ফ্যাসিস্টদের দোসর বন্দরের আলী হোসেন প্রকাশ্যে
Published: 10th, March 2025 GMT
অপারেশন ডেভিল হান্ট চলাকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসররা অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছে, আবার অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে মুছাপুর ইউনিয়নে উপনির্বাচনে সাবেক এমপি সেলিম ওসমান মনোনীত প্রার্থী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর আলী হোসেন এখনো মুছাপুর এলাকায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এমন কি তিনি বিএনপির নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে এখন বিএনপি নেতা বনে যাওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি সেলিম ওসমান ক্ষমতায় থাকাকালে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ব্যাপকভাবে হস্তক্ষেপ করতেন। সেই ধারাবাহিতকায় সব শেষ বন্দর উপজেলা নির্বাচনে নগ্ন ভাবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছিলেন।
জনগণ তাকে ভোটের মাধ্যমে ভুল প্রমানিত করেছিলেন। পরবর্তীতে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন নিয়েও তিনি একইপন্থা অবলম্বন করে ছিলেন। মুছাপুরবাসীর মতামতকে উপেক্ষা করে তিনি নির্বাচনে আলী হোসেনকে নিজের প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে অন্যান্য প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি দিয়ে ছিলেন।
গত বছরের ২৭ জুলাই বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের উপ নির্বাচন হবার কথা ছিলো। সে নির্বাচনে সাবেক এমপি সেলিম ওসমান মুছাপুরের ব্যবসায়ী আলী হোসেনকে সমর্থন দেন এবং বন্দর ইউনিয়নের বালুচরে পার্কে ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে আলী হোসেন প্রার্থীতা ঘোষণা করেন। পাশাপাশি অন্যান্য প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকি পর্যন্ত প্রদর্শন করেন।
তার কিছুদিন পর মদনপুর ফুট ওভার ব্রিজের নিকটে একটি মতবিনিময় সভায় সেলিম ওসমান আলী হোসেনকে সহায়তা করতে বন্দরের সকল ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও জনগণকে অনুরোধ জানান।
আরো জানা গেছে, গত ছাত্র আন্দোলনে মদনপুরে পুলিশের লেগুনা পোড়ানোর ঘটনায় এই আলী হোসেন তৎকালীন সরকারের দোসরদের সাথে মিলে বন্দর থানায় ২টি মামলা করেন। মামলা নং-৩১ ও ৩২। যেখানে তার ইন্ধনে মুছাপুরের অনেক নিরিহ ব্যক্তিদেরকে আসামি করা হয়।
মামলায় আসামি হওয়া ভূক্তভোগীরা জানান, আমরা কোন অপরাধের সাথে জড়িত না হয়েও আলী হোসেনের ইন্ধনে আসামি হয়ে হয়রানীর শিকার হয়েছি। সে ওসমান পরিবারের আস্থাভাজন কর্মী এবং স্বৈরাচারের দোসর।
নানান অপকর্ম করে এখনো সে ধরাছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে। ডেভিল হান্টের অভিযানে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে। তাই আলী হোসেনকে আইনের আওতায় নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে নিশ্চিত করেছে, গত ৫ আগস্টের পর আলী হোসেন নিজের রঙ বদলে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বাসায় গিয়েও মিটিং করেন।
কিন্তু সেখানে খুব বেশি সুবিধা করতে না পারায় তিনি বর্তমানে মহানগর বিএনপির নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানা গেছে।
মুছাপুর ইউনিয়ন এলাকাবাসীর দাবি ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এবং সাবেক এমপি সেলিম ওসমানের আর্শীবাদ পুষ্ট এই আলী হোসেনকে অচীরেই ডেভিল হান্ট অপারেশনের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে আইনে আওতায় আনা জরুরি।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ স ল ম ওসম ন স ব ক এমপ ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’