খোলা স্থানে শামিয়ানা টাঙানো। নিচে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আছেন নানা বয়সী অসহায় ও দুস্থ মানুষ। একপাশে প্লাস্টিকের টেবিলে চাল, ডাল, আলু, তেল, খেজুর, লবণ, মুড়িসহ আট পদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন একদল তরুণ ও যুবক। একজন প্রচার মাইকে বসে থাকা ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা করছেন। তখন তিনি প্রথমে একটি ব্যাগ নিচ্ছেন।
১০ মিটার সামনে যেতেই নিত্যপণ্যে ভরে যাচ্ছে ব্যাগটি। এ জন্য লাগছে না একটি পয়সাও। কুষ্টিয়ার কুমারখালী সরকারি কলেজ মাঠে গতকাল মঙ্গলবার এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। ‘রমাদানের ফ্রি বাজার’-এর আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ফোরাম’। এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম।
সংগঠনটির সভাপতি আশিকুল ইসলাম চপলের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মো.

আফজাল হোসাইন, বিএনপির সদস্য সচিব লুৎফর রহমান প্রমুখ।
অসহায় ও দুস্থ মানুষ রমজান মাসে যেন ভালোভাবে সাহ্‌রি ও ইফতার করতে পারেন, সে জন্য এ উদ্যোগ বলে জানান ফোরামের সভাপতি মো. আশিকুল ইসলাম চপল। তিনি বলেন, ৪৫০ জন মানুষের মাঝে বিনামূল্যে নিত্যপণ্য দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকে পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি তেল, ছোলা, মসুর ডাল, খেজুর, মুড়ি ও লবণ, তিন কেজি আলু এবং একটি ব্যাগ পেয়েছেন।
বিনামূল্যে নিত্যপণ্য পেয়ে খুশি অসহায় মানুষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপকারভোগীর ভাষ্য, বাজারে জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। আয় না বাড়লেও দাম বেড়েই চলেছে। তাদের চাল, ডাল, তেল, আলুসহ অনেক কিছু বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। এতে তারা খুশি।
ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, অসহায় ও দুস্থদের পাশে সমাজের বিত্তবান এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল ইসল ম অসহ য়

এছাড়াও পড়ুন:

‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি

ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।

শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।

কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলা

শিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’

শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি