এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া অন্য কাউকে চিকিৎসকের স্বীকৃতি না দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন (শিক্ষানবিশ) চিকিৎসকেরা। আজ সোমবারও তাঁরা কাজে যোগ দেননি। ফলে রোগীদের সেবায় ব্যাঘাত ঘটছে। হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের স্থায়ী চিকিৎসকদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

পাঁচ দফা দাবিতে দেশের অন্যান্য মেডিকেল কলেজগুলোতেও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এই কর্মবিরতি চলছে। তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে গতকাল রোববার সকাল আটটা থেকে টানা কর্মবিরতি পালন করে আসছেন চমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা।

পাঁচ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে ক্লাস বর্জন কর্মসূচি চলছে চমেক শিক্ষার্থীদের। গতকাল থেকে তাঁরা শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছেন না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে তাঁরা যৌথভাবে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। ওই সমাবেশ থেকে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

চমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক আহমদ হাসবাইন আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, দ্বিতীয় দিনের মতো টানা কর্মবিরতি পালন করছেন তাঁরা। অন্যান্য মেডিকেল কলেজগুলোর ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। যদি কেন্দ্রীয়ভাবে নতুন কোনো কর্মসূচি বা সিদ্ধান্ত আসে তাহলে তা পালন করা হবে।

এদিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের টানা কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় ব্যাঘাত ঘটেছে। সাধারণত ওয়ার্ডগুলোতে স্থায়ী চিকিৎসকদের পাশাপাশি ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন। রোগীর কাছাকাছি থাকেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। কিন্তু রোগীরা এখন ডাকাডাকি করেও সহজে চিকিৎসকের দেখা পাচ্ছেন না।

জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.

তসলিম উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা সারা দেশের মতো এখানে ধর্মঘট করছেন। আমাদের স্থায়ী চিকিৎসকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগে উচ্চতর কোর্সে অধ্যয়নরত চিকিৎসকেরা যথাসম্ভব সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।’

শিক্ষার্থীদের দাবি, এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া কেউ চিকিৎসক লিখতে পারবেন না। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) বিরুদ্ধে করা রিট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। বিএমডিসি নিবন্ধন শুধু এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রিধারী ব্যক্তিদের দিতে হবে। ২০১০ সাল থেকে সরকার ম্যাটসদের (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) বিএমডিসি থেকে নিবন্ধন দেওয়া শুরু করেছে। এই নিবন্ধন দেওয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল র ইন ট র ন

এছাড়াও পড়ুন:

ড্যাবের নির্বাচন ৯ আগস্ট, দুটি প্যানেলই শক্ত

বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নির্বাচনকে সামনে রেখে চিকিৎসকদের একটি অংশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের মাধ্যমে ড্যাবের নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন চিকিৎসকেরা। তবে ভোটার তালিকার কিছু ত্রুটি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন।

ড্যাবের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন ৯ আগস্ট। নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। একটি প্যানেলের পক্ষে সভাপতি ও মহাসচিব পদে দাঁড়িয়েছেন যথাক্রমে অধ্যাপক হারুন আল রশিদ ও জহিরুল ইসলাম শাকিল। প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলে সভাপতি ও মহাসচিব প্রার্থী যথাক্রমে অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক ও অধ্যাপক আবদুস সাকুর খান। হারুন আল রশিদ ২০১৯ সাল থেকে ড্যাবের সর্বশেষ কমিটির নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। আর অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক এর আগের ১৪ বছর অর্থাৎ ২০০৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ড্যাবের সভাপতি ছিলেন।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল স্বাচিপ। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বড় অংশীদার ছিল স্বাচিপ। সরকার পরিবর্তনের পর স্বাচিপ এখন চুপচাপ। নির্বাচনের পর স্বাস্থ্য খাতে ড্যাবের উপস্থিতি অধিকতর দৃশ্যমান হবে বলে অনেকেই মনে করেন।

পেশাজীবী চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) থাকার পরও প্রায় প্রতিটি বড় রাজনৈতিক দলের চিকিৎসকদের পৃথক সংগঠন আছে। বিএনপির আছে ড্যাব, তেমনি জামায়াতের আছে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)। এক বছর আগে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত আওয়ামী লীগের ছিল স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)। আওয়ামী লীগের শাসনামলে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল স্বাচিপ। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বড় অংশীদার ছিল স্বাচিপ। সরকার পরিবর্তনের পর স্বাচিপ এখন চুপচাপ। নির্বাচনের পর স্বাস্থ্য খাতে ড্যাবের উপস্থিতি অধিকতর দৃশ্যমান হবে বলে অনেকেই মনে করেন।

নির্বাচনের পর স্বাস্থ্য খাতে ড্যাবের উপস্থিতি অধিকতর দৃশ্যমান হবে বলে অনেকেই মনে করেন।

ভোটার তালিকায় ৩ হাজার ১৩৯ জনের নাম আছে। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষের চিকিৎসকেরাই জানিয়েছেন, ভোটার তালিকায় কিছু ত্রুটি আছে। ড্যাবের আজীবন সদস্য—এমন কিছু চিকিৎসকের নাম তালিকায় নেই। আবার মারা গেছেন—এমন চিকিৎসকদের নাম তালিকায় আছে। অন্যদিকে নতুন যে তিন শর মতো চিকিৎসক সদস্য হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন, যাঁরা বিতাড়িত আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এ নিয়ে কারও কারও মধ্যে ক্ষোভ বা অসন্তুষ্টি দেখা গেলেও প্রকাশ্যে কেউ বিরোধিতা করছেন না বা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথাও কেউ বলছেন না।

ড্যাবের নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিজন কান্তি সরকার গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন আর কিছু করার নেই। যা আছে তা মেনে নিয়েই সবাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে।’

প্রায় দেড় দশকে দেখা গেছে, ড্যাবের মধ্যেও দুটি ধারা বা পক্ষ আছে। গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শিশু হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ড্যাবের মধ্যেই দুটি পক্ষ স্পষ্ট। একটি পক্ষ ড্যাবের সাবেক মহাসচিব ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের অনুসারী। অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক ও অধ্যাপক আবদুস সাকুর খানের প্যানেলটি এদিকে আছে। জাহিদ হোসেন–বিরোধী বলে পরিচিত ড্যাবের সদস্যদের একটি অংশ আছে প্রতিদ্বন্দ্বী অধ্যাপক হারুন আল রশিদ ও জহিরুল ইসলাম শাকিল প্যানেলে।

ড্যাবের কোনো পক্ষেরই সমর্থক তিনি নন, কারও ঘোর বিরোধীও নন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব বেরিয়ে আসা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারই অংশ। এই নির্বাচন থেকে চিকিৎসকেরা এবং দেশবাসী সৎ ও সময়োপযোগী নেতৃত্ব পাবেন বলে আশাবাদী তিনি।ড্যাবের আজীবন সদস্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল অনুষদের ডিন শাখাওয়াত হোসেন

গতকাল দুই প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী এ কে এম আজিজুল হক ও হারুন আল রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী।

ড্যাবের আজীবন সদস্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল অনুষদের ডিন শাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ড্যাবের কোনো পক্ষেরই সমর্থক তিনি নন, কারও ঘোর বিরোধীও নন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব বেরিয়ে আসা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারই অংশ। এই নির্বাচন থেকে চিকিৎসকেরা এবং দেশবাসী সৎ ও সময়োপযোগী নেতৃত্ব পাবেন বলে আশাবাদী তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ড্যাবের নির্বাচন ৯ আগস্ট, দুটি প্যানেলই শক্ত