ছুটি ছাড়াই বিদেশে অবস্থান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে অব্যাহতি
Published: 27th, March 2025 GMT
ছুটি নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়ে ফেরত না আসায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে অব্যাহতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষকেরা হলেন শান্তনু দেব বর্মণ ও রিফাত দারিনা কামাল। এর মধ্যে শান্তনু দেব বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আর রিফাত দারিনা লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, শান্তনু দেব মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে অধ্যয়নের জন্য ২০১৭ সালে কানাডায় যান। তাঁর ছুটির মেয়াদ ছিল ওই বছরের ৪ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। পরে বিনা বেতনের শর্তে এই ছুটি আরও এক বছর মঞ্জুর করে প্রশাসন। অর্থাৎ ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ছুটিতে ছিলেন। পরে গত বছর ১৩ এপ্রিল তাঁকে শিক্ষকতায় যোগদান করতে চিঠি দেয় তৎকালীন প্রশাসন। একই বিষয়ে গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর ও চলতি বছর ২ জানুয়ারিতেও তাঁকে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে গত ৩ ফেব্রুয়ারি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও তাঁকে শিক্ষকতায় যোগদানের আহ্বান জানানো হয়। তবে তিনি যোগদান করেননি।
অন্যদিকে রিফাত দারিনা কামাল ২০১৯ সালের জুলাইয়ে ছুটি নিয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে অংশ নিতে কানাডায় যান। তাঁর ছুটির মেয়াদ ২০২২ সালের জুলাইয়ে শেষ হয়। পরে তাঁকেও চিঠি দিয়ে শিক্ষকতায় যোগদান করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়। জবাব না পাওয়ায় তাঁদের দুজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি। তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনেরও সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। পরে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই তাঁদের চূড়ান্তভাবে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাবাকে দেওয়া কথা রেখেছেন, ৬৯ বছর বয়সে করেছেন পিএইচডি
সময়টা ১৯৯৯ সাল। মরিশাস থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পাড়ি জমান নিদ্যানন্দ রায়া। উদ্দেশ্য ছিল স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করা। বাবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, জীবনে যত দিন পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন, তত দিন পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন তিনি।
এরপর দুই দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। বাবাকে দেওয়া সেই কথা রেখেছেন নিদ্যানন্দ। এখন তাঁর বয়স ৬৯ বছর। এ বয়সে এসে মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটি থেকে সামাজিক নীতি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। নামের শুরুতে ‘ড.’ শব্দটি যুক্ত করেছেন।
এ অর্জন কেমন লাগছে? প্রশ্নের জবাবে নিদ্যানন্দের চটজলদি জবাব, ‘তেমন কিছুই না। এটা জীবনের একটা অর্জন মাত্র।’
বিবিসি রেডিও লন্ডনকে দেওয়া সাক্ষাতকারে নিদ্যানন্দ বলেন, আমি বেশ গরিব পরিবার থেকে এসেছি। আমার বাবা ছিলেন নাপিত। আর মা পরিচারিকার কাজ করতেন। আমি বন থেকে কাঠ, ফলমূল সংগ্রহ করতাম। মা–বাবার বেতন দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় আমাকে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল। এসব কারণই আমাকে শৃঙ্খলাবোধ আর জ্ঞান অর্জনের পথে উদ্বুদ্ধ করেছিল।ড. নিদ্যানন্দ এখন লন্ডনের এনফিল্ডে বসবাস করেন। পড়াশোনার জন্যই দেশ ছেড়েছিলেন। বলছিলেন, নিজ দেশে পড়াশোনার সুযোগ সীমিত ছিল। তাই দেশ ছেড়ে এসেছিলেন।
বিবিসি রেডিও লন্ডনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিদ্যানন্দ বলেন, ‘আমি বেশ গরিব পরিবার থেকে এসেছি। আমার বাবা ছিলেন নাপিত। আর মা পরিচারিকার কাজ করতেন। আমি বন থেকে কাঠ ও ফলমূল সংগ্রহ করতাম। মা–বাবার বেতন দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় আমাকে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল। এসব কারণই আমাকে শৃঙ্খলাবোধ আর জ্ঞান অর্জনের পথে উদ্বুদ্ধ করেছিল।’
যুক্তরাজ্যকে ‘সুযোগের ভূখণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করে নিদ্যানন্দ বলেন, ‘এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে আপনি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন।’
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর নিদ্যানন্দ সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার প্রস্তাব পান। কিন্তু সেখানে কাজের সুযোগ না থাকায় সেটা করতে পারেননি।
মাঝের সময়টায় যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়ার জন্য কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে নিদ্যানন্দকে। দীর্ঘ সময় পরিবারের খরচ চালাতে স্কুলশিক্ষক স্ত্রী ল্যাকসোমিকে সহায়তা করতে পারেননি তিনি। বরং স্ত্রীই তখন পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন। নিদ্যানন্দ বলেন, ‘তখন আমাকে চাকরি খুঁজে বের করতে হয়েছিল। আমাকে স্থায়ী হতে হয়েছিল। আমাকে সবকিছু করতে হয়েছিল।’
‘এখানে আসার পর আমি গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম। পরে আমাকে একজন পরিচর্যাকারী হিসেবেও কাজ করতে হয়েছে,’ বলেন নিদ্যানন্দ।
নিজের পিএইচডি গবেষণায় নিদ্যানন্দ মৌরিতানিয়ার ক্রেওলের ফরাসিভাষী সম্প্রদায়ের মানুষদের ঔপনিবেশিক–পরবর্তী অভিজ্ঞতার বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এলিনোর কফম্যানের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এই শিক্ষক বলেন, আমি তাঁর সাফল্যে রোমাঞ্চিত। আশা করব, তিনি তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণা চালিয়ে যাবেন।নিজের পিএইচডি গবেষণায় নিদ্যানন্দ মৌরিতানিয়ার ক্রেওলের ফরাসিভাষী সম্প্রদায়ের মানুষদের ঔপনিবেশিক–পরবর্তী অভিজ্ঞতার বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।
মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এলিনোর কফম্যানের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন নিদ্যানন্দ। এই শিক্ষক বলেন, ‘আমি তাঁর সাফল্যে রোমাঞ্চিত। আশা করব, তিনি তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণা চালিয়ে যাবেন।’
জীবনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিষয়ে বলতে গিয়ে কয়েক দশক আগে বাবাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করেন নিদ্যানন্দ। তিনি বলেন, ‘আমি বাবাকে দেওয়া কথা রেখেছি। বাবা, আমি তোমাকে গর্বিত করেছি।’