তিন ছাত্রকে ছাড়িয়ে নিতে থানায় হামলা শিক্ষার্থীদের
Published: 4th, February 2025 GMT
রাজধানীর উত্তরায় তিন ছাত্র আটকের ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানা ঘেরাওয়ের পর উত্তরা পশ্চিম থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ হামলা চালান বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এ সময় উত্তরা পশ্চিম থানায় কর্তব্যরত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মহাদেব আহত হয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আজ বিকেলে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের গাউসুল আজম এভিনিউ সড়কে উত্তরা পশ্চিম থানা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে বৈঠক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। সেখান থেকে আকাশ, রবিন ও বাপ্পি নামের তিন ছাত্রকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আমাদের তিন সহপাঠী আকাশ, রবিন ও বাপ্পিকে আটক করে উত্তরা পূর্ব থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পূর্ব থানায় আমরা গিয়ে জানতে পারি, তিন ছাত্রকে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ আটক করে উত্তরা পূর্ব থানা-পুলিশের হেফাজতে রেখেছে। এতে উত্তেজিত ছাত্ররা উত্তরা পশ্চিম থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। সেই সঙ্গে থানার গেটে হামলা চালিয়েছে।
চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক ওই তিন ছাত্রকে পরে পুলিশ ছেড়ে দেয়। সন্ধ্যার পর থেকে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছাত্রদের বৈঠক চলছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রওনক জাহান সাংবাদিকদের বলেন, উত্তরা পূর্ব থানার কম্পিউটার ল্যাব রুমে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে পুলিশ। পুলিশের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা শান্ত হয়েছেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এক দিনে ৩ বার ভূমিকম্প
দেশে গতকাল শনিবার সাড়ে সাত ঘণ্টায় তিনবার ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে সকালে একবার ও সন্ধ্যায় পরপর দুবার ভূকম্পন অনুভূত হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিট ৪ সেকেন্ডে রিখটার স্কেলে ৩ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়। এর এক সেকেন্ড পর সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিট ৫ সেকেন্ডে দ্বিতীয়বার ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে এটির মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। প্রথমটির উৎপত্তিস্থল রাজধানীর বাড্ডায়, দ্বিতীয়টির উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে।
এর আগে গতকাল সকালে নরসিংদীতে আরও একটি মৃদু ভূমিকম্প হয়। জেলার পলাশ উপজেলায় সকাল ১০টা ৩৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডে ভূকম্পনটি অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৩।
এর আগে গত শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলো। এদিনের ভূমিকম্পে শিশুসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ছয় শতাধিক ব্যক্তি। সবচেয়ে বেশি—পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে। এ ছাড়া ঢাকায় চারজন ও নারায়ণগঞ্জে একজন মারা যান। ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে কেউ কেউ ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন। অনেকেই ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসেন। ভূমিকম্পে কিছু ভবন হেলে পড়ে ও ফাটল দেখা দেয়।
নরসিংদীতে আতঙ্কশুক্রবারের ভূমিকম্পের আতঙ্ক এখনো তাড়া করছে নরসিংদীবাসীকে। এর মধ্যে গতকাল সকাল ও সন্ধ্যায় দুবার অল্প মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এ দুটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলও নরসিংদী। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, আবার ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কায় শুক্রবার রাতে তাঁরা ঘুমাতে পারেননি।
নরসিংদী শহরের বহুতল ভবন হাজেরা টাওয়ারের বাসিন্দা গৃহবধূ শাহনাজ আক্তার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) ভূমিকম্পের সময় দুই সন্তান ছিল পাশে। একটির বয়স ছয়, আরেকটির তিন। তীব্র ঝাঁকুনিতে ভয়ে–আতঙ্কে বড়টিকে রেখে, ছোটটিকে কোলে নিয়ে দৌড় দিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি বড়টা কান্না করছে। আমার তো তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা। সারা রাত একটুও ঘুমাতে পারিনি, আবার ভূমিকম্প হওয়ার আতঙ্কে।’
