Samakal:
2025-06-16@06:25:59 GMT

কথা নহে, কাজ চাহি

Published: 10th, March 2025 GMT

কথা নহে, কাজ চাহি

অপরাধ দমনে স্বীয় বাহিনীর মাঠ প্রশাসনের উদ্দেশে মহাপুলিশ পরিদর্শক- আইজিপি যেই শক্ত বার্তা দিয়াছেন, উহা গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া আমরা মনে করি। রবিবার ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারের সহিত ভার্চুয়াল বৈঠক করিয়া আইজিপি তাহাদিগকে ‘মব ভায়োলেন্স’ বা দলবদ্ধ সহিংসতাসহ যেই কোনো প্রকার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি শক্তভাবে মোকাবিলার নির্দেশ দিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন, কেহ অপরাধে সংশ্লিষ্ট হইলে দল-মত-গোষ্ঠী পরিচয় না দেখিয়া তাহার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ লইতে হইবে। সাম্প্রতিক সময়ে খোদ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নজিরবিহীন যেই মব ভায়োলেন্সের সম্প্রসারণ ঘটিয়াছে, কথিত নৈতিক পুলিশির নামে নারী হেনস্তা চলিতেছে, এমনকি একাদিক্রমে নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের ঘটনা জনসমক্ষে আসিতেছে, প্রধানত পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনীগুলির নিষ্ক্রিয়তা এহেন পরিস্থিতির জন্য দায়ী। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানির ন্যায় অপরাধের বাড়বাড়ন্তের পশ্চাতেও একই কারণকে দায়ী করা যায়। এই অবস্থায় দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রধান বাহিনীর সর্বোচ্চ মহল হইতে আলোচ্য নির্দেশনা নিঃসন্দেহে পুলিশের মাঠ প্রশাসনের আত্মবিশ্বাস ফিরাইয়া দিতে পারে। 

মুশকিল হইতেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শক্ত হস্তে নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা পুলিশপ্রধানের পূর্বে আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, এমনকি সরকারের শীর্ষ মহলের নিকটেও শুনিয়াছি, যাহার প্রভাব মাঠ পর্যায়ে কার্যত পরিলক্ষিত হয় নাই। বরং বিভিন্ন স্থানে পুলিশের উপরই আক্রমণ সংঘটিত হইতেছে। পুলিশ হেফাজত হইতে আসামি ছিনাইয়া লইবার একাধিক ঘটনা অথবা একই উদ্দেশ্যে থানা ঘেরাওয়ের ঘটনাও ঘটিয়াছে। এই সকল ঘটনায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের আহত হইবার উদাহরণও বিরল নহে। আমরা মনে করি, শীর্ষ মহল হইতে যতই নির্দেশনা প্রদান করা হউক; সাধারণ পুলিশ সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধি করিতে না পারিলে, আরও স্পষ্ট করিয়া বলিলে, আইন প্রদত্ত কর্তৃত্ব ফিরিয়া না পাইলে পুলিশকে প্রত্যাশিত মাত্রায় সক্রিয় করা কঠিনই থাকিবে। পুলিশের কর্তৃত্ব ফিরাইয়া দিবার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হইল সকল প্রকার বাহ্যিক হস্তক্ষেপমুক্তভাবে বাহিনীটিকে আইন ও বিধি অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।

দুঃখজনক, পূর্বসূরিদের ন্যায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বাস্তব পরিস্থিতি অস্বীকারের প্রবণতা দৃশ্যমান, যাহা পুলিশের মধ্যেও ফৌজদারি অপরাধের ঘটনা লুক্কায়িত করিবার প্রবণতা সৃষ্টি করিতে পারে। সরকারের শীর্ষ মহল হইতে যেই কোনো অপরাধজনক ঘটনার জন্য বিশেষ কোনো দল বা মহলকে দায়ী করিবার যেই প্রবণতা পরিলক্ষিত হইতেছে, উহাতে দোষারোপের পুরাতন ক্রীড়া অব্যাহত রাখিতে পারিলেও জননিরাপত্তা বিধানে ভূমিকা রাখে না। অস্বীকার করা যাইবে না, বিশেষত গত আগস্ট হইতে অদ্যাবধি পুলিশের উপর যত প্রাণঘাতী হামলা হইয়াছে; বাহিনীটির যত স্থাপনা ধ্বংস করা হইয়াছে, সেই সকল ঘটনার তদন্ত হয় নাই; অপরাধীদেরও আইনি বেষ্টনীতে আনা হয় নাই। ইহা বাহিনীটির মনোবল ফিরাইয়া আনিবার পথে প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ– এই বিষয়ও সরকারকে অনুধাবন করিতে হইবে। দায়িত্ব পালনে পুলিশকে যে এখনও বিভিন্ন মহল বাধা প্রদানে দুঃসাহস  পাইতেছে, উহারও উৎস এইখানে নিহিত।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেই অবনতি ঘটিয়াছে, তাহা শুধু নাগরিকদের জীবন ও সম্পদকেই বিপন্ন করিতেছে না; জাতীয় অর্থনীতির জন্যও ভয়ংকর পরিণামকে আহ্বান জানাইতে পারে। এহেন অবস্থায় একদিকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস, অন্যদিকে বৈদেশিক বাণিজ্যের নেতিবাচক প্রভাব পড়িতে পারে। ফলে শুধু নির্দেশনা জারি নহে, এখন সময় উক্ত নির্দেশনা বাস্তবে রূপায়ণের। এই বিষয়টিই দেশের নীতিনির্ধারকগণ উপলব্ধি করিবেন বলিয়া আমরা প্রত্যাশা করি। তৎসহিত বর্তমান সমাজেও বিশেষ করিয়া তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিভিন্ন অপরাধপ্রবণতার বিরুদ্ধে যে জাগরণ দৃশ্যমান, উহাও অব্যাহত রাখিতে হইবে। আমরা জানি, যে কোনো পরিবর্তনে নাগরিক সচেতনতাই প্রাথমিক গতি সঞ্চার করে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর স থ ত প রবণত অপর ধ সরক র ল হইত

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে হোটেল কক্ষে তল্লাশি, সমালোচনা 
  • ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচনের জন‌্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • গাজীপুরে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কারখানার কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে মারধর, আটক ৪৩
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
  • বিএনপি ও গণ অধিকারের মধ্যে উত্তেজনার জেরে পটুয়াখালীর ২ উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি
  • দীর্ঘ ছুটি শেষে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ফিরছে মানুষ