রাজশাহী আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে সেবাগ্রহীতাদের জিম্মি করে ঘুষ আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শুনেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জেলার সার্কিট হাউসে এ কার্যক্রম চলে। এক পাসপোর্টেই ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন এক ভুক্তভোগী।

এ সময় ভুক্তভোগীরা পাসপোর্ট কার্যালয়ে নিজেদের হয়রানির চিত্র তুলে ধরেন। পরে তাঁদের লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া বক্তব্য লিখে নেন একজন সাঁটলিপিকার। এ দিন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক মঈনুল হোসেন ভুক্তভোগীদের কথা শোনেন।

আরও পড়ুনরাজশাহী পাসপোর্ট কার্যালয়ে দালালের ফাইলের কাজ আগে করার প্রতিবাদ, হুঁশিয়ারি২০ নভেম্বর ২০২৪

এর আগে গত ২০ নভেম্বর পাসপোর্ট কার্যালয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষ আদায়ের অভিযোগে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা। পরে এ ব্যাপারে রাজশাহী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক (ডিডি) রোজী খন্দকারের সঙ্গে কথা বলতে তাঁর কক্ষে যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ভুক্তভোগীদের উচ্চবাচ্য হয়। এর জেরে থানায় অভিযোগ করেন রোজী খন্দকার। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে পাসপোর্ট অধিদপ্তর।

তদন্ত কমিটির সামনে একজন ভুক্তভোগী নারী বলেন, কয়েক মাস আগে তিনি পাসপোর্ট করার জন্য ওই অফিসে যান। তখন শুরুতেই তাঁর ফরমের ভুল ধরে ফেরত পাঠানো হয়। বাধ্য হয়ে তিনি তখন ডিডি রোজী খন্দকারের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু ডিডিও কোনো সমাধান দেননি। বাধ্য হয়ে তিনি একটি মাধ্যমে দুই হাজার টাকা ঘুষ দেন। এরপর ওই ব্যক্তি তাঁকে সরাসরি ছবি তোলার কক্ষে পাঠিয়ে দেন। তখন ওই আগের ফরমেই কাজ হয়ে যায়।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির একজন নেতার ভাতিজা তদন্ত কমিটিকে বলেন, তাঁর চাচার নামে মামলা আছে। পাসপোর্টের আবেদন করার সময় আদালতের অনুমতিপত্রও জমা দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও তিন মাস ধরে ফাইল আটকে রাখেন ডিডি রোজী খন্দকার। তখন তিনি একটি মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দেন। এর ১৫ দিনের মধ্যে তাঁর চাচার পাসপোর্ট হয়ে যায়।

নগরের একজন ফার্মেসি মালিক তদন্ত কমিটিকে জানান, তিনিও একটি মাধ্যমে দুই হাজার টাকা ঘুষ দেন। এরপর তাঁর পাসপোর্ট সংশোধন করা হয়।

ভুক্তভোগী এক সমাজসেবক ছদ্মবেশে তদন্ত কমিটিকে পাসপোর্ট কার্যালয়ে গিয়ে হয়রানির চিত্র দেখার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, কাগজপত্র নির্ভুল থাকলেও ভুল দেখিয়ে বারবার ঘুরিয়ে সেবাপ্রত্যাশীকে দালাল ধরতে বাধ্য করা হয়। সেখানে সব সমস্যার সমাধান দেন আনসার সদস্যেরা। পাসপোর্ট অফিসে দালালের মাধ্যমে ঘুষ দিলে লাইন লাইনের মতো থাকে, ঘুষ দেওয়া ব্যক্তির কাজ সবার আগে হয়ে যায়। দিনের পর দিন এমন অবস্থায় চলছে। তাঁর দাবি, পাসপোর্ট অফিসে ৯৮ ভাগ মানুষকে ঘুষ দিয়ে কাজ করতে হয়।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে পাসপোর্ট কার্যালয়ে দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ ডিডির২০ নভেম্বর ২০২৪

তদন্ত কমিটির কাছে অনেকেই অভিযোগ করেন, রোজী খন্দকার সেবাগ্রহীতাদের তাঁর কক্ষে ঢোকার অনুমতি দিতে চান না। দীর্ঘ সময় পর কক্ষে ঢোকার অনুমতি মিললেও ভেতরে বসার সুযোগ থাকে না। অসুস্থ রোগী থেকে শুরু করে সবাইকে ডিডির টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হয়। আর ডিডি চেয়ার বসে থাকেন। এভাবে তিনি নাগরিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। সরকারি অফিসে এটি হতে পারে না।

ভুক্তভোগীদের এসব অভিযোগের ব্যাপারে রোজী খন্দকার বলেন, ‘আপনার কাছ থেকে এ ব্যাপারে শুনছি, আমি কী বলব? দেখি তদন্ত প্রতিবেদনে কী আসে, তারপর সেই অনুযায়ী জবাব দেব।’

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম বলেন, আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অভিযোগকারীদের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। ১৫-১৬ জন নিজেদের বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁরা এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। এর আগে বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

চলন্ত গাড়ির নিচে পড়েও অক্ষত অবস্থায় ফিরল ৩ বছরের শিশুটি

ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদের নোবলনগর এলাকায় গতকাল বুধবার গাড়ির নিচে পড়ে গিয়েছিল তিন বছরের এক শিশুকন্যা। তবে অনেকটা অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে সে।

অভিযোগ উঠেছে, এক কিশোর গাড়িটি চালাচ্ছিল। এ ঘটনা সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। পরে এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গাড়িতে নম্বর প্লেট ছিল না, যা আইন লঙ্ঘনের শামিল। পুলিশ ঘটনার পর মামলা করে তদন্ত শুরু করেছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনাটি যখন ঘটে, তখন শিশুটি তার বাড়ির বাইরে রাস্তায় খেলা করছিল। কিশোর চালকটি তাকে দেখতে না পেয়ে তার ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয়। স্থানীয় বাসিন্দারা চিৎকার শুরু করার পর চালক গাড়িটি থামায়। সঙ্গে সঙ্গে লোকজন জড়ো হয়।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গাড়ি থামানোর পর ভীতসন্ত্রস্ত শিশুটি চিৎকার করতে করতে গাড়ির নিচ থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসছে। এর মধ্যে চালকও বাইরে বেরিয়ে আসে। এরপর একজন নারী ওই কিশোর চালককে চড় মারছেন। এ সময় শিশুটি হাঁটাচলা করতে পারছিল।

আহমেদাবাদ পুলিশ নিশ্চিত করেছে, তারা চালকের বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত করেছে এবং তদন্ত শুরু করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় ‘জি’ ডিভিশন ট্রাফিক থানায় বিএনএস আইনে মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। আইন লঙ্ঘনকারী ওই কিশোরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এটি সড়কের নিরাপত্তা এবং আবাসিক এলাকায় আরও বেশি সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অনেকে কথা বলেছেন।

একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী ঘটনাটিকে ‘খুবই উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এটি ১০০ ভাগ আটকানো যেত। এর একটাই অলঙ্ঘনীয় নিয়ম—অপ্রাপ্তবয়স্ক বা লাইসেন্সবিহীন কোনো ব্যক্তিকে কখনোই গাড়ি চালাতে দেওয়া উচিত নয়। গাড়ির চাবি শিশুদের কাছ থেকে নিরাপদে দূরে রাখতে হবে। লাইসেন্সধারী চালকের জন্য নিয়ম হলো, সব সময় ধীরে ধীরে গাড়ি ঘোরানো এবং ভালোভাবে সব লুকিং গ্লাস ও ব্লাইন্ড স্পট পরীক্ষা করা।’

আরেক ব্যবহারকারী মা–বাবাকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘এই ভিডিও প্রমাণ করেছে যে অলৌকক ঘটনা সত্যিই ঘটে...কিন্তু সব সময় নয়। রাস্তা খেলার জায়গা নয়...মা–বাবার উচিত বাচ্চাদের দিকে সব সময় নজর রাখা।’

অন্য আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেটি কীভাবে গাড়ির চাবি পেল? তার মা–বাবাকে কারাগারে পাঠানো উচিত।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির
  • কর্মদিবসের শেষ দিনে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু
  • প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ যেসব অসংগতি উঠে এল প্রাথমিক তদন্তে
  • চবি ছাত্রদলের ৪২০ জনের কমিটিতে নারী মাত্র ১১
  • চলন্ত গাড়ির নিচে পড়েও অক্ষত অবস্থায় ফিরল ৩ বছরের শিশুটি