হত্যা, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, ছিনতাই, ডাকাতিসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে গতকাল সোমবার দেশজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি করেছেন বিক্ষোভকারীরা। তারা ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন। এসব দাবিতে গতকাল রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে গণপদযাত্রা শিক্ষা ভবনের সামনে আটকে দেয় পুলিশ। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, নাগরিক ও সামাজিক সংগঠন দ্রুত জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের দাবি করেছেন ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে আন্দোলনকারীরা। তারা বলেছেন, পদত্যাগ না করলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে মশাল মিছিল হবে।

গতকাল বিকেলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ ও ধর্ষণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়াসহ ৯ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রা শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকে যাওয়ার সময় শিক্ষা ভবনের সামনে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। বাধা পেয়ে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে শিক্ষা ভবনের সামনে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু কেউ আসেননি। এরপর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে ফিরে যান আন্দোলনকারীরা।

রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
এর আগে রোববার রাত সোয়া ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হল প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়। ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র সাকিব আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা শহরের প্রতিটি অলিগলিতে চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী আর ডাকাতরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এসব প্রতিরোধ করতে না পারার কারণে এই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাঁর চেয়ারে বসার নীতিগত যোগ্যতা হারিয়েছেন।’

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, সামগ্রিকভাবে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আমরা সিভিল পোস্ট থেকে চেষ্টা করছি আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করতে। জনজীবনে যেন আতঙ্ক না ছড়ায়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে। এ আন্দোলনে আমাদের সংহতি রয়েছে।
গতকাল কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিন। 

২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছিনতাইয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি
রাজধানীর বনশ্রী, সবুজবাগ, খিলগাঁও ও রামপুরা থানা স্বর্ণ শিল্পালয় মালিক সমিতির সদস্য ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে গুলি করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। গতকাল দুপুরে ছিনতাইয়ের স্থানে প্রথমে মানববন্ধন করেন তারা। পরে বনশ্রীর মূল সড়ক অবরোধ করেন। তাদের দাবি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

ভিকারুননিসায় বিক্ষোভ
সহিংসতা ও ধর্ষণ বন্ধে রাজধানীর বেইলি রোডে বিক্ষোভ করেছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটকে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে তাদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন– ‘আমার বোন কবরে, ধর্ষক কেন বাইরে’, ‘ধর্ষকের চামড়া, তুলে নেব আমরা’, ‘আমাদের বাংলায়, ধর্ষকের ঠাঁই নাই’।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকে গিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক প্রতীকী অবরোধ ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতীকী গায়েবানা জানাজা
ধর্ষকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তি নিশ্চিত এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগসহ সাত দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। সমাবেশ শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমের প্রতীকী গায়েবানা জানাজা পড়েন শিক্ষার্থীরা।

আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে উদ্বেগ 
সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ ও ক্ষোভ জানিয়েছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন। বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদের বিবৃতিতে বলা হয়, বিভিন্ন স্থানে নৈরাজ্যকর অবস্থার পর সোমবার রাত সাড়ে ৩টায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাঁর বাসভবনে নাটকীয় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা শুধু দায়িত্বহীন নয়, সত্যের অপলাপ মাত্র। 
বিবৃতিতে সই করেছেন বাম জোটের সমন্বয়ক ইকবাল কবির জাহিদ, কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মোহাম্মদ শাহ আলম, রুহিন হোসেন প্রিন্স, বজলুর রশীদ ফিরোজ, মোশরেফা মিশু, মাসুদ রানা ও আব্দুল আলী। 

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও রুহিন হোসেন প্রিন্স পৃথক বিবৃতিতে বলেন, জানমালের নিরাপত্তা দিতে না পারার দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। 
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি দূর করার ক্ষেত্রে দায়িত্ব নেওয়ার বদলে দেখেও না দেখার নীতি অবলম্বন করছে। 
গণফোরাম সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক ডা.

মিজানুর রহমান যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, শক্ত হাতে অপরাধীদের দমনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী এক বিবৃতিতে অব্যাহত নারী ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ব্যর্থতার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি বিবৃতিতে বলেছে, বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে, যা কোনো সভ্য দেশে কাম্য নয়।

আইনের কঠোর প্রয়োগ চায় আসক
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গণতন্ত্র যদি সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতেই থাকবে। বর্তমানে যে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে নারীর চলাফেরার অধিকার সংকুচিত হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যদিও অনেক কঠোর আইন রয়েছে, তবে আইনগুলোর বাস্তবায়ন বা যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে কিনা, সেটি পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।

বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের নেতারা। পাশাপাশি সম্প্রতি ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা এসবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলা শাখার উদ্যোগে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এ হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।

ধর্ষণ ও নারীদের প্রতি অবমানকর আচরণের প্রতিবাদে বরিশাল নগরীতে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। গতকাল ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের ব্যানারে এ কর্মসূচিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করা হয়। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের রৌমারীতে মানববন্ধন হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। শেরপুরের নকলা উপজেলায় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে ছাত্রদলের ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে নারায়ণগঞ্জে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন।
সাভারে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে রোববার রাতে এক নারী পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। সোমবার সকালে খবরটি কারখানায় ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিক্ষুব্ধরা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যুরো ও প্রতিনিধি)

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর স থ ত র ক অবর ধ র অবনত স মব র কর ছ ন র ঘটন গতক ল অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ

চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।

এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।

বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশ

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।

এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।

কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেই

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।

এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।

সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।

গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতা

অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।

সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
  • ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
  • প্রেমিকার দেখা পেতে বোমা ছুঁড়ে গ্রেপ্তার প্রেমিক
  • বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ভারতীয় পাসপোর্টের অবনতি কেন?
  • গণভোট নিয়ে উত্তাপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: প্রেস সচিব
  • অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
  • কথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল