প্রিন্স মাহমুদের সুরে আগেও বেশ কিছু গান গেয়েছেন ইমরান ও কনা। সেসব গানের সুবাদে অনেকের প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। তবে এবার এই দুই শিল্পীকে শ্রোতারা নতুনভাবে আবিষ্কার করলেন ‘জংলি’ সিনেমার ‘বন্ধুগো শোনো’ গানে।

‘এ আমার কী হলো, পাগল পাগল লাগে, হাওয়া এসে জানিয়ে দিল, এমন তো হয়নি আগে/ বাতাসের শিষ কথা ফিসফিস, সেও তোমারই, এই দোটানা জানছো না, সেও তোমারই/বন্ধুগো শোনো, তুমি ছাড়া আমি, আমি ছাড়া তুমি, মানে হয় না কোনো’- এমন কথায় সাজানো গানটি লিখেছেন নন্দিত গীতিকবি ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদ।

একই সঙ্গে মোলো-রোমান্টিক এই গানটির সুর ও সংগীত প্রযোজনাও করেছেন তিনি। গতকাল টাইগার মিডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে গানটি প্রকাশ করা হয়। এর পরই শ্রোতাদের মাঝে দারুণভাবে সাড়া ফেলতে শুরু করেছে গানটি।

সংগীতপ্রেমীরা ক্রমাগত গানটি শোনার পাশাপাশি নিজেদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা শুরু করেছেন। সেই প্রতিক্রিয়ায় গানের শ্রষ্টা প্রিন্স মাহমুদের অনবদ্য সৃষ্টির পাশাপাশি উঠে আসছে শিল্পী ইমরান মাহমুদুল ও দিলশাদ নাহার কনার গায়কীর প্রশংসা। তারপরও এ আয়োজন নিয়ে প্রিন্স মাহমুদের কথায় নেই কোনো বাহুল্য।

স্বল্পভাষী এই সুরকার শুধু একটুকুই বলেছেন, ‘অভিনেতা সিয়াম, পরিচালক রাহিম থেকে শুরু করে ‘জংলি’ টিমের অনেকের চাওয়া ছিল, এবার যেন, নব্বই দশকের সিনেমার মিষ্টি সুরের নিটোল প্রেমের গানগুলোর মত একটা ডুয়েট গান তৈরি করি। তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণে আমার মত করে ‘বন্ধুগো শোনো’ গানটি তৈরি করেছি। আশা করছি, গানটি ভালো লাগবে।’

শিল্পী ইমরানের কথায়, “বন্ধু গো শোনো’’ এমন একটি গান, যা শ্রোতাদের মুগ্ধতার আবেশে অন্য এক জগতে নিয়ে যাবে ।

শিল্পী দিলশাদ নাহার কনা বলেন, “সময়কে ছাপিয়ে যাওয়ার মতো আরকেটি অসম্ভব সুদার গান ‘বন্ধুগো শোনো’। যার শ্রষ্টা প্রিন্স মাহমুদ। তার পক্ষেই এমন অনবদ্য আয়োজন সম্ভব, যা শ্রোতা মনে দীর্ঘদিন অনুরণন তুলে যাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।”

প্রসঙ্গত, ‘জংলি’ সিনেমার জন্য মোট চারটি গান তৈরি করেছেন প্রিন্স মাহমুদ। এটি প্রথম কোনো সিনেমা যার সব গানের সুর তার করা। এর আগে প্রকাশিত হয়েছে ‘জংলি’ সিনেমার প্রথম গান ‘জনম জনম’।

দ্বৈত এই গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন তাহসান খান ও আতিয়া আনিসা। এই গানটিও অল্প সময়ের ব্যবধানে শ্রোতাদের মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বন ধ গ ইমর ন

এছাড়াও পড়ুন:

অভ্যুত্থানের অনবদ্য দলিল

বাংলাদেশের সম্প্রচার সাংবাদিকতার পুরোধা ব্যক্তিত্ব সাইমন জন ড্রিংয়ের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল যমুনা টিভিতে। সে সময় কাজের ফাঁকে তিনি শুনিয়েছিলেন ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনাপ্রবাহ। সাইমন তখন বিবিসির প্রতিবেদক হিসেবে তেহরানে কর্মরত। তাঁর চোখের সামনেই ঘটেছিল সেই গণবিপ্লব। সাইমন বলেছিলেন, সাংবাদিকতা পেশার একটি বিশেষ সুবিধা আছে। একজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ইতিহাসকে রচিত হতে দেখেন।

ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদের উইটনেস টু দ্য আপরাইজিং গ্রন্থটি হাতে পাওয়ার পর সাইমনের কথা খুব মনে হচ্ছিল। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের বর্ষা বিপ্লবের ঘটনাগুলো খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন জীবন। নেত্রনিউজের সংবাদকর্মী হিসেবে তিনি শুধু এই অভ্যুত্থান কাছ থেকেই দেখেননি, পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ক্যামেরায় ধারণ করেছেন অভ্যুত্থানের অভূতপূর্ব সব মুহূর্ত।

