প্রণোদনার চালের স্লিপ নিয়ে গেলেন বিএনপি নেতা
Published: 22nd, March 2025 GMT
বরিশালের হিজলা উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নে জেলেদের প্রণোদনার চালের ২৭টি স্লিপ ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত শাহে আলম বেপারি ওই ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। গত বুধবার ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কালাম বেপারির দোকান থেকে স্লিপগুলো নিয়ে যান তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বিষয়টি জানানো হলে তিনি সেগুলো ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেগুলো ফেরত দেননি শাহে আলম।
কালাম বেপারি জানান, ইলিশ অভয়াশ্রমে মাছ ধরায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা গত ১ মার্চ শুরু হয়েছে। এই সময়ের জন্য তালিকাভুক্ত জেলেরা দু’বারে মোট ৮০ কেজি চাল পাবেন। এ জন্য সুবিধাভোগী জেলেকে স্লিপ দেওয়া হবে, সেটি দেখিয়ে তিনি চাল তুলবেন।
কালাম জানান, তাঁর ওয়ার্ডে চাল পাওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত জেলে ১৮০ জন। সংশ্লিষ্টদের স্লিপ বিতরণের পর অবশিষ্ট ২৭টি কাউরিয়া বাজারে তাঁর দোকানে রাখা ছিল। গত বুধবার দোকানে তাঁর ছেলে ছিল। শাহে আলম দোকানে গিয়ে ছেলেকে হুমকি দিয়ে স্লিপগুলো নিয়ে যান। কালাম বিষয়টি ইউএনওকে জানানোয় শনিবার সকালে দোকানে গিয়ে তাঁকে গালাগাল করেন শাহে আলম।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শাহে আলম সমকালকে বলেন, তিনি জেলেদের স্লিপ নেননি।
ইউএনও ইলিয়াস সিকদার বলেন, বিষয়টি জানার পর তিনি শাহে আলমকে স্লিপগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য বলেছেন। উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদেরও বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ওই স্লিপগুলোর বিপরীতে চাল বিতরণ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গাফফার তালুকদার বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে শাহে আলম গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নে অনেক অপকর্ম করেছেন। তাঁকে বারবার সতর্ক করা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসছেন না। জেলেদের প্রণোদনার চালের স্লিপগুলো তাঁকে ফেরত দিতে বলা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর শ ল ব এনপ ব এনপ ব ষয়ট উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি
ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।
শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।
ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।
কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলাশিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।
শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’
শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী