দেশের শীর্ষস্থানীয় বিদ্যুৎ কোম্পানি সামিট পাওয়ারের মুনাফা কমেছে। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস জুলাই–ডিসেম্বরে কোম্পানিটির মুনাফা কমে ২০২ কোটি টাকায় নেমেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে কোম্পানিটি মুনাফা করেছিল ৩০৯ কোটি টাকা। চার কারণে মুনাফা কমে গেছে বলে জানায় তারা।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সামিট পাওয়ার গতকাল রোববার তাদের চলতি অর্থবছরের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে কোম্পানিটির মুনাফা কমার এই তথ্য পাওয়া গেছে। তার আগে গত শুক্রবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ছয় মাসের দুই প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদিত হয়। গতকাল স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তা বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছে।

সামিট পাওয়ার জানায়, গত জুলাই–ডিসেম্বর ছয় মাসে তাদের শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস কমে হয়েছে ১ টাকা ৭ পয়সা। মুনাফা হয়েছে ২০২ কোটি টাকা। এর আগের ২০২৩ সালের একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ১ টাকা ৭১ পয়সা। তখন মুনাফা হয়েছিল ৩০৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে সামিটের মুনাফা ১০৭ কোটি টাকা বা ৩৫ শতাংশ কমেছে।

মুনাফা কমে যাওয়ার জন্য সামিট পাওয়ার চারটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছে। কারণগুলো হচ্ছে কোম্পানিটির একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি সরকারের পক্ষ থেকে নবায়ন না করা; অপর একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র আংশিক সচল থাকলেও চাহিদা না থাকায় বিক্রি নেই; বিদ্যুৎ নেই, বিলও নেই ভিত্তিতে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালিত হওয়া এবং চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র করের আওতায় আসায় কর বাবদ খরচ বেড়েছে। এসব কারণে কোম্পানিটির আয় কমেছে। আয় কমে যাওয়ায় মুনাফায়ও সে ধাক্কা লেগেছে।

গত বছরের আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেসরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষে চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে না। এ কারণে সামিটসহ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ খাতের একাধিক কোম্পানির চুক্তিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে গতকাল সামিটের পক্ষ থেকে আলাদা এক তথ্যে জানানো হয়েছে, কোম্পানিটির তিনটি বিদ্যুকেন্দ্রের চুক্তি আর নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। এই তিন বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে ৩৩ মেগাওয়াট করে মোট ৬৬ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার রূপগঞ্জ ও মাওনা বিদ্যুকেন্দ্র এবং ১১ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার উল্লাপাড়া বিদ্যুকেন্দ্র। চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় ১ এপ্রিল থেকে এসব বিদ্যুকেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।

সামিটের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই–ডিসেম্বরে কোম্পানিটি আয় করেছে ২ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪ সালে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে। তবে আয় যতটা বেড়েছে, সে তুলনায় খরচ বেশি বেড়েছে। ফলে মুনাফা কমেছে।

এদিকে মুনাফা কমার খবরে গতকাল রোববার শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারেরও দরপতন ঘটেছে। এদিন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৮০ পয়সা বা ৫ শতাংশ কমে হয়েছে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা। আর হাতবদল হয়েছে সোয়া কোটি টাকার সমমূল্যের শেয়ার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র আর থ ক গতক ল বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে কেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এসব দেশ

কখনো বিমান হামলা করে, কখনো অভুক্ত রেখে, কখনো তিলে তিলে, আবার কখনো দ্রুত—সব রকমভাবে অব্যাহতভাবে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে চলেছে ইসরায়েল। এর মধ্যেই ২৮টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের অবসানের দাবিতে একটি বিবৃতি স্বাক্ষর করেছেন।

জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থা গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা জানানোর কয়েক মাস পর এখন এসব দেশ কেবল বিবৃতি দিচ্ছে। কিন্তু সংকট সমাধানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

যেসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতি দিয়েছেন, সেসব দেশের কয়েকটি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। গত সপ্তাহে ফ্রান্সও ঘোষণা দিয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরে দেশটি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। এ ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।

তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব দেশ মুখে যতই ইসরায়েলের সমালোচনা করুক না কেন, তারা এখনো ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসা–বাণিজ্য করে লাভবান হচ্ছে। তারা ইসরায়েলের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি বা এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যা ইসরায়েলকে গাজায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ বন্ধে বাধ্য করতে পারে।

এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার ও নৃশংস হামলায় অন্তত ৫৯ হাজার ৮২১ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৭ জন।

জেনে নেওয়া যাক, কোন দেশগুলো ইসরায়েলকে একদিকে তাদের সামরিক আগ্রাসনের জন্য দোষারোপ করছে, অন্যদিকে তাদের সঙ্গে কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

তথ্যভিত্তিক উন্মুক্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটির (ওইসি) ২০২৩ সালের তথ্যানুসারে, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য—প্রতিটি দেশ ওই বছর ইসরায়েলের সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের বেশি আমদানি-রপ্তানি বা উভয় ধরনের বাণিজ্য করেছে।

এসব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে কী ধরনের বাণিজ্য করে

এসব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে প্রধানত গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (চিপ), টিকা ও সুগন্ধির মতো বিভিন্ন পণ্য বাণিজ্য করে।

ইসরায়েল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব পণ্য রপ্তানি করে, সেগুলোর একটির নাম ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট। এগুলো আসলে ছোট আকারের চিপ, যা কম্পিউটার, মুঠোফোন, টেলিকম যন্ত্রপাতি, মেডিকেল ডিভাইসসহ নানা ইলেকট্রনিক পণ্যে ব্যবহৃত হয়।

এই চিপগুলোর একটি বিশাল অংশ আয়ারল্যান্ডে রপ্তানি হয়। শুধু ২০২৩ সালে দেশটিতে প্রায় ৩৫৮ কোটি ডলার মূল্যের ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট রপ্তানি করেছিল ইসরায়েল। আয়ারল্যান্ড ইসরায়েল থেকে মোট যত পণ্য আমদানি করে, তার মধ্যে এই চিপই সবচেয়ে বেশি দামে এবং বেশি পরিমাণে আমদানি করা হয়।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে ইসরায়েলে সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে ইতালি।

২০২৩ সালে ইসরায়েলে মোট ৩৪৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে ইতালি। এর মধ্যে গাড়ি রপ্তানি করা হয় ১১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে ইতালি ইসরায়েলে সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে।আগামী সেপ্টেম্বরে ফ্রান্স জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কলকাতায় বাংলাদেশি অভিনেত্রী গ্রেপ্তার , দাবি ভারতীয় গণমাধ্যমের
  • নীতি সুদহার অপরিবর্তিত, বেসরকারি খাতের জন্য সুখবর নেই
  • জুলাইয়ের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স ২৩৬ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
  • নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা, নীতি সুদহার অপরিবর্তিত
  • সবজির দামে স্বস্তি, মজুরি বৃদ্ধির হার এখনো কম
  • কর্মস্থলে অনুপস্থিত, পাঁচ প্রকৌশলী ও এক স্থপতি বরখাস্ত
  • ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণা
  • গাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে কেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এসব দেশ
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • সার আমদানি ও জমি হস্তান্তরের প্রস্তাব অনুমোদন