কুড়িগ্রামে সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে কৃষকদের মারধরের ঘটনায় বিএসএফের দুঃখ প্রকাশ
Published: 15th, February 2025 GMT
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বালারহাট কৃষ্ণানন্দ বকশী সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে কৃষকদের মারধরের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আজ শনিবার বিকেল চারটার দিকে উপজেলার বারোমাসি নদীর তীরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে গোরকমণ্ডল নামাটারী আবদুল্লাহর বাড়ির উঠানে দুই দেশের মধ্যে পতাকা বৈঠকে বিএসএফ দুঃখ প্রকাশ করে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বালারহাট সীমান্তের ৯৩০ নম্বর আন্তর্জাতিক পিলারের কাছে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশি কৃষকদের মারধর করে আহত করে বিএসএফ। এ ঘটনায় আজ অধিনায়ক পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাংলাদেশ সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও বাংলাদেশি নাগরিকদের মারধরের ঘটনায় বিএসএফের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ্ মো.
স্থানীয় বাসিন্দা ও আহত ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল জুমার নামাজের পর সামছুল হক নামের একজন বাংলাদেশি নাগরিক ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার ২০০ থেকে ৩০০ গজ অভ্যন্তরে বসে ছিলেন। এ সময় ভারতের ১৩৮ নারায়ণগঞ্জ বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা গোরকমণ্ডল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে ওই ব্যক্তিকে (সামছুলকে) সেখানে বসে থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। এ সময় তাঁদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে বিএসএফ সদস্যরা বন্দুকের পেছনের অংশ দিয়ে সামছুলকে আঘাত করেন। এতে তাঁর ডান হাত ফেটে যায়। পরে এলাকাবাসী সেখানে গিয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে বিএসএফ সদস্যদের ধাওয়া দেন।
এ সময় বিএসএফ একটি রাবার বুলেট ছোড়ার পাশাপাশি কয়েকজন বাংলাদেশিকে মারধর করে। এতে উপজেলার পশ্চিম বালাটারি গ্রামের সামছুল হক (৬০) ছাড়াও জাবেদ আলী (৫৫), তাজুল ইসলাম (৪০) ও কাসেম আলী (৫০) আহত হন। খবর পেয়ে ফুলবাড়ী উপজেলার গোরকমণ্ডল বিজিবি ক্যাম্পের কয়েকজন সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের শান্ত করে শূন্যরেখা থেকে ফিরিয়ে আনেন।
বিএসএফের মারধরে আহত সামছুল হক বলেন, ‘গতকাল ভারতের কয়েকজন জওয়ান শূন্যরেখা পার হয়ে গ্রামে ঢুকে পড়েন। ওই সময় আমি জমিতে কাজ করছিলাম। তারা আমাকে সেখানে বসে থাকার কারণ জানতে চায় এবং এখানে থাকা যাবে না বলে জানায়। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে তারা আমার শার্টের কলার ধরে মারধর করে।’
গোরকমণ্ডল বিওপি ক্যাম্পের হাবিলদার দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিএসএফের মারধরের ঘটনায় গতকাল থেকে সীমান্তে উত্তেজনা ছিল। এ নিয়ে গতকাল বিওপির কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। আজ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক পর্যায়ে বৈঠক হয়। এখন দুই দেশের সীমান্ত এলাকা স্বাভাবিক আছে।
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ্ মো. শাকিল আলম বলেন, স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, গোরকমণ্ডল সীমান্তের কৃঞ্চনন্দ গ্রামে বাংলাদেশের অভ্যান্তরে প্রবেশ করে বাংলাদেশিদের মারধর করেছে বিএসএফ। এ ঘটনায় আজ দুপুরে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি প্রতিবাদ জানালে তারা দুঃখ প্রকাশ করে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে এমনটা ঘটবে না বলেও জানায় তারা।
আরও পড়ুনকুড়িগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের পিটুনিতে ৪ বাংলাদেশি আহত, উত্তেজনা১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ম রধর র ঘটন য় দ র ম রধর ব এসএফ র উপজ ল র পর য য় গতক ল সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন জলসীমানা প্রায় দেড়শো কিলোমিটার। ভারতীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ সীমানা দিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাড়তি তৎপরতা নেওয়া হচ্ছে। খবর আনন্দবাজারের।
খবরে বলা হয়েছে, নদী ও বনভূমি এলাকায় সীমান্ত বরাবর বিএসএফ মোতায়েন আছে। ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট, বঙ্গোপসাগর অংশে কোস্ট গার্ডের নজরদারি চলছে। ড্রোন, সেন্সর ও ক্যামেরা, কিছু জায়গায় নাইট ভিশন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশের তরফেও উপকূল এলাকায় দিনরাত নজরদারি চলছে।
উপকূল থানাগুলোর পক্ষ থেকে নদীপথে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। রাতেও উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে নজর রাখা হচ্ছে। নদীপথে কোনো জলযান দেখলেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নদী বা সমুদ্রে এখন মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা চলছে। মৎস্যজীবীদের জলযান চলাচল করার কথা নয়। তাই জলযান দেখলেই তল্লাশি চলছে। বাংলাদেশি জাহাজগুলোতেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।
সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট বলেন, আগেও উপকূলবর্তী এলাকায় পুলিশের নজরদারি চলত। এখন বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। দু’বেলা নদী ও স্থলপথে পুলিশের টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। নাকা চেকিং হচ্ছে। চলছে তল্লাশিও।
উত্তর ২৪ পরগনাতেও উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বেড়েছে জল ও স্থলসীমান্তে। জল, ভূমি ও আকাশে অত্যাধুনিক ইজ়রাইল রাডারের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
ইতোমধ্যে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করে ভারতকে আক্রমণ করতে পারে সশস্ত্র সংগঠনগুলো। ফলে সুরক্ষা বাড়াতে বিএসএফের তৎপরতা শুরু হয়েছে। বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থেকে হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর কোস্টাল থানা পর্যন্ত ৯৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ৫০ কিলোমিটার জলসীমান্ত। স্থলসীমান্ত ৪৪ কিলোমিটার। সীমান্ত সুরক্ষায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।