তুরাগতীরে আগামীকাল শুরু ইজতেমার তৃতীয় ধাপ, মাঠে মুসল্লিদের সমাগম
Published: 13th, February 2025 GMT
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে আগামীকাল শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের তৃতীয় ধাপের বিশ্ব ইজতেমা। এ উপলক্ষে গতকাল বুধবার রাত থেকে ইজতেমায় আসছেন মুসল্লিরা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ইজতেমা মাঠে বেড়েছে মুসল্লিদের সমাগম। আগামী রোববার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।
আজ সকালে গিয়ে দেখা যায়, ইজতেমা উপলক্ষে প্রস্তুত করা হয়েছে পুরো মাঠ। পোঁতা হয়েছে বাঁশের খুঁটি। টানানো হয়েছে চটের শামিয়ানা। বিভিন্ন জেলা থেকে মুসল্লিরা এসে জড়ো হচ্ছেন ইজতেমা মাঠে। তাঁদের সবার সঙ্গে গাট্টিবোঁচকা। ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করে নির্ধারিত জায়গায় (খিত্তা) তাঁরা অবস্থান নিচ্ছেন।
ইজতেমা মাঠের টঙ্গী স্টেশন রোডসংলগ্ন ফটক এলাকায় শামিয়ানার নিচে অবস্থান করছিলেন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে আসা ৩৫ সদস্যের একটি তাবলিগ জামাতের দল। তাঁরা গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করেছেন। মাঠে প্রবেশ করেই নিজেদের জায়গা ঠিকঠাক করে নিচ্ছিলেন।
এ সময় কথা হয় ফোরকান আলীর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণ্ডগোলের (১৭ ডিসেম্বর রাতে দুই পক্ষের সংঘর্ষ) পর এইবার ইজতেমা হইব কিনা, এইড্যা নিয়ে সন্দেহে আসিলাম। পরে মুরব্বিরা কইল, ইজতেমা হইব। পরে গতকাল বিকালেই ইজতেমার লাইগ্যা বাড়ি থেইক্যা রওনা দিছি। মাঠে আসতে আসতে রাত ১২টা বাজছে। এক বছর পর সবার লগে দেখা হইয়্যা খুব ভালো লাগতাছে।’
আরও পড়ুনইজতেমার তৃতীয় ধাপ শুরু শুক্রবার, সাদপন্থীদের কাছে মাঠ হস্তান্তর০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইজতেমার সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সাদ অনুসারীদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক মো.
মো. সায়েম আরও বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমার ইতিহাসে এবারই প্রথম ইজতেমা চলাকালীন আমরা শবেবরাত পাচ্ছি। ইজতেমা মাঠে উপস্থিত লাখো মানুষ একসঙ্গে শবেবরাতের নামাজ পড়বেন। নামাজ শেষে একসঙ্গে রোজা রাখবেন, বড় জামাতে জুমার নামাজ আদায় করবেন। এটা অনেক বড় পাওয়া।’
আরও পড়ুনআখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫তাবলিগ জামাতের মধ্যে বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে। এর আগে ৩১ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি দুই ধাপে ইজতেমা পালন করেন শুরায়ে নেজাম বা মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা। তৃতীয় ধাপে ১৪–১৬ ফেব্রুয়ারি ইজতেমা পালন করবেন মাওলানা সাদের অনুসারীরা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব শ ব ইজত ম ইজত ম র
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
আজ সোমবার বিকেলে হিন্দু নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। এ সময় তাঁদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’
হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন হবে বলে তাঁরা আশা করছি।
এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’ এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ (একক), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার উপস্থিত ছিলেন।