৪৩ বছরে সবচেয়ে বড় হার শ্রীলঙ্কার
Published: 1st, February 2025 GMT
গলে শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি, ২০২৫) বৃষ্টির জন্য শ্রীলঙ্কা-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজের দুই সেশনের খেলা বাতিল হয়। তাতে অস্ট্রেলিয়ান গণমাধ্যমগুলো দাবি করে বৃষ্টির জন্য তৃতীয় দিনেই হারতে হয়নি স্বাগতিকদের। চতুর্থ দিনে ভাগ্যদেবী লঙ্কানদের প্রতি সদয় না হওয়ায় আর বৃষ্টি হলো না। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার দলও নূন্যতম লড়াই করতে ভুলে গেল। তাতেই নিজেদের ৪৩ বছরের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরাজয় বরণ করতে হলো তাদের।
আজ (১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) চতুর্থ দিনে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৫ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। তাতেই সিরিজের প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ইনিংস ও ২৪২ রানে হেরে গেছে শ্রীলঙ্কা। প্রায় দুই বছর পর টেস্ট খেলতে নামা ম্যাথু কুনেম্যান দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯ উইকেট নিয়ে ধসিয়ে দেন স্বাগতিক ব্যাটিং লাইন-আপ।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অজিদের এটাই সর্বোচ্চ রানের জয়ের রেকর্ড। এর আগে ২০১২ সালে মেলবোর্নে ইনিংস ও ২০১ রানের জয় পেয়েছিল তারা। লঙ্কানদেরও এতো বড় হারের রেকর্ড নেই। এর আগে ২০১৭ সালে ভারতের বিপক্ষে নাগপুরে ইনিংস ও ২৩৯ রানে হেরেছিল তারা।
আরো পড়ুন:
বুড়ো বয়সে সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় খাজা
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার দল ঘোষণা, নতুন মুখ দিনুশা
শ্রীলঙ্কা আজ দিন শুরু করেছিল ৫ উইকেট ১৩৬ রান নিয়ে। ক্রিজে ছিলেন অভিজ্ঞ দিনেশ চান্ডিমাল (৬৩) ও কুশল মেন্ডিস (১০)। তবে আগের দিনের স্কোরের সঙ্গে আর মাত্র ৯ রান যোগ করতে পারেন চান্ডিমাল। ৭২ রানে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে চান্ডিমাল আউট হন। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসের সংগ্রহ ১৬৫ রান।
ফলে অস্ট্রেলিয়া ৪৮৯ রানের লিড পায়। ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসেও সুবিধা করতে পারেননি লঙ্কান ব্যাটাররা। তারা গুটিয়ে যায় মাত্র ২৪৭ রানে। কুনেম্যান ৯ উইকেটের সাথে নাথ্যান লায়ন দুই ইনিংসে নিয়েছেন ৭ উইকেট।
তবে বোলাররা নয় ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতক তুলে নিয়ে ২৩২ রানের ইনিংস খেলে ক্যাঙ্গারুদের জয়ের নায়ক উসমান খাজা। সাথে স্টিভেন স্মিথ ও জস ইগলিসের শতকে ভর করে অস্ট্রেলিয়া তোলে ৬৭৪ রান।
এই গলেই আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মাঠে নামবে দুই দল।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়
‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।
উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’
গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’
প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।
আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)
সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।
আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।
কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।
আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