এখনো মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে পারিনি: অ্যাটর্নি জেনারেল
Published: 20th, February 2025 GMT
এখনো দেশে মিথ্যা মামলা দেওয়া বন্ধ হয়নি বলে জানিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘‘ছত্রিশ জুলাইয়ে পর দেশে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়েছে। তবে এখনো আমরা মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে পারিনি।’’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘‘ছত্রিশ জুলাইয়ের পর পুলিশ বাদী হয়ে কোনো মামলা করেনি। এর আগে ৬০ লাখ মানুষকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ সব মামলার বাদী ছিল পুলিশ। সাড়ে ৪ হাজার মানুষ বিনা বিচারে হত্যার শিকার হয়েছে। বিগত ১৫ বছরের চৌধুরী আলম, ইলিয়াস আলীসহ অনেকে গুম হয়েছে।’’
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর একটি হোটেলে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ বিষয়ক কর্মশালায় তিনি এ সব কথা বলেন।
এ সময় মো.
এ সময় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুল রউফ বলেন, ‘‘অনেক নিরাপরাধ মানুষকে বিনাবিচারে কারাগারে থাকতে হয়েছে। জামিনযোগ্য মামলাতেও জামিন দেওয়া হয়নি নানা উদ্দেশ্যে। কিন্তু এখন আর বিনাবিচারে কেউ যেন কারাগারে না থাকে। দোষী যেই হোক শাস্তি পেতে হবে কিন্তু বিনা দোষে কেউ যেন শাস্তি না পায়।’’
কর্মশালায় অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘‘ইতোমধ্যে আমরা পুলিশের ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছি। জনমানুষের সন্তুষ্টির জন্য আমরা বিচার বিভাগ ও পুলিশ এক সঙ্গে কাজ করব। ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। এ জন্য পুলিশ ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ভূমিকা রয়েছে। অতীতে আমরা ভুল ত্রুটি কী করেছি, তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করব, উত্তরণের চেষ্টা করব।’’
এ সময় পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, ‘‘জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি, পুলিশ কোনো অঙ্গ যদি প্রোপার কাজ না করে তাহলে তার প্রভার অন্যদের ওপর পড়ে। ৫ আগস্টের আগে কেউ বাধ্য হয়ে, কেউ অতি উৎসাহিত হয়ে নানা অপকর্ম করেছেন। ৫ আগস্টের পর মামলার হিড়িক পড়ে। তখন মামলায় অনেককে আসামি করা হয়। তখন কিছু করার ছিল না। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নিরীহ কোনো লোককে গ্রেপ্তার না করতে সকল কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের পরিবর্তিত ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বিচারিককে সেই বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করার জন্য অনুরোধ করছি।’’
কর্মশালায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার মোকতার আহমেদ, পুলিশ রেঞ্জের ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমান, ময়মনসিংহের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মমতাজ পারভীন প্রমূখ।
ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, চার জেলার ডিসি, এসপি, পিপি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সব থানার ওসিরা কর্মশালায় অংশ নেন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে তিনি আসতে পারেননি।
ঢাকা/মিলন/বকুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’