এনসিপি জনগণের দল, তাদের টাকায় পরিচালিত হবে
Published: 8th, March 2025 GMT
নির্বাচনের জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মানসিক প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আগের বক্তব্যের ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব নয়– এভাবে কথাটি বলিনি। নির্বাচন রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। যদি রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি, কাঙ্ক্ষিত সময়েই গণপরিষদ ও সংসদ নির্বাচন সম্ভব। নির্বাচনে যাওয়ার আগে দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম এবং সংস্কারে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চাই।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাংলামটরে দলীয় কার্যালয়ে এনসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভার পর এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সরকারের উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দলের দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ ইসলাম।
বিভিন্ন স্থানে সমন্বয়ক পরিচয়ে অপকর্ম হচ্ছে– এই অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, সমন্বয়ক পদ এখন কার্যকর নয়। এ পরিচয় কেউ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সূত্র জানিয়েছে, নারী নেতারা সভায় জানান, তারা বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াতসহ সব পক্ষের সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। শীর্ষ নেতারা জানান, এ ইস্যুতে নারী নেতাদের পাশে থাকবে দল। রোজার পর দেশজুড়ে সংগঠনের বিস্তারের কাজ শুরু হবে।
রয়টার্স আগের দিন জানিয়েছিল, ডিসেম্বরে নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করেন নাহিদ ইসলাম। নাহিদ গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘এভাবে কথাটা বলিনি। বলেছিলাম, আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি, এমন নাজুক অবস্থায় নির্বাচন করা কঠিন হবে। পুলিশ প্রশাসনের সুষ্ঠু নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা দীর্ঘদিন নেই। অবশ্যই নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি করতে হবে।’
শেখ হাসিনার পতন ঘটনানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এক দফার ঘোষণা করা নাহিদ বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্যে সংস্কারের জুলাই সনদ সই হওয়ার কথা। জনগণ দেখতে পাবে কোন রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে বা বিপক্ষে। ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে। তার আগে কীভাবে নির্বাচনের দিকে যাব?
নারীর প্রতি নিপীড়নের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং এনসিপির নারী সদস্যদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, বুলিং চলছে। ফ্যাসিবাদীর কর্মীরা অনেক বেশি যুক্ত হচ্ছেন এর সঙ্গে। সরকারের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এনসিপির কার্যক্রম বিষয়ে নাহিদ বলেন, নিবন্ধনের শর্ত পূরণে মনোযোগী হচ্ছি। তৃণমূলে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছি। রোজার পর পুরোদমে শুরু করব।
দাতারা ক্ষতির শিকার হবে না, তার নিশ্চয়তা দিতে হবে
ধনীদের কাছ থেকে টাকা পাচ্ছে এনসিপি– নাহিদের সাক্ষাৎকারের এ তথ্য জানিয়েছিল রয়টার্স। নাহিদ ইসলাম এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, সচ্ছল ব্যক্তি, শুভাকাঙ্ক্ষীরা সহযোগিতা করে। আমরা ক্রাউড ফান্ডিংয়ের দিকে যাচ্ছি। এর মাধ্যমে দলের কার্যালয় এবং ইলেকশন তহবিল তৈরি করা হবে। আর্থিক সহায়তার জন্য রিকশাওয়ালা থেকে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের কাছে যাব। এনসিপি জনগণের দল, জনগণের টাকায় পরিচালিত হবে। ফিন্যান্সিয়াল পলিসি টিম গঠন হয়েছে। ডায়াসপোরা টিম এবং দেশীয় বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের সঙ্গে কথা বলছি।
রাজনৈতিক দলের আর্থিক সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, কারা সহযোগিতা করছে, নাম প্রকাশ করলে তারা ক্ষতির শিকার হবে না– এ নিশ্চয়তা সরকার থেকে দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে কারা আর্থিক সহায়তা করছে, কোন খাতে ব্যয় হচ্ছে, তা প্রকাশের সংস্কৃতি আসুক। এককভাবে এই সংস্কৃতি তৈরি এনসিপির পক্ষে সম্ভব নয়।
নির্বাচন পেছানোর ভয় কেন করে: সারজিস আলম
‘শেখ হাসিনার বিচারের আগে নির্বাচনের কথা কেউ যেন ভুলেও না তোলে’– এ বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, এখনও মা-বাবারা লাশ খুঁজে বেড়াচ্ছে। জানি না, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনকেন্দ্রিক কথা এলেই, কেন তারা নির্বাচন পেছানোর ভয় করে! একটা নির্বাচন হবে, আমরা দ্রুত ক্ষমতায় যাব– এই চিন্তা কেন কাজ করে।
