স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ একুশের চেতনারই ফসল: কাদের গনি
Published: 21st, February 2025 GMT
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, “স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ একুশের চেতনারই ফসল।একুশের মর্মবাণী হচ্ছে মাথা নত না করা। অধিকার ও দেশের মালিকানা নিজেদের রাখা।”
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব বলেন।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, “বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার হরণসহ দেশের মানুষকে নানাভাবে অধিকারহীন করে গত ১৭ বছর একুশের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে। এখন দরকার জনগণকে দেশের মালিকানা ফেরত দেওয়া। এজন্য সবার আগে জনগণকে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিতে হবে।”
আরো পড়ুন:
ভাষা: আত্মপরিচয়ের আঁতুড়ঘর
দেশজুড়ে শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের স্মরণ
“জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই শুধু সংস্কারের বৈধ অধিকার রাখেন। জনগণের ভোটাধিকার হরণের অর্থ হলো ফ্যাসিজম কায়েম করা। আর এটি হবে শত শহীদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।”
তিনি বলেন, “একুশের চেতনা যুগে যুগে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণকারী নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শক্তিকে রুখতে উদ্বুদ্ধ করে। যা চব্বিশেও করেছে। অধিকার আদায় এবং অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে ভাষাশহীদরা আমাদের প্রেরণার উৎস। প্রকৃতপক্ষে এই মহান ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতিসত্ত্বার বিকাশে এবং একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রথম সোপান হিসেবে কাজ করেছে। ২১ ফেব্রুয়ারি শুধু মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার দিনই নয়, আমাদের স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রথম সংগ্রামের দিন। মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করে ভাষাশহীদরা আত্মত্যাগের যে গৌরবদীপ্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে।”
পেশাজীবীদের এই নেতা বলেন, “একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের মানবাধিকারের চিরন্তন ধারক ও বাহক। একুশ আমাদের মুক্তির চেতনা। কিন্তু এ চেতনা বাংলাদেশে বারবার হোঁচট খেয়েছে, এখনো খাচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।”
তিনি বলেন, “মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে পতিত সরকার একুশের চেতনার রংকে বর্ণহীন ও ফিঁকে করে দিয়েছিল। জাতির মধ্যে তৈরি করেছিল বিভেদের পাহাড়সম দেয়াল, যা মহান একুশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। অপসংস্কৃতি আমদানি করা হয়েছিল। আমরা আর এটি দেখতে চাই না। ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিতে ফাটল সৃষ্টি হতে দেওয়া যাবে না। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা পার পেয়ে যাবে।”
ভাষা শহীদদের ত্যাগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তাদের আত্মত্যাগের ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনের পথ বেয়ে আমরা অবতীর্ণ হয়েছি স্বাধীনতাযুদ্ধে। প্রতিষ্ঠা করেছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। অধিকারবোধের চেতনা পরিপূর্ণতা দান করেছিল মহান ২১ ফেব্রুয়ারি। সেই চেতনা নস্যাৎ করে একদলীয় শাসনের জগদ্দল পাথর একটানা ১৭ বছর জনগণের কাঁধের ওপর চাপানো হয়েছে। কখনো ভোটারবিহীন নির্বাচন, কখনো মধ্যরাতের নির্বাচন, আবার কখনো ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে জনগণকে প্রতারিত করা হয়েছে, যা ছিল খোলাখুলি কারচুপির এক নিকৃষ্টতম দৃষ্টান্ত। আমরা সে পথ আর মাড়াতে চাই না। জনগণকে তার ভোটাধিকার ফেরত দিতে দেরি করলে জনগণের মধ্যে ভুল বার্তা যাবে।”
এ সময় বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা প্রফেসর ড.
ঢাকা/এএএম/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এক শ ফ ব র য় র ২১ ফ ব র য় র জনগণ র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
যুদ্ধাপরাধী শক্তিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা জুলাই অভ্যুত্থানের সাংঘর্ষিক : কমরেড রতন
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, বাংলাদেশের লড়াকু জনগণ কোনো অন্যায় জবরদস্তি, দুঃশাসন মেনে নেয় না।
কোনো স্বৈরাচারকেই ক্ষমতায় থাকতে দেয় না। বুকের রক্ত ঢেলে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, জীবন দিয়ে জীবনের মর্যাদা অংশগ্রহণ করে, তা আবারও প্রমাণ করেছে ‘২৪ সালের জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে।
‘৫২-র ভাষা আন্দোলন, ‘৬২-র শিক্ষার আন্দোলন, ‘৬৬-র ৬ দফা আন্দোলন ‘৬৯-র এর গণ অভ্যুত্থান ‘৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে অনিবার্য করে তুলেছিল। স্বাধীনতার পর থেকে বিগত ৫৩ বছর স্বাধীনতার পর থেকে বিগত ৫৩ বছর ধরে শাসকরা ধনিকশ্রেণির স্বার্থে দেশ পরিচালনার কারণে মুক্তিযুদ্ধের অপূর্ণ আকাক্সক্ষা মানুষকে বারবার আন্দোলনে পথে নামিয়েছে।
একদলীয় শাসন, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইÑমূলত, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। এদেশের মানুষ অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে নাই বলে ’৯০ ও ২০২৪ সালে অভ্যুত্থান করেছে।
কিন্তু জনগণ জীবন ও রক্তের বিনিময়ে যে স্বৈরাচারকে পরাজিত করে পরবর্তীতে শাসকেরা পরাজিতদের আশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এবং তাদের পথই অনুসরণ করে। এক দখলবাজের পরিবর্তে আর এক দখলবাজ, এক দুর্নীতিবাজের পরিবর্তে আর একজন ক্ষমতায় আসীন হয়। তাই অভ্যুত্থানের স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা বারবার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ১ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসাবে নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে আয়োজিত গণসামবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
শুক্রবার (১ আগস্ট) বিকালে ৩টায় চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে শহরে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ১৫ নং ওর্য়াডের সাবেক কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ^াস, বাংলাদেশ জাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সোলেমান দেওয়ান, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য এস এম কাদির।
এ সময় কমরেড রতন আরও বলেন, আগামী ৫ আগস্ট জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি হবে। অভ্যুত্থানের ঠিক এক বছর যেতে না যেতেই অভ্যুত্থানের আকাঙখা পদদলিত করা শুরু হয়েছে। সারা দেশে জোরপূর্বক চাঁদাবাজি-তোলাবাজি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সে সময় মানুষ স্লোগান তুলেছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, লুটপাট-দূর্নীতি, গুম-খুন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, কর্তৃত্ববাদ ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে।
মানুষ চেয়েছিল এসব থেকে মুক্ত একটা সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ। কিন্তু বছর না পেরোতেই মানুষের সেই আশা ক্রমশ: ফিকে হয়ে আসছে। এক বছর পার হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বক্তব্য-বিবৃতি, নানা পদক্ষেপ; যথা বিচার, সংস্কার, নির্বাচনের কাজে মনোযোগ না দিয়ে এখতিয়ার বর্হিভূতভাবে চট্রগ্্রাম বন্দর টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়া, রাখাইনে করিডোর প্রদান, তুরস্ককে অস্ত্র তৈরির কারখানা নির্মাণের অনুমতি দেওয়া ও স্টার লিংকের সাথে চুক্তি ইত্যাদি কাজ করায় জনগণের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ^াসের জন্ম দিচ্ছে।
অন্যদিকে সরকার এখনও পর্যন্ত আহত-নিহতদের একটা পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে পারল না, যা গোটা জাতির জন্য দুঃখজনক। আহতদের যথাযথ চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে চলছে নানা তালবাহানা।
তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর থেকেই আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগ নিয়ে সারা দেশে মব সন্ত্রাস সংঘটিত হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই মবকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে বরং কিছু ক্ষেত্রে উসকানোর ঘটনাও দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। এই মবের কাছে সরকার জিম্মি হয়ে আছে। জুলাই আন্দোলনের অন্যতম অগ্রণী শক্তি ছিলেন এদেশের নারীরা। অথচ সেই নারীদের উপরে আক্রমণ নেমে এসেছে সবার আগে।
উগ্র ধর্মীয় ফ্যাসিস্ট শক্তি সারা দেশেই নারীদের স্বাধীন চলাফেরার উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে, হামলা হয়েছে আদিবাসীদের উপর ও মাজারে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে। এসকল পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ধ্বংস করার ঘটনা ঘটে চলেছে।
মুক্তিযুদ্ধ এই জাতির সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা। এক্যমত্যের নামে বিভিন্ন দলের মতামত উপেক্ষা করে জুলাই সনদের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধান থেকে ৪ রাষ্ট্রীয় মূলনীতি বাদ দেয়ার পরিকল্পনা করছে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যুদ্ধাপরাধী শক্তিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হচ্ছে, জুলাই অভ্যুত্থানের আন্দোলনের চেতনার সাথে যা সাংঘর্ষিক।
এ সময় অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, পূর্ববর্তী হাসিনা সরকারের মতো এই সরকারের নানা কুশীলবদের বিরুদ্ধেও শত শত কোটি টাকা লোপাট, চাঁদাবাজির অভিযোগ আসছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বিশেষ রাজনৈতিক দলকে তোষণ ইত্যাদি নানা কিছু ঘটিয়ে এরা জুলাই অভ্যুত্থানের মূল স্পিরিটের বিপরীতে হাঁটা শুরু করেছেন।
নেতৃবৃন্দ সরকারের এক বছরের কাজের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা বিঘ্ন হতে পারে এমন পদক্ষেপ গ্রহন থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের প্রতি নেতৃবৃন্দ জোর দাবি জানান।
নারায়ণগঞ্জে ডিএনডি জলাবদ্ধতা নিরসন প্রসঙ্গে নেতৃবৃন্দ বলেন- কথার ফুলঝুড়ি নয়, প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের সোয়ারেজের কাজের দীর্ঘ সূত্রিতায় মানুষ ভয়াবহ বর্ষায় ভয়াবহ জলাবন্ধতায় পড়েছে। দ্রুত কাজ শেষ করার দাবি জানান।
বিভিন্ন শিল্প কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই চলছে, অতর্কিতে কারখানা বন্ধ করা হচ্ছে, শ্রমিকদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। কারখানায় স্থিতিশীলতার জন্য এগুলো বন্ধ করার জন্য নেতৃবৃন্দ দাবি জানান।