গ্রন্থটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনবদ্য দলিল। জুলাই অভ্যুত্থানের শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তের সংবাদ, ছবি ও স্মৃতিকথা। একথা সত্য যে সাংবাদিকের ক্যামেরা ও কলমে কোনো অভ্যুত্থানেরই পুরো চিত্র তুলে ধরা সম্ভব নয়। নিশ্চিতভাবেই ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের বহু আত্মত্যাগের অনবদ্য গল্প এখনো অজানা। গ্রন্থটির ভূমিকায় ছবিশিল্পী জীবন আহমেদ লিখেছেন, জুলাই আন্দোলন চলাকালে ঢাকার রাজপথে, অলিতেগলিতে এমন সব দৃশ্যের জন্ম হয়েছে, যা কোনো ভিজ্যুয়াল মিডিয়া বা ফটোগ্রাফির সব সক্ষমতা দিয়েও ধারণ করা সম্ভব নয়।

জুলাই অভ্যুত্থানের আবেগ, ব্যাপকতা ও মাহাত্ম্য উল্লেখ করে নিজের অক্ষমতার কথা তুলে ধরলেও ফটোসাংবাদিক জীবন তাঁর ক্যামেরার লেন্সের মাধ্যমে ঠিকই এক জরুরি দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৭৬টি সংবাদছবিতে জুলাই অভ্যুত্থানের রক্তাক্ত ঘটনাগুলোকে চিরযৌবন দান করেছেন। পুলিশের সাঁজোয়া যান, গুলি, কাঁদানে গ্যাস, আগুন বা প্রতিবাদের বহ্নিশিখা ধারণ করেছেন ক্যামেরার লেন্সে। মৃত্যু, আর্তনাদ, অভিশাপ, প্রতিবাদ, প্রত্যাখ্যান ও পতন জীবন্ত হয়ে উঠেছে বইটির পাতায় পাতায়।

গ্রন্থটি যে কাউকে এক পরাবাস্তব জগতে নিয়ে যেতে পারে। প্রতিটি ছবিই যেন একেকটি গল্প। নির্যাতন-নিপীড়ন-বলপ্রয়োগ–হত্যাযজ্ঞের এক রক্তাক্ত ইতিহাস। যে ইতিহাসের ধারাক্রম শুরু মধ্য জুলাই থেকে। ৩৬ পৃষ্ঠায় স্থান পাওয়া ১৪ জুলাইয়ের একটি ছবি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। যাকে বলা যায় আইকনিক, মোড় পরিবর্তনকারী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিরো পয়েন্টে যাওয়ার পথে পুলিশের প্রতিরোধ ভেঙে ফেলার এক অসাধারণ মুহূর্ত যে কাউকে স্পর্শ করবে। খুব সম্ভবত এটাই ছিল প্রতিরোধ ভাঙার সূচনা। এ ছাড়া ১৪ জুলাইয়ের স্মৃতিকথাতেও জীবন আহমদ এক ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে শামসুন্নাহার হলের মেয়েরা থালাবাসন দিয়ে আওয়াজ করতে শুরু করে, তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার! পরে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলেও এই থালাবাসন দিয়ে বিভিন্ন আওয়াজ ও স্লোগান শুরু হয়। (পৃষ্ঠা: ৩৪)

পরের দিনগুলো অগ্নিগর্ভ, শ্বাসরুদ্ধকর। রাজু ভাস্কর্যের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজের আন্দোলনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের বর্বর আক্রমণ, গায়েবানা জানাজা, শিক্ষার্থীদের জোর করে হল ত্যাগ করানো আর সংঘাতের জীবন্ত বিবরণ। মাঝখানে কয়েক দিন বিরতির পর আবার গণবিস্ফোরণ। তখন দিন-রাত এক করে ক্যামেরা হাতে ঢাকার রাজপথে ছিলেন জীবন। কখনো তাঁর ক্যামেরা ধারণ করেছে অগ্নিদগ্ধ যানবাহন, উত্তরার রাজপথ বা ঢাকা মেডিকেলে লাশের সারি। মাঝেমধে৵ আছে কয়েকটি হৃদয়বিদারক মৃত্যুর এপিটাফ। রিকশার পাদানিতে গোলাম নাফিজ, স্ট্রেচারে লাল-কালো চাদরে ঢাকা রিয়া গোপের মরদেহ, সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের আঘাত–জর্জরত পিঠ ও অন্যান্য। এই ছবিগুলোর প্রতিটিই মৌষলকালের একেকটি মর্মান্তিক গল্প।

৫ আগস্ট বিজয়ের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের ছবিটি অনবদ্য। এই সংবাদছবিটির দিকে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকা যায়। লাল-সবুজের পতাকায় ছাত্র-জনতার উল্লাস, পটভূমিতে পতিত স্বৈরাচারের ক্ষতবিক্ষত অবয়ব। যেন এই একটা ছবিই ৩৬ দিনের আন্দোলনের সব কথা বলে দিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে নৈরাজ্য ও অরাজকতার এক খণ্ডচিত্রও ধরা পড়েছে জীবন আহমদের চোখে। ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের সামনে এক নারীকে নির্যাতন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, পরের দিকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার স্থিরচিত্রও স্থান পেয়েছে বইটিতে, যা একজন সাংবাদিকের পেশাদারত্ব ও দলনিরপেক্ষতার প্রমাণ দেয়।

উইটনেস টু দ্য আপরাইজিং
জীবন আহমেদ

প্রকাশক: ইউপিএল
প্রকাশ: আগস্ট ২০২৫
প্রচ্ছদ: জীবন আহমেদের ছবি অবলম্বনে সুবিনয় মোস্তফি ইরন
পৃষ্ঠা: ৩২৩
মূল্য: ২৫০০ টাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অভ্যুত্থানের অনবদ্য দলিল