডিম ১৪০ টাকা বিক্রি হয়েছে। আর সাদা ডিমের দাম ডজনে এর চেয়ে ৫ টাকা কমে পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৯০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বাজারে শীতের আগাম কিছু সবজি আসতে শুরু করেছে। এতে কিছু সবজির দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এখন ১০০ টাকা কেজির নিচে বেশির ভাগ সবজি কেনা যাচ্ছে। গতকাল প্রতি কেজি বেগুন ৮০ থেকে ১৪০ টাকায় ও টমেটো ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া করলা, কাঁকরোল, বরবটি, ঢ্যাঁড়স, পটোল, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল প্রভৃতি সবজির দাম রাখা হয়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। এক-দুই সপ্তাহ আগে এসব সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেশি ছিল।
বর্তমানে শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও লালশাকের মতো শীত মৌসুমের কিছু আগাম শাকসবজি বাজারে এসেছে। যদিও এসব সবজির দাম তুলনামূলক বেশি। সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘দুই-তিন মাস ধরে চড়া দামে সবজি কিনছি। এখন সবজির দাম কিছুটা কমা শুরু হয়েছে। কিন্তু এর আগেই বেড়ে গেছে আটা ও মিনিকেট চালের দাম। বাড়তি খরচ থেকে আমাদের মুক্তি নেই।’