জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও তাঁর স্ত্রী আফরোজা হকের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ রোববার তাঁদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। এদিকে দুর্নীতির অভিযোগে গোপালগঞ্জ–২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সেলিমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো.

আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

মো. আক্তার হোসেন বলেন, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার ৫০৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁর চারটি ব্যাংক হিসাবে ১১ কোটি ৮৮ লাখ ১৬ হাজার ১৯ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। আরেক মামলায় হাসানুল হক ইনুর স্ত্রী আফরোজা হকের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৪৯ লাখ ৮৫ হাজার ৭৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। হাসানুল হক ইনুর উপার্জিত অর্থ দিয়ে তাঁর স্ত্রী সম্পদশালী হয়েছেন।

গত বছরের ২৬ আগস্ট হাসানুল হক ইনুকে উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে কমিশন নিতেন শেখ সেলিম

এদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিমের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার টেন্ডার কাজ পছন্দের ঠিকাদারদের পাইয়ে দিয়ে সেখান থেকে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

গত বছরের ২০ আগস্ট ফজলুল করিম সেলিম (শেখ সেলিম) ও তাঁর পরিবারের ৯১টি ব্যাংক হিসাব ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব হিসাব তলব করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পটুয়াখালীর সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন ও তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

পটুয়াখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ, তাঁর বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ ও তাঁদের স্ত্রীদের বিরুদ্ধে আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলে রাখার অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় পটুয়াখালীর সহকারী পরিচালক তাপস বিশ্বাস বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন।

মহিউদ্দিন আহম্মেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তিনি বৈধভাবে ৫৫ কোটি ২০ লাখ ২৩ হাজার ৭৮৪ টাকা আয় করেছেন। এর মধ্যে পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে ব্যয় হয়েছে ২৪ কোটি ৮২ লাখ ৬২ হাজার ৬৩৭ টাকা। ব্যয় বাদ দিলে তাঁর কাছে ৩৪ কোটি ৩৭ লাখ ৬১ হাজার ১৪৭ টাকার সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু অনুসন্ধানে মহিউদ্দিন আহম্মেদ ও তাঁর স্ত্রী মারজিয়া আখতার সুমার ভোগদখলে ৩৯ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৮৩ টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে, যা বৈধ আয়ের তুলনায় ৮ কোটি ৭১ লাখ ৫৪ হাজার ২৩৬ টাকা বেশি। অনুসন্ধানে এ অতিরিক্ত সম্পদের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, মেয়রের স্ত্রী মারজিয়া আখতারের ভোগদখলে স্বামীর আয়বহির্ভূত ২ কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার ৪৬০ টাকার সম্পদ রয়েছে। এসব সম্পদের কোনো বৈধ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। স্বামীর অবৈধ সম্পদ নিজের ভোগদখলে রাখার অভিযোগে তাঁকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

সাবেক মেয়রের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় দুদক বলেছে, তিনি বৈধভাবে ৫৭ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৭৫০ টাকা আয় করেছেন। পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে ব্যয় হয়েছে ২৩ কোটি ৬৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৫ টাকা। ব্যয় বাদ দিলে তাঁর কাছে ৩৩ কোটি ৬১ লাখ ৯৮ হাজার ৭৯৮ টাকার সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু অনুসন্ধানে আবুল কালাম আজাদ ও তাঁর স্ত্রী আকলিমা বেগম রুবির ভোগদখলে ৬০ কোটি ৫৩ লাখ ৭১ হাজার ৪০৩ টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। এটি বৈধ আয়ের তুলনায় ২৬ কোটি ৯১ লাখ ৭২ হাজার ৬০৫ টাকা বেশি। এ অতিরিক্ত সম্পদের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।

দুদক আরও জানিয়েছে, গৃহিণী আকলিমা বেগমের ভোগদখলে ১ কোটি ৯০ লাখ ১৮ হাজার ২৩৭ টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে, যার বৈধ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। স্বামীর অবৈধ সম্পদ দখলে রাখার অভিযোগে তাঁকেও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

দুটি মামলার বিষয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক তাপস বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে আয়ের বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সত্যতা পেয়ে মামলা করা হয়েছে। পরবর্তী তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পটুয়াখালীর সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন ও তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা