চিকিৎসকদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ।

বুধবার স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল চেয়ে চিঠি দিয়েছেন হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাতা এ পরিচালক। আজ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তার পদত্যাগ গ্রহণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন।

ওই চিঠিতে অধ্যাপক ডা.

কাজী দীন মোহাম্মদ লেখেন, আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছি (চুক্তিভিত্তিক)। আমার চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালের ১২ জানুয়ারি সমাপ্ত হবে। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে আমি এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করছি। অতএব আমার চুক্তির বাকি অংশটুকু বাতিল করার জন্য অনুরোধ করছি।

এক চিকিৎসককে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ফিরিয়ে আনাকে কেন্দ্র করে চিকিৎসকদের প্রতিবাদের মধ্যে বুধবার সেখানে মারধরের ঘটনা ঘটে। সহকর্মীকে মারধরের কারণে কর্মবিরতি শুরু করেন চিকিৎসকদের একটি অংশ। এর প্রতিবাদে পরিচালক ডা. দ্বীন মোহাম্মদের পদত্যাগও দাবি করেন তারা।

এ ঘটনার মধ্যে বৃহ্স্পতিবার দায়িত্ব ছাড়তে চেয়ে নিয়োগ বাতিলের চিঠি দেন ২০১৪ সাল থেকে এ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালকের পদে থাকা অধ্যাপক দ্বীন মোহাম্মদ।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেন, প্রায় চার মাসে আগে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে কর্মরত আওয়ামী লীগের চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপপন্থি অধ্যাপক ডা. গুরুদাস মন্ডলকে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হয়। সম্প্রতি তাকে আবার হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হয়। এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। বুধবার ক্ষুব্ধ চিকিৎসকরা হাসপাতালের পরিচালক দ্বীন মোহাম্মদের কক্ষে যান। সেখানে বিষয়টি নিয়ে কিছুটা হট্টগোল হয়। পরে চিকিৎসকরা বের হয়ে ৪০২ নম্বর এসে বৈঠক করার সময় হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং আউটসোর্সিংয়ের কিছু কর্মচারী তাদের ওপর হামলা করে।

হামলার শিকার চিকিৎসকদের অভিযোগ, পরিচালকের নির্দেশে এ হামলা করা হয়েছে। পরে ওই ঘটনার জন্য পরিচালকের পদত্যাগ দাবি করেন চিকিৎসকরা। পাশাপাশি চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বুধবার সকাল ১০টার দিকে কর্মবিরতি শুরু করেন চিকিৎসকরা। পরে দুপুরের দিকে আউটডোর এবং জরুরি বিভাগে কার্যক্রম শুরু হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক পদত য গ চ ক ৎসকদ র চ ক ৎসকর পদত য গ

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলিম নারী চিকিৎসকেরা হারিয়ে গেলেন কেন

কর্দোভার সংকীর্ণ গলিতে এক নারী দ্রুত পা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর হাতে একটি কাঠের বাক্স, ভেতরে হাতে তৈরি মলম ও ঔষধি গাছ। তিনি আল-জাহরাভির কন্যা, একজন ধাত্রী, যিনি প্রসূতি মায়েদের সেবা করছেন। তাঁর কাজ শুধু শারীরিক নিরাময় নয়, বরং একটি সম্প্রদায়ের আস্থা ও আশার প্রতীক।

মধ্যযুগের মুসলিম বিশ্বে মুসলিম নারী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এমন অগণিত গল্প রচনা করেছেন, যা চিকিৎসাবিজ্ঞান ও সমাজের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছে। তৃতীয় ও শেষ পর্বে আমরা তাঁদের প্রভাব, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে তুলনা এবং তাদের ঐতিহাসিক স্বীকৃতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করব।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে নারীদের ছাপ

মুসলিম নারী চিকিৎসকদের কাজ মুসলিম বিশ্বের চিকিৎসাব্যবস্থাকে একটা কাঠামো দিয়েছে। রুফায়দা আল-আসলামিয়া (রা.)-এর মোবাইল হাসপাতালের ধারণা আধুনিক ফিল্ড হাসপাতালের পূর্বসূরি। তাঁর তাঁবু যা মদিনার মসজিদে নববিতে স্থাপিত হয়েছিল, স্বাস্থ্যসেবার মডেল হিসেবে কাজ করেছে।

২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারিতে মসজিদগুলো চিকিৎসা ও টিকাকরণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা রুফায়দার মসজিদভিত্তিক তাঁবুর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

এই মডেল পরবর্তী সময়ে আব্বাসীয় যুগের বিমারিস্তানে (হাসপাতাল) প্রতিফলিত হয়, যেখানে শিহাবুদ্দিন আল-সায়িগের (মৃ. ১৬২৭ খ্রি.) কন্যার মতো নারীরা নেতৃত্ব দিয়েছেন। (আল-সাঈদ, আত-তিব ওয়া রায়িদাতুহু আল-মুসলিমাত, পৃ. ১৮৯, আম্মান: দারুল ফিকর, ১৯৮৫)

নারীদের ওষুধ তৈরি ও শল্যচিকিৎসার কাজ চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আল-জাহরাভির (৯৩৬-১০১৩ খ্রি.) গ্রন্থ আত-তাসরিফ নারী চিকিৎসকদের জন্য শিক্ষার ভিত্তি ছিল, বিশেষ করে প্রসূতি ও গাইনোকোলজিতে। এই গ্রন্থ ইউরোপে অনূদিত হয়ে রেনেসাঁসের চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রভাব ফেলেছে। ১৯০৮ সালে গ্রন্থটির আধুনিক সংস্করণ প্রকাশ পেয়েছে কায়রো ‘দারুল কুতুব’ থেকে।

আন্দালুসে উম্ম হাসান বিনত কাজি তানজালি (১৪ শতক) চিকিৎসাশিক্ষার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম তৈরি করেন, যা শিক্ষার ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। (আবু বকর ও আল-সাদি, আন-নিসা ওয়া মিহনাত আল-তিব, পৃ. ২১২, কায়রো: দারুল কুতুব, ১৯৯৯)

এই কাজগুলো আধুনিক পাবলিক হেলথ সিস্টেমের পূর্বসূরি হিসেবে বিবেচিত হয়।

আরও পড়ুনযে নারী সাহাবির বিয়ের পরামর্শদাতা ছিলেন রাসুল (সা.)২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩নারীদের ওষুধ তৈরি ও শল্যচিকিৎসার কাজ চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন দফা দাবিতে সিলেটের ওসমানী হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ডাক
  • উদ্ধার হলো এয়ার ইন্ডিয়ার বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ব্ল্যাক বক্স
  • মুসলিম নারী চিকিৎসকেরা হারিয়ে গেলেন কেন