কৃষিজমি ও নদীর মাটি কাটা বন্ধে দিনে প্রশাসনকে তৎপর দেখা গেলেও বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় মাটি কাটার তোড়জোড়। মুরাদনগরের প্রায় ২০টি পয়েন্টে চলে মাটি কাটার ধুম।
সারারাত ধরে চলে ভেকু দিয়ে কৃষিজমি ও গোমতী নদীর মাটি কাটার মহোৎসব। এসব মাটি কয়েকশ ট্রাক্টর ও ডাম্প ট্রাক দিয়ে নেওয়া হয় বিভিন্ন ইটভাটায়। প্রতিনিয়ত মাটি কাটার ফলে গোমতী নদীর দুই পারের বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় রাতে মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। বরং উল্টো প্রশাসনের বিরুদ্ধেই মাটিখেকোদের সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোমতী নদীর মুরাদনগর সদর ইউনিয়নের আলীরচর, সোনাপুর, ঘোড়াশাল, দিলালপুর, জাহাপুর ইউনিয়নের সাতমোড়া, ছয়ফুল্লাকান্দি, গাংগাটিয়া, জাহাপুর, পুনিয়াটন, ছালিয়াকান্দি ইউনিয়নের বোরারচর, সুবিলারচর, দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল, ধামঘর ইউনিয়নের ধামঘর, নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের শিবানীপুর, দক্ষিণ ত্রিশ, নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের গুঞ্জুর এলাকাসহ অন্তত ২০টি পয়েন্টে অবৈধভাবে মাটি কাটা হচ্ছে। মাটিবাহী ট্রাকগুলো উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসনের সামনে দিয়েই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
সাতমোড়া গ্রামের হালিম সরকার জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের গ্রামের কেউই রাতে ঘুমাতে পারে না। প্রতি রাতে ৮টা থেকে শুরু হয় গ্রামের ভেতর দিয়ে মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচল, শেষ হয় ভোর ৪টায়। ট্রাক্টরের শব্দে ঘুমিয়ে থাকা বাচ্চারা ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। বাধা দিতে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা উল্টো তাদের পক্ষ নিয়ে মারধরের হুমকি দেয়। গ্রামের ভেতরের পাকা সড়কগুলো এখন বেহাল।
জাহাপুর গ্রামের পাভেল খানের ভাষ্য, সংবাদ প্রকাশের পর সম্প্রতি কিছুদিন মাটি কাটা বন্ধ ছিল। কয়েক সপ্তাহ ধরে আবারও শুরু হয়েছে। কৌশল পাল্টিয়ে এখন দিনের বদলে রাতে কাটা হচ্ছে মাটি। শুশুণ্ডা গ্রাম থেকে জাহাপুর পর্যন্ত গোমতী নদীর এই ৩ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১৬টি জায়গায় রাতে মাটি কাটা হয়। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন দেখি প্রশাসনের লোকজন অভিযান চালায়। কিছুদিন পর দেখি যেই লাউ, সেই কদু। প্রশাসনের লোকজনের সহযোগিতা ছাড়া এভাবে নদীর জায়গা থেকে মাটি কাটা অসম্ভব। এভাবে চলতে থাকলে আগামী বর্ষায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
বাখরাবাদ এলাকার আমির, ফাহাদ, জামালসহ একাধিক মাটি ব্যবসায়ীর দাবি, তারা সব ম্যানেজ করে বৈধ উপায়ে এসব মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন ইটভাটায়। যেখান থেকে মাটি কাটা হচ্ছে সেগুলো কৃষিজমি, গোমতী নদীর জায়গা না।
রাতের আঁধারে মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, রাস্তায় যানজট এড়াতে প্রশাসন ও স্থানীয়দের পরামর্শেই রাতে মাটি কাটা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাটি ব্যবসায়ী বলেন, প্রশাসনের অভিযান থেকে বাঁচতে প্রভাবশালীদের প্রজেক্টপ্রতি কৃষিজমির ক্ষেত্রে ২ লাখ ও সরকারি জায়গার ক্ষেত্রে ৩ লাখ টাকা দিতে হয়। পাশাপাশি প্রশাসনকে জমির প্রকারভেদে প্রজেক্টপ্রতি মাটি কাটার ক্ষেত্রে দিতে হয় ১ থেকে ২ লাখ এবং নামধারী সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে দিতে হয় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
টাকার বিনিময়ে মাটি কাটায় সহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি, গোমতী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে রাতের বেলা মাটি কাটা হচ্ছে। এমনকি একটি সরকারি জায়গা থেকেও তারা মাটি কেটেছে। ইতোমধ্যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। মাটি কাটা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাতে মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা সম্পর্কে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়। এ বিষয়ে তাঁর ভাষ্য, জনগণ সচেতন না হলে শুধু প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে এসব মাটি কাটা বন্ধ করা অসম্ভব। ইতোমধ্যে জেলার এক জায়গায় রাতের বেলা অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে তাদের এক সদস্য হামলার শিকার হয়েছেন। রাতে অভিযান পরিচালনা করতে গেলে যে পরিমাণ জনবল প্রয়োজন, তা নেই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রসহ চারজনের মৃত্যু
কুমিল্লার বরুড়া ও মুরাদনগরে বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে বরুড়ায় দুই স্কুল ছাত্র এবং মুরাদনগরে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়। সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বরুড়া উপজেলার পয়ালগাছা গ্রামের মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৩) এবং বিল্লাল হোসেন ছেলে মোহাম্মদ জিহাদ (১৪) দুপুরে হালকা বৃষ্টির মাঝে মাঠে ঘুড়ি উড়াতে ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে দুই ছাত্র মারাত্মকভাবে আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ওই দুই স্কুলছাত্র বরুড়ার উপজেলার বড়হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হাসান বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। পরিবারের কোনও অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অপর ঘটনায় মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানা এলাকায় বজ্রপাতে দুই কৃষক মারা গেছেন।
স্থানীয়রা বলেন, পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর পশ্চিম পাড়ার মৃত বীর চরন দেবনাথের ছেলে নিখিল দেবনাথ (৫৫) ও উপজেলার আন্দিকোট ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে জুয়েল ভূঁইয়া (৩২) মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় আহত হন আরও ২ ব্যক্তি।
কোরবানপুর গ্রামের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, দুপুরে কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থনের পাশের একটি মাঠে জমিতে ধান কাটছিলেন ওই দুই কৃষক। এ সময় হঠাৎ বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হলে ঘটনাস্থলে ওই দুই কৃষক মারা যান। পরে এলাকাবাসী গিয়ে তাদের উদ্ধার করে থানায় খবর দেন।
বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশের মাঠে দুই জন কৃষক বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।