দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের স্বার্থে ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের নিলামে শর্তসাপেক্ষে ১০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়ের ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে স্পেকট্রামের দাম নির্ধারণের বেঞ্চমার্ক ডলারে হওয়াকে বাস্তবসম্মত বলা হয়েছে।

৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে স্পেকট্রাম নিলামের মানদণ্ড নিয়ে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের জবাবে বিভিন্ন বিষয়ের প্রেক্ষাপট ও ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার ২৫ মার্চ এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন।

এর আগে ১৬ মার্চ গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকের মূল বিনিয়োগকারীরা ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের কাছে চিঠি দেন। এর জবাবে বিনিয়োগকারীদের কাছে পাঠানো চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেছেন, ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের ডিভাইস প্রবৃদ্ধির নিম্নহার বিবেচনায় রেখে সরকার ৫ থেকে ১০ শতাংশ মূল্যছাড়ের বিষয়টি যৌক্তিকভাবে বিবেচনা করতে পারে, যা নির্ভর করবে অপারেটরদের অবকাঠামো উন্নয়ন, নাগরিকদের জন্য মানসম্মত সেবা ও প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নির্ধারণের প্রতিশ্রুতির ওপর।

স্পেকট্রাম মূল্য নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের বিষয়ে তিনি বলেছেন, গত তিন বছরে বাংলাদেশি টাকা মার্কিন ডলারের বিপরীতে প্রায় ৪০ শতাংশ অবমূল্যায়িত হয়েছে। এই মুদ্রা অবমূল্যায়ন বিবেচনায় নেওয়ার পর বর্তমান স্পেকট্রাম মূল্যায়ন বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রয়েছে। বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদেশি মালিকানা আছে এবং বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত তাদের মুনাফা মার্কিন ডলারে রেমিট্যান্স করে থাকে। ফলে, স্পেকট্রামের মূল্য নির্ধারণে ডলারভিত্তিক মূল্যায়ন কার্যকর পদ্ধতি, যা মুদ্রা বিনিময় ঝুঁকি কমাবে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখবে।

চিঠিতে বলা হয়, অপারেটরদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে স্পেকট্রাম সরবরাহ করাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখে মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ৪৫ (২x৪৫) মেগাহার্টজ ব্যান্ডের মধ্যে মাত্র ২৫ (২x২৫) মেগাহার্টজ নিলামে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়ে যে উদ্বেগ রয়েছে, তাও সরকার গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে। বাকি স্পেকট্রাম যথাসময়ে দেওয়ার বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে, যেন এটি প্রযুক্তিগত ও বাণিজ্যিকভাবে টেকসই হয়।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ফোরজি ও ফাইভজি প্রযুক্তির বিস্তারে ৭০০ ব্যান্ড প্রিমিয়াম ফ্রিকোয়েন্সি, যা প্রযুক্তিগত নিরপেক্ষতার সুবিধা দেয়। বৃহৎ কাভারেজ পরিধি ও নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সির কারণে এই ব্যান্ডটি ফোরজি, ফাইভজি এবং আইওটি নেটওয়ার্ক স্থাপনার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। বর্তমানে সামগ্রিক ফোরজি হ্যান্ডসেটের প্রায় ৫০ শতাংশ ডিভাইস ৭০০ ব্যান্ড সমর্থন করে। তবে, এই সংখ্যা আরো বাড়াতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি নিয়েছে। ফলে, দেশীয় উৎপাদক এবং আমদানিকারকরা এখন থেকে এমন কোনো নতুন মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজারে আনতে পারবে না, যা ৭০০ ব্যান্ড সমর্থন করে না।

তিনি আশা করেন, সরকারের এই উদ্যোগ আগামী কয়েক প্রান্তিকের মধ্যে ৭০০ ব্যান্ডে সমর্থিত ডিভাইসের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াবে, যা ভবিষ্যৎ ফাইভজি সম্প্রসারণ ও ডিজিটাল সংযোগ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটরদের বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডের ব্যবহারের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। নিম্ন-ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলোর ব্যবহার হার ৮৪ থেকে ৯৮ শতাংশ, যেখানে উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলোর ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম, মাত্র ৭ থেকে ১৮ শতাংশ। এই অসমতা নির্দেশ করে যে, উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে নির্ধারিত এলাকায় সক্ষমতা বৃদ্ধির যে প্রত্যাশা ছিল, তা এখনো পূরণ হয়নি। এর অন্যতম কারণ— যথাযথভাবে বেজব্যান্ড ইউনিট এবং রেডিও রিসোর্স ইউনিট স্থাপনে ঘাটতি আছে, ফলে ধারাবাহিক সক্ষমতা স্তর তৈরি হয়নি। এতে মানসম্মত সেবার ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। ফলে, গ্রাহকরা নিম্নমানের সেবার পাচ্ছেন—যার মধ্যে ধীরগতির ইন্টারনেট, দুর্বল সংযোগের স্থায়িত্ব, মোবিলিটি ও কলড্রপের হার বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া, উচ্চমূল্যের ইন্টারনেট প্যাকেজের কারণে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বৃদ্ধির পথে বাধা তৈরি হয়েছে। উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলোর নিম্ন ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে অপারেটররা এখনো গ্রাহকদের জন্য উপযুক্ত মূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ সরবরাহে আগ্রহ দেখায়নি। পাশাপাশি, জাতীয় ইন্টারনেট প্যাকেজের খুবই স্বল্প মেয়াদী ভ্যালিডিটি ব্যাপক সমালোচনা তৈরি করছে। এটি এমন একটি পরিকল্পিত দুষ্টুচক্রের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে অপারেটররা কৃত্রিমভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবৃদ্ধি সীমিত রেখে চলেছে।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, জাতীয় সম্পদ হিসেবে স্পেকট্রামের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে, নিরবচ্ছিন্ন ক্যাপাসিটি লেয়ার তৈরিতে বেজব্যান্ড ইউনিট এবং রেডিও রিসোর্স ইউনিট স্থাপন, ইন্টারনেট খরচ কমানো এবং ডিজিটাল বৈষম্য হ্রাসে সরকার এই খাতের সবার সঙ্গে কার্যকর আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

ঢাকা/হাসান/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ৭০০ ব য ন ড জ আহমদ ত য ব যবহ র র র ব যবহ র ক র যকর র জন য উল ল খ সরক র ইউন ট

এছাড়াও পড়ুন:

আওয়ামী লীগের ভোট পেতে একটি দল তাদের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করে না: সালাহউদ্দিন আহমদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘একটি দল আওয়ামী লীগের ভোট প্রাপ্তির জন্য আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করে না।’

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সালাহউদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন। বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, মিরপুর বাঙলা কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, তিতুমীর কলেজ, ঢাকার বিভিন্ন ইউনিটের নারীনেত