ভূমিকম্প টের পেয়েই পাঁচতলা থেকে নিচে নেমে এসেছিলেন নরসিংদীর একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক ও ব্রাহ্মন্দী এলাকার বাসিন্দা আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দেখি, নারী-শিশুসহ সবাই চিৎকার করছে, আর আল্লাহকে ডাকছে। বিল্ডিংয়ে এখন থাকতেই ভয় করছে। কখন আবার ভূমিকম্প হয়, ভয়ে আতঙ্কে সারা রাত দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি।’
পলাশের কাঁচা সড়কে ফাটল দেখা দেওয়া পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা শাকিল আহমেদ বলেন, ‘ভূমিকম্পের (শুক্রবার) পর থেকে এখনো আমরা আতঙ্কের মধ্যেই আছি। মনে হলেই বুকের মধ্যে ধড়ফড় করে। রাতে বাচ্চাদের নিয়ে ঘুমাতে পর্যন্ত পারি নাই। আল্লাহ, আমাদের রক্ষা করছে।’
পলাশের গজারিয়া এলাকার রহিম মিয়া টিনের ঘরে বসবাস করেন। তিনি বলেন, ‘এমন ঝাক্কা জীবনেও খাই নাই। মনে হইতেছিল, ঘর ভাইঙ্গা ওপরে পড়ব। আজ সারা দিন ধরে আতঙ্কে আছি। ঘরের সবাইরে সতর্ক কইরা বলছি, বেশির ভাগ সময় ঘরের বাইরে থাকতে।’
মালিতা এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, ‘এলাকায় মাটির ঘরের দেয়াল ধসে একজনের মৃত্যুর পর আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। সবাই মিলে সতর্ক থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তু আতঙ্ক কাটছে না।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার প্রধান দুটি সরকারি হাসপাতালে গতকাল পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আহত আর কেউ চিকিৎসাধীন নেই। ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ এন এম মিজানুর রহমান ও নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফরিদা গুলশানারা কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাত সদস্যের একটি দল পলাশসহ বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে ধসে পড়া মাটির নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছে। মাটিতে ফাটল দেখা যাওয়া পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ ও ঘোড়াশাল ডেইরি ফার্মেও যায় প্রতিনিধিদলটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আ স ম ওবায়দুল্লাহ বলেন, প্রাথমিকভাবে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর ভূমিকম্পের ধরন ও গভীরতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কমিটিভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে কাজ করছে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। পাশাপাশি ভূমিকম্পে ফাটল ধরা সরকারি–বেসরকারি ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে তারা। এ ছাড়া নরসিংদী শহরে হেলে পড়া ভবন, ফাটল ধরা ভবন চিহ্নিত করতে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
নরসিংদী পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. মনোয়ার হোসেন জানান, পৌর নির্বাহী প্রকৌশলীকে প্রধান করে গঠন করা এ কমিটি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করবেন। পরবর্তী সময়ে জেলা পর্যায়ের কমিটি মোট ক্ষতির পরিসংখ্যান নির্ধারণ করবে।
জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) দুপুর ১২টায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং আহ্বান করা হয়েছে। ওই মিটিংয়ে আমরা জেলাজুড়ে সব ক্ষয়ক্ষতির পর্যালোচনা করব এবং পরবর্তী সময়ে ভূমিকম্পে করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’ গতকাল আরও দুবার ভূকম্পন অনুভূত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, শুক্রবারের ভূমিকম্পের তুলনায় শনিবারের দুটি ভূমকম্পের মাত্রা ছিল কম। তবে আতঙ্কের বিষয়, এ দুটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলও নরসিংদী। তাই সবাইকে আরেকটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
ভূমিকম্পে নিহত বাবা-ছেলেসহ পাঁচজনের পরিবারকে ২৫ হাজার করে টাকা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান জানান, শুক্রবার রাতে এবং গতকাল সকালে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের হাতে এসব টাকা তুলে দেওয়া হয়। নিহত ব্যক্তিদের সবার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস–পরীক্ষা স্থগিতপরপর দুই দিন ভূমিকম্প হওয়ায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা আতঙ্কিত হওয়ায় এবং কয়েকজন শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার ঘটনায় আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের অভ্যন্তরীণ ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। স্থগিত হওয়া পরীক্ষার নতুন সময়সূচি পরে জানানো হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় ভূমিকম্প হওয়ার পর ছাত্রী হলগুলোতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে শামসুন নাহার হলের তিনজন, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের একজন ও রোকেয়া হলের একজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।