সারজিস বলেন, নির্বাচনে সবাইকে শহীদ পরিবার, আহত আন্দোলনের যোদ্ধাদের কাছে যেতে হবে। তখন যেন বলতে পারি, ঐক্যবদ্ধভাবে খুনি হাসিনার বিচার নিশ্চিত করে এসেছি। বাকিদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। এর সঙ্গে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার যে সম্পর্ক দেখানো হচ্ছে, তা সেভাবে সম্পর্কিত নয়।
দুটি কর্মসূচি ঘোষণা
সংবাদ সম্মেলনে সদস্য আখতার হোসেন বলেন, প্রথম কর্মসূচি হিসেবে অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার এবং আহতদের সম্মানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামী সোমবার ইফতার মাহফিল হবে। পরদিন মঙ্গলবার এনসিপির ইফতার মাহফিল হবে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে।
সংবাদ সম্মেলনে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প ন হ দ ইসল ম এনস প র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে:
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএনসিসির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত পশ্চিম শেওড়াপাড়া, পশ্চিম কাজীপাড়া ও সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা, ৫ কিলোমিটার নর্দমা ও দেড় কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণকাজের উদ্বোধন ও গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।
ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, ডিএনসিসির সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। প্রকল্পটি কবে শুরু হবে, কবে শেষ হবে, কতা টাকা বরাদ্দ আছে—এসব তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এছাড়া, রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ হলে নির্মাণ সামগ্রী কী, সেটা জনগণের জানা দরকার। যখন জনগণ জানবে, তখন তারা জবাবদিহি করতে পারবে।
তিনি বলেন, “আমি গত সপ্তাহে কাউকে না জানিয়ে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে চলমান কাজ পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, রাস্তাকে ধরে রাখার জন্য যে ওয়াল (বিশেষ দেয়াল) দেওয়া হয়েছে, সেটার পিলার বানানোর কথা ছিল স্টোন দিয়ে; কিন্তু বানিয়ে রেখেছে ব্রিক দিয়ে। এটা বড় দুর্নীতি। স্থানীয় মানুষ যদি না জানে, কী নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হবে, তাহলে দুর্নীতি করাটা সহজ। তথ্যের যত বেশি আদান-প্রদান হবে, তথ্য যত বেশি পাবলিক করা হবে, জনগণ তত বেশি জবাবদিহি করতে পারবে। আমি ঠিকাদারকে জানিয়ে দিয়েছি, সঠিক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার না করলে বিল দেব না। তারা বলেছে, এটা ঠিক করে দেবে।”
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, যার যার এলাকার কাজ তারা বুঝে নেবেন। বুঝে নেওয়ার জন্য যত তথ্য ও সহযোগিতা লাগবে, সেটা আমরা দেব। ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে প্রকল্পের সব তথ্য ও ঠিকাদারের ফোন নম্বরসহ দেওয়া থাকবে। স্থানীয় জনগণ স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ বুঝে নেবেন। আমরা চাই, সকলের অংশগ্রহণে উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হবে। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় সোসাইটি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতা পাচ্ছি। সবার অংশগ্রহণ বাড়াতে আমি বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে গণশুনানি করছি। প্রতি মাসে ফেসবুক লাইভে দেশে-বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সাথে যুক্ত হচ্ছি। ডিএনসিসির সবার ঢাকা অ্যাপ আছে, সেটির পাসওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের দিচ্ছে না। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা ৪ কোটি টাকা খরচ করে এই অ্যাপ বানিয়েছে। পাসওয়ার্ড না দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।”
ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় হকারদের জন্য হাটা যায় না। মানুষের অবাধ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। ঢাকা শহরে মানুষের চলাচলের অধিকার সবার আগে, সেই অধিকার আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। মিরপুর-১০ এর প্রধান সড়কের যত হকার ও অটোরিকশা আছে, সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেব। যারা এ ধরনের ইনফরমাল পেশায় যুক্ত আছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্যও আমরা প্ল্যাটফর্ম করব। তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা আমরা তৈরি করব। এই শহরটা সবার, সবাই একসাথে বসবাস করব; কিন্তু অন্যদের কষ্ট না দিয়ে, অন্যের অধিকার নষ্ট না করে।
বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
ঢাকা/এএএম/রফিক