৫ রাজাকারকে দা দিয়ে কোপানো বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম শয্যাশায়ী
Published: 25th, March 2025 GMT
মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব নারী বীরত্বের সঙ্গে রণাঙ্গনে লড়াই করে সাহসিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম সখিনা বেগম। ১৯৭১ সালে দা দিয়ে কুপিয়ে পাঁচ রাজাকারকে হত্যা করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর এই সাহসিকতার কথা এখনো স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখে মুখে। ৯২ বছর বয়সী সেই সখিনা বেগম এখন শয্যাশায়ী। ভুগছেন শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে।
কিশোরগঞ্জের হাওর–অধ্যুষিত নিকলী উপজেলার গুরুই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সখিনা বেগম। তাঁর বাবার নাম সোনাফর মিয়া এবং মায়ের নাম দুঃখী বিবি। সখিনা নিঃসন্তান। মুক্তিযুদ্ধের আগেই মারা যান তাঁর স্বামী কিতাব আলী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি নেমে পড়েন সশস্ত্র যুদ্ধে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী বর্তমানে তাঁর বয়স ৯২ বছর। স্থানীয় মানুষ তাঁকে ‘খটকি বেগম’ বলেও ডাকেন। তিনি একজন তালিকাভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। নিকলীতে সখিনাকে দেখভাল করার কেউ না থাকায় তিনি এখন থাকেন সীমান্তবর্তী বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়ার বড়মাইপাড়া এলাকায়। সেখানে তাঁকে দেখভাল করেন সখিনার ভাগনি ফাইরুন্নেছা আক্তার।
সম্প্রতি হিলচিয়ার বড়মাইপাড়া এলাকায় ওই বাড়িতে গিয়ে কথা হয় সখিনা বেগমের সঙ্গে। উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহণের গল্প। মুক্তিযুদ্ধে সখিনা বেগমের ভাগনে মতিউর রহমান সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে হানাদার পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের হাতে শহীদ হন। ভাগনের অকালমৃত্যু সখিনাকে প্রতিশোধপরায়ণ করে তোলে।
স্থানীয় একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাসিন্দা জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় সখিনা বেগম গুরুই এলাকায় বসু বাহিনীর নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে রাঁধুনির কাজ করতেন। কাজের ফাঁকে রাজাকারদের গতিবিধির বিভিন্ন খবর সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জানাতেন। নিকলী উপজেলাকে মুক্ত করার সময়ও সখিনা বেগম খবর সংগ্রহে সক্রিয় ছিলেন। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা করেছেন। একপর্যায়ে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পরে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন। আসার সময় সেখান থেকে নিয়ে আসেন একটি ধারালো দা। পরে সেই দা দিয়েই নিকলীর পাঁচ রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যা করেন। সখিনার ওই দা বর্তমানে ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে এবং নামফলকে সখিনা বেগমের নাম উল্লেখ আছে। একাত্তরে সখিনা বেগমের সাহসিকতা ও বীরত্বের কথা জানার পর ১৯৯৮ সালে তৎকালীন সরকার তাঁকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেয়। বর্তমানে প্রতি মাসে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পান তিনি। বয়সের ভারে সখিনা এখন ন্যুব্জ। বিছানা থেকে নিজে নিজে উঠে বসতে পারেন না। বিছানা থেকে উঠে বসান ভাগনি ফাইরুন্নেছা।
কিশোরগঞ্জ জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইয়ে সখিনা বেগমের সাহসিকতার কাহিনি আছে। সখিনার ভাগনে মতিউর রহমানকে যে রাজাকাররা হত্যা করেছিল, তাঁদের মধ্যে একজনকে বসু বাহিনী ধরে নিয়ে সখিনার হাতে তুলে দেয়। সখিনা তাঁকে বঁটি ও দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। তবে স্থানীয় লোকজন জানান, সে সময় সখিনা পাঁচ রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যা করেছিলেন।
সখিনা চোখেও কম দেখেন। জীবনসায়াহ্নে এসে এখন আর তাঁর তেমন চাওয়া-পাওয়া নেই। শুধু অসুস্থতার এ সময়ে কেউ যদি তাঁর একটু খোঁজখবর নেয়, এতেই তিনি খুশি। সখিনা ভালোমতো কথা বলতে পারেন না। নড়াচড়া করতে পারেন না। সারা দিন বিছানায় পড়ে থাকেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগমের দেখাশোনা করেন তাঁর ভাগনি ফাইরুন্নেছা আক্তার। গত শনিবার বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়ার বড়মাইপাড়া এলাকায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব গম র এল ক য় র সময় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নীল সমুদ্রে দক্ষিণ আফ্রিকার নীল বেদনা, ভারত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন
অনুমিত চিত্রনাট্যই যেন অনুসরণ করল মুম্বাইয়ের ফাইনাল ম্যাচ। ভারতের জার্সি গায়ে দর্শকে ঠাসা গ্যালারি রূপ নিল নীল সমুদ্রে। ২২ গজে আরও একবার ভারতের আধিপত্য, শাসন। যেন শিরোপার পায়চারি অনেক আগের থেকেই।
ব্যাটিংয়ে পর্বত ছুঁই-ছুঁই রান। এরপর স্পিনে ফুল ফোটালেন স্পিনাররা। দক্ষিণ আফ্রিকা লড়াই করল সাধ্যের সবটুকু দিয়ে। ব্যাটে-বলে সহজে হাল ছাড়ল না তারাও। হৃদয় জিতলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাত্তাই পেল না। ভারতের শক্তি-সামর্থ্যের গভীরতার কাছে হার মানতেই হলো প্রোটিয়া নারীদের।
আরো পড়ুন:
৪১১ রানের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৯ রানে হারল জিম্বাবুয়ে
কেন বিপিএল থেকে বাদ পড়ল চিটাগং কিংস
মুম্বাইয়ের নাভি স্টেডিয়ামের নীল সমুদ্রে সব আতশবাজি আজ রাতে ফুটল ভারতের বিশ্বকাপ উদ্যাপনে। প্রথমবার ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডেতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ৫২ রানের বিশাল জয় বুঝিয়ে দেয় হারমানপ্রীত কৌর, জেমিমা রদ্রিগেজ, দীপ্তি শর্মা কিংবা শেফালি বার্মা, স্মৃতি মান্ধানা, রিচা ঘোষরা ২২ গজকে কতটা আপন করে নিয়েছেন। শিরোপা জয়ের মঞ্চে ছাড় দেননি একটুও। ২০০৫ ও ২০১৭ বিশ্বকাপে যে ভুলগুলো হয়েছিল...সেগুলো আজ ফুল হয়ে ঝরল।
বৃষ্টি বাঁধায় বিঘ্ন ম্যাচে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ২৯৮ রানের স্কোর পায় ভারত। ৪৫.৩ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ২৪৬ রান করতে পারে প্রোটিয়া নারীরা। নাডিন ডি ক্লার্ক শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আউট হলেন, স্টেডিয়ামের প্রায় ষাট হাজার ভারতীয় সমর্থকদের মুখে একটাই স্লোগান, চাক দে ইন্ডিয়া।
ওই জনসমুদ্রের স্লোগান, ‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘বন্দে মাতরম’।
বিস্তারিত আসছে …
ঢাকা/ইয়াসিন