নাফ নদী থেকে ধরে নেওয়া চার জেলেকে পাঁচ দিনেও ফেরত দেয়নি আরাকান আর্মি
Published: 15th, February 2025 GMT
কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীর মোহনায় মাছ ধরতে যাওয়া চার বাংলাদেশি মাঝিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়ার পাঁচ দিন পার হলেও তাঁদের ফেরত দেয়নি মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। এতে পরিবারগুলো মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
এই জেলেরা হলেন টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহরীর দ্বীপ দক্ষিণপাড়া বাসিন্দা নৌকার মাঝি মোহাম্মদ হাছান (৩০), আব্দু রকিম (২০), মো.
শাহপরীর দ্বীপের নৌকার মাঝি মো. হাসানের স্ত্রী নুর নাহার বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী আটকের এক দিন পরে ফোন করেছিল। এ সময় তিনি বলেছিলেন, আমরা ভালো আছি। আরাকান আর্মি আমাদের রান্না করে খাওয়াদাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। তারা আজকাল ছেড়ে দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেহেতু বিষয়টি জেনেছে, সে জন্য ছেড়ে দিতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে এবং বিজিবিকে বিষয়টি জানানোর জন্য বলেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি বিজিবিকে জানানো হয়েছে। এখন আর কোনো খোঁজখবর পাচ্ছি না। আরাকান আর্মির হাতে বন্দী থাকা অবস্থায় যে নম্বর থেকে ফোন করেছিল, সেই নম্বরে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। আমরা খুব চিন্তায় আছি।’
টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণ নৌ ঘাটের সভাপতি বশির আহমেদ বলেন, পাঁচ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত জেলেদের ফেরত দেয়নি মিয়ানমারের আরাকান আর্মি। এই নিয়ে জেলে পরিবারগুলো খুব আতঙ্কের মধ্যে আছে। এখন ভয়ে কেউ নাফ নদীতে মাছ শিকারের যেতে পারছে না। তাঁরা বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছেন।
স্থানীয় কয়েকজন জেলে বলেন, কয়েক দিন পরপর এভাবে অস্ত্রের মুখে জেলেদের ধরে নিয়ে যায়। তাঁরা মাছ শিকার করে পরিবার চালান। এখন ভয়ে নদীতে মাছ শিকারে যেতে পারছেন না। এভাবে হলে স্ত্রী-সন্তানদের কীভাবে খাওয়াবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, আরাকান আর্মির হাতে আটক জেলেদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। আটক জেলেরা দ্রুত বাড়ি ফেরত আসতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
আরও পড়ুননাফ নদী থেকে অস্ত্রের মুখে চার বাংলাদেশি জেলেকে জিম্মি করে নিয়ে গেল আরাকান আর্মি১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।