নানা ধরনের পণ্যে সাজানো একেকটি স্টল। কোনো স্টলে আছে রঙ-বেরঙের গহনা, কোথাও আবার সাজসজ্জার উপকরণ। সেই সঙ্গে আছে হাতে বানানো বাহারি জাতের কেক ও পিঠা। এসব পণ্যের সমাহারে বসন্তের বার্তা নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দিনব্যাপী চলছে বসন্ত মেলা।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১ টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্ত্বর সংলগ্ন বাস মাঠে এ ব্যতিক্রমধর্মী মেলা শুরু হয়।
কুবির সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবর্তনের উদ্যোগে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা কয়েকটি স্টল বসিয়েছে। অহল্যা, প্রত্নের রত্ন, কর্ণকথা, দিঘীর চাপ, প্রগতি বই ঘরসহ আরো কয়েকটি স্টল রয়েছে।
এসব স্টলে গয়না, কেক, চকলেট, বই, পিঠা রয়েছে। খাবার ও গয়না শিক্ষার্থীদের নিজেদের হাতে তৈরি। স্টলগুলোতে রয়েছে শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভীড়। শিক্ষার্থীরা কেনাকাটায় ব্যস্ত।
অন্যদিকে, বসন্ত উৎসব-১৪৩১ উপলক্ষে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে। পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে এখন চলছে উৎসবের আমেজ।
অহল্যা স্টলের উদ্যোক্তা ফেরদৌসী আক্তার বলেন, “আমার স্টলে ভালোই বিক্রি হচ্ছে। এ রকম মেলার মাধ্যমে শিল্প উদ্যোক্তারা সবার নিকট পণ্য পৌঁছে দিতে পারবে। ক্যাম্পাসে নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ পাওয়া যাবে। এমন মেলা প্রতি বছর অব্যাহত থাকুক।”
বসন্ত মেলার আয়োজন নিয়ে প্রতিবর্তনের সভাপতি উম্মে হাবিবা শান্তা বলেন, “বসন্তকাল বাঙালির সংস্কৃতি, হৃদয় এবং জীবনযাত্রার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বসন্তের এই আনন্দকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এবং সব শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে প্রতিবারের ন্যায় এবারো আয়োজন করেছি প্রতিবর্তন বসন্ত উৎসব- ১৪৩১।”
তিনি বলেন, “এর পাশাপাশি ক্যাম্পাসের উদ্যোক্তাদের নিয়ে আমরা একটি মেলার আয়োজন করেছি। সবার সহযোগিতায় সুন্দর একটি আয়োজন করতে পেরে আমরা উচ্ছ্বসিত।”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি উঁচুনিচু ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে আলোক শোভাযাত্রা করে করলেন হাজারো খৃষ্ট ভক্ত। মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’ তে ছিলো এ বছরের আয়োজন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয় ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব। দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার জীবন্ত ক্রুশের পথ ও পবিত্র মহাখ্রিষ্টযাগের মধ্যে দিয়ে।
এ উৎসবে শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র্যান্ডেল।
এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজক কমিটি জানায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, তীর্থের জুবিলী উদজাপন, পুর্নমিলন সংস্কার, পবিত্র খিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থন, আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব।
১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব। এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।
রংপুর থেকে আসা তীর্থযাত্রী রিপন আরেং বলেন, “সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আকাঁবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পাহাড় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তীর্থে আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।”
চট্টগ্রাম থেকে আসা রীতা নকরেক বলেন, “পুত্রবধূর সন্তান হচ্ছিল না। গতবার মানত করার পর এবার নাতী পেয়েছি। তাই এবার নাতীকে নিয়ে আবার এসেছি।”
গাজীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থী ঝর্ণা আরেং বলেন, “মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।”
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই তীর্থযাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত রাখতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রেখেছি। পাঁচ শতাধিক পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। যে কোন ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।”
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থাপনায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে সহযোগীতা করে আসছে। এবারের তীর্থযাত্রায় সারাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎসব পালন করেছে।”
ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি বলেন, “এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে। ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ তীর্থে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী তীর্থে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যাবেন।”
ঢাকা/তারিকুল/এস