স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন মাস ছয়েক পূর্ণ হলেও এখনও তাদের দোসরমুক্ত করা যাচ্ছেনা নারায়ণগঞ্জকে। এখনও প্রতিটি পাড়া মহল্লায় ওই সকল দোসরদের দেখা মিলছে। শুধু তাই নয়, তাদেরকে আগের মতই অনেকটা প্রভাব খাটাতেও দেখা যাচ্ছে।

কোন কোন এলাকায় এখনও নিয়মিত চাঁদাবাজী ও নানা অপকর্মের সাথেও জড়িত থাকছেন তারা। কিন্তু তাদের এ বহাল থাকার পেছনে আসলে কারা রয়েছেন? কাদের শেল্টারে তারা বহাল থেকে এখনও অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন?  এমন প্রশ্ন আজ জনমনে বার বার ঘুরপাক খেতে দেখা যাচ্ছে।

সম্প্রতি সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জ বিশেষ করে বন্দরে ওই সমস্ত দোসরদের বেশি উঁকিঝুঁকি মারতে দেখা যাচ্ছে। দিন যতই বাড়ছে, ততই বাড়ছে এ উঁকিঝুঁকির সংখ্যা। জুলাই-আগস্টে যারা সরাসরি ছাত্র আন্দোলনের বিরোধীতা করেছিলো, তাদের ওপর হামলা এবং তাদের বাড়ীঘরে গিয়ে অভিভাবকদের ভয়ভীতি দেখিয়েছিলো তাদের মধ্যে কেউ কেউ রাতারাতি বনে যাচ্ছেন বিএনপি নেতা।

তেমনি একজন হলেন সাবেক সাংসদ সেলিম ওসমানের দোসর বন্দর থানা জাতীয় যুব সংহতির দপ্তর সম্পাদক ও ২২নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মো: সানী হোসাইন। তার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের সরাসরি বিরোধীতা করাসহ রয়েছে নানা অভিযোগ।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বন্দরের কুখ্যাত খান মাসুদ যখন ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালিয়েছিলো, সেই মিছিলে সানীও ছিলো বলে স্থানীদের সূত্রে জানাগেছে।

স্থানীয়দের সূত্রে আরও জানাযায়, সাবেক সাংসদ সেলিম ওসমানের সাথে সুসম্পর্ক থাকার কারণে ২২নং ওয়ার্ডে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো এ সানী। আর এসব অপকর্মে সার্বিক সহযোগীতা করতো কুখ্যাত খান মাসুদ। মূলত খান মাসুদের আশকারায়ই তিনি হয়ে উঠেছিলো বেপরোয়া। ব

হু নিরিহ মানুষের কাছ থেকে চাঁদাবাজী, মারধর ও এলাকায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শোডাউন করা ছিলো তার নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এসব বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তার জীবনে নেমে আসতো প্রলয়। হামলা ও মামলার শিকার হয়ে তাকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হতো।

কিন্তু বড় দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ওসমানদের আমলে সানী এসব অপকর্ম করলেও তাদের পতনেও তিনি রয়ে গেছেন একই রকম। ওসমানদের পতনেও তার জীবনে একচুল পরিমান প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। কোন এক রহস্যজনক কারণে তিনি এখনও এলাকায় বহাল তবিয়তে থেকে তার অপকর্মগুলো চালিয়ে যাচ্ছেন সমানতালে।
সূত্র বলছে, ৫ আগস্টে শেখ হাসিনার সাথে সাথে ওসমানদের পতন হলে তিনি রাতারাতি খোলসপাল্টে চলে যান স্থানীয় বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতার শেল্টারে । বর্তমানে তিনি ওইসব বিএনপি নেতাদের শেল্টারেই এলাকায় বহাল থেকে আগের মতই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সূত্রটির দাবি।
তবে এ বিষয়ে স্থানীয় বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, যারা আসলে সানীদের মত ওসমানদের দোসরদের আশ্রয় প্রশ্রয় বা শেল্টার দিচ্ছেন তারা মূলত বিএনপির কেউ না। তারা বিএনপির নাম ব্যবহার করে সানীদের দিয়ে অপকর্ম করিয়ে এর থেকে একটা ভাগ নিচ্ছেন। আমরা তাদেরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। খুব শীঘ্রই সানীদের সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তারা আরও বলেন, ছাত্র-জনতার ওপর যারা হামলা চালিয়েছিলো বা ওইসময়ে যারা এর বিরোধীতা করেছিলো মামলা থেকে এমন অনেক দোসরদের নামই বাদ পড়েছে। এতে আমরা সত্যিই হতাশ হয়েছি। আমরা সানীদের মত দোসরদের নাম দ্রুত মামলায় অর্ন্তভুক্ত করার জন্য বন্দর থানার ওসি এবং জেলা পুলিশ সুপারদের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আমরা চাই না ওসমানদের কোন দোসর বিচারের বাইরে থাকুক। কারণ, তাদেরকে বিচারের বাইরে রাখা হলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের সাথে বেঈমানি করা হবে।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ওসম ন ছ ত র জনত র দ সরদ র অপকর ম এল ক য় র পতন ব এনপ ওসম ন

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • মতলবের দুই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-দখলদারির অভিযোগ, দল থেকে বহিষ্কার
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও