Samakal:
2025-06-16@00:45:48 GMT

তিন স্তরে টাকা দিয়ে মাটি লুট

Published: 23rd, February 2025 GMT

তিন স্তরে টাকা দিয়ে মাটি লুট

কৃষিজমি ও নদীর মাটি কাটা বন্ধে দিনে প্রশাসনকে তৎপর দেখা গেলেও বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় মাটি কাটার তোড়জোড়। মুরাদনগরের প্রায় ২০টি পয়েন্টে চলে মাটি কাটার ধুম।
সারারাত ধরে চলে ভেকু দিয়ে কৃষিজমি ও গোমতী নদীর মাটি কাটার মহোৎসব। এসব মাটি কয়েকশ ট্রাক্টর ও ডাম্প ট্রাক দিয়ে নেওয়া হয় বিভিন্ন ইটভাটায়। প্রতিনিয়ত মাটি কাটার ফলে গোমতী নদীর দুই পারের বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় রাতে মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। বরং উল্টো প্রশাসনের বিরুদ্ধেই মাটিখেকোদের সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোমতী নদীর মুরাদনগর সদর ইউনিয়নের আলীরচর, সোনাপুর, ঘোড়াশাল, দিলালপুর, জাহাপুর ইউনিয়নের সাতমোড়া, ছয়ফুল্লাকান্দি, গাংগাটিয়া, জাহাপুর, পুনিয়াটন, ছালিয়াকান্দি ইউনিয়নের বোরারচর, সুবিলারচর, দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল, ধামঘর ইউনিয়নের ধামঘর, নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের শিবানীপুর, দক্ষিণ ত্রিশ, নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের গুঞ্জুর এলাকাসহ অন্তত ২০টি পয়েন্টে অবৈধভাবে মাটি কাটা হচ্ছে। মাটিবাহী ট্রাকগুলো উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসনের সামনে দিয়েই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
সাতমোড়া গ্রামের হালিম সরকার জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের গ্রামের কেউই রাতে ঘুমাতে পারে না। প্রতি রাতে ৮টা থেকে শুরু হয় গ্রামের ভেতর দিয়ে মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচল, শেষ হয় ভোর ৪টায়। ট্রাক্টরের শব্দে ঘুমিয়ে থাকা বাচ্চারা ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। বাধা দিতে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা উল্টো তাদের পক্ষ নিয়ে মারধরের হুমকি দেয়। গ্রামের ভেতরের পাকা সড়কগুলো এখন বেহাল।
জাহাপুর গ্রামের পাভেল খানের ভাষ্য, সংবাদ প্রকাশের পর সম্প্রতি কিছুদিন মাটি কাটা বন্ধ ছিল। কয়েক সপ্তাহ ধরে আবারও শুরু হয়েছে। কৌশল পাল্টিয়ে এখন দিনের বদলে রাতে কাটা হচ্ছে মাটি। শুশুণ্ডা গ্রাম থেকে জাহাপুর পর্যন্ত গোমতী নদীর এই ৩ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১৬টি জায়গায় রাতে মাটি কাটা হয়। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন দেখি প্রশাসনের লোকজন অভিযান চালায়। কিছুদিন পর দেখি যেই লাউ, সেই কদু। প্রশাসনের লোকজনের সহযোগিতা ছাড়া এভাবে নদীর জায়গা থেকে মাটি কাটা অসম্ভব। এভাবে চলতে থাকলে আগামী বর্ষায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
বাখরাবাদ এলাকার আমির, ফাহাদ, জামালসহ একাধিক মাটি ব্যবসায়ীর দাবি, তারা সব ম্যানেজ করে বৈধ উপায়ে এসব মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন ইটভাটায়। যেখান থেকে মাটি কাটা হচ্ছে সেগুলো কৃষিজমি, গোমতী নদীর জায়গা না।
রাতের আঁধারে মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, রাস্তায় যানজট এড়াতে প্রশাসন ও স্থানীয়দের পরামর্শেই রাতে মাটি কাটা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাটি ব্যবসায়ী বলেন, প্রশাসনের অভিযান থেকে বাঁচতে প্রভাবশালীদের প্রজেক্টপ্রতি কৃষিজমির ক্ষেত্রে ২ লাখ ও সরকারি জায়গার ক্ষেত্রে ৩ লাখ টাকা দিতে হয়। পাশাপাশি প্রশাসনকে জমির প্রকারভেদে প্রজেক্টপ্রতি মাটি কাটার ক্ষেত্রে দিতে হয় ১ থেকে ২ লাখ এবং নামধারী সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে দিতে হয় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
টাকার বিনিময়ে মাটি কাটায় সহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি, গোমতী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে রাতের বেলা মাটি কাটা হচ্ছে। এমনকি একটি সরকারি জায়গা থেকেও তারা মাটি কেটেছে। ইতোমধ্যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। মাটি কাটা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাতে মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা সম্পর্কে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়। এ বিষয়ে তাঁর ভাষ্য, জনগণ সচেতন না হলে শুধু প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে এসব মাটি কাটা বন্ধ করা অসম্ভব। ইতোমধ্যে জেলার এক জায়গায় রাতের বেলা অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে তাদের এক সদস্য হামলার শিকার হয়েছেন। রাতে অভিযান পরিচালনা করতে গেলে যে পরিমাণ জনবল প্রয়োজন, তা নেই। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে কেউ অসুন্দর করলে ব্যবস্থা: চসিক মেয়র

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর করণীয় নির্ধারণে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পরিদর্শন করেছে সিটি করপোরেশনের মেয়র, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি। পরিদর্শন শেষে জানানো হয়েছে, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত উন্মুক্ত পরিসর হিসেবে থাকবে। কোনো বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার হবে না। কেউ সৈকতকে অসুন্দর করে তুললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামের সম্পদ। যেটার মাধ্যমে দেশে-বিদেশে চট্টগ্রামকে সবাই চেনে। এটি চট্টগ্রামের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রও। ফলে যেকোনো প্রকারে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে সুন্দর রাখতে হবে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে কেউ অসুন্দর করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে অবৈধভাবে কয়েক’শ দোকান গড়ে উঠে। এগুলোর জন্য সৈকতের সৌন্দর্য ঢাকা পড়ে। গত ১১ জুন অভিযান চালিয়ে শতাধিক দোকান উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন। সিটি মেয়র বলেন, ‘এখানে অবৈধভাবে অনেকে চেয়ার নিয়ে এমনভাবে বসে গেছে মানুষ হাঁটতে পারছিল না। একজন পর্যটক এসে সৈকতের সৌন্দর্য দেখতে পারছিল না। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখন পর্যটকরা সৈকতের সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারছেন। এ দৃশ্যটা যেন সবসময় থাকে। এখনো অনেক ময়লা আছে। এগুলো পরিস্কার করা হবে।’

সমুদ্র সৈকতের নান্দনিক পরিবেশ ধরে রাখতে স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে বসবেন জানিয়ে মেয়র বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে দখলমুক্ত রাখতে একটা স্থায়ী সমাধান বের করা হবে। যাতে পর্যটকরা এসে সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারেন। যাতে কেউ তাদের জোর করে বাসি খাবার ধরিয়ে দিতে না পারে। কোন পর্যটক যেন বলতে না পারে; পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছি।’ 

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় চাঁদার বিনিময়ে দোকান বসালে ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান মেয়র। 

সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম বলেন, ‘পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামবাসীর সম্পদ। এটি বাণিজ্যিক কাজে যেন ব্যবহার না হয়। এটি চট্টগ্রাম ও দেশের মানুষের জন্য উন্মুক্ত পরিসর হিসেবে থাকবে। এখানে যেন ধনী-গরীব সব শ্রেণির মানুষ যেন আসতে পারেন।’ 

এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