যত দিন ডেভিলরা থাকবে, তত দিন অভিযান: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 18th, February 2025 GMT
দেশে যত দিন ‘ডেভিলরা’ থাকবে, তত দিন যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান ‘ডেভিল হান্ট’ চলবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের শেষ দিন আজ মঙ্গলবার সকালে এক কর্ম অধিবেশন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের পরদিন ৮ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে এক সভা হয়। সভায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চালানোর সিদ্ধান্ত হয়।
আজ জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ডিসিদের কিছু প্রশ্ন ছিল। আমরা সেগুলোর জবাব দিয়েছি। আমাদের বড় আশা ছিল, দেশ থেকে দুর্নীতি কমাতে হবে। দুর্নীতি কমাতে না পারলে উন্নতি হবে না। দুর্নীতি আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা।’
এদিকে দুর্নীতি কমাতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ডিসিদের সঙ্গে আলোচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আলোচনা হয়েছে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক। তবে পরিস্থিতির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে। পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ডিসিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না, প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কোনো কথা হয়নি বলে জানিয়েছেন।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। এ ছাড়া পুলিশের মারণাস্ত্র ও ছররা গুলির ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। এসব বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে জানতে চান সাংবাদিকেরা। জবাবে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়নি। আলোচনা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কীভাবে আরও উন্নতি করা যায়, তা নিয়ে।
মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।