রাশিয়া তাদের সীমান্তবর্তী কুরস্কের অধিকাংশ এলাকা গত এক সপ্তাহে পুনরুদ্ধার করেছে। এসব এলাকা ছেড়ে পিছু হটছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী। মার্কিন অস্ত্র সরবরাহ ও গোয়েন্দা সহযোগিতা বন্ধের মধ্যে অঞ্চলটি ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। অবশ্য মঙ্গলবার রাত থেকে এ সহযোগিতা আবার চালুও করে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা এগিয়ে নিতে মার্কিন প্রতিনিধি দল মস্কোয় পৌঁছেছে। এর আগে রিয়াদে রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদের সাড়ে ৯ ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠক হয়।
বৃহস্পতিবার আলজাজিরা জানায়, হোয়াইট হাউস ইউক্রেনে সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা বন্ধ ঘোষণার পর ৬ মার্চ কুরস্ক পুনরুদ্ধার অভিযান জোরদার করে রাশিয়া। ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ জানান, রুশ বাহিনী অন্তত ৩২ বার কুরস্কে হামলা চালায়। তারা ড্রোন দিয়েও হামলা করেছে। ৭ মার্চ তারা সীমান্তবর্তী সুমি শহর দখলে নেয়। একসময় পেছন দিক থেকে এসে কুরস্কে থাকা ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে এবং সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
পরদিন ৮ মার্চ রুশ বাহিনী উত্তর সুদজার বিস্তীর্ণ এলাকার বসতির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এটি ছিল কুরস্কে ইউক্রেনীয় বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ডেইলি টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরোপুরি ঘিরে ফেলার আগে ইউক্রেন তাদের সব সেনা রাশিয়ার কুরস্ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তবে ইউক্রেনের কমান্ডার ইন চিফ ওলেকসান্দার সিরস্কি সোমবার বলেন, কুরস্ক পুরো ঘিরে ফেলার ঝুঁকি নেই।
গত মঙ্গলবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, তারা কুরস্কে শত কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে। এর মধ্যে কয়েক ডজন বসতিও রয়েছে। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বুধবার বলেন, সুদজা এরই মধ্যে মুক্ত হয়েছে। বিকেলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বেশ কয়েক মাস পর কুরস্ক পরিদর্শন করেন। পরে ক্রেমলিন জানায়, পুনরুদ্ধার অভিযান চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
এ অবস্থায় ইউক্রেনকে যথাযথ গোয়েন্দা সহযোগিতা না দেওয়াকে দোষারোপ করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউক্রেনের সামরিক বিশ্লেষক পেত্রো সেরনিক বলেন, গত ৯ মে পুতিন আমাদের সেনাদের যাতে কুরস্ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার হয়, তার নির্দেশ দেন। যদি এটা না হতো, তাহলে তা পুতিনের জন্য আদর্শিক পরাজয় হতো। এটা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম রাশিয়ার কোনো এলাকা দখলে নেওয়ার ঘটনা।
ইউক্রেনের সরকারি সূত্র টাইম ম্যাগাজিনকে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সহযোগিতা বন্ধের কারণে রুশ বাহিনী এভাবে অগ্রসর হতে পেরেছে। ইউক্রেনের সেনারা রুশ বোমা হামলাকারী ও যুদ্ধবিমানের গিতিবিধি চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হন। পাশাপাশি সামরিক সহযোগিতা বন্ধ হওয়ারও প্রভাব পড়েছে।
এবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি এগিয়ে নিতে বৃহস্পতিবার সকালে মস্কো পৌঁছেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল। তারা প্রাথমিকভাবে এক মাসের যুদ্ধবিরতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিয়েভ ও ওয়াশিংটন মনে করে, এই এক মাসের মাধ্যমে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট বলেন, রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করাতে আমাদের চলমান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে উইটকফ মস্কো সফর করছেন।
দোনেৎস্কে রুশ হামলায় নিহত তিন
বিবিসি জানায়, ইউক্রেনের দোনেৎস্কে রুশ হামলায় তিনজন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে ওই অঞ্চলের প্রশাসনিক প্রধান ভাদিম ফিলেশকিন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, শতাধিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অপর ঘটনায় দক্ষিণ খেরসনে এক বৃদ্ধ নিহত ও আরেকজন আহত হয়েছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন র স সহয গ ত ত হয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।
‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।
পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।
দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।
শিল্পে নতুন সংযোগে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।
সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।
জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে
তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।
সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে
পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।
গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা
পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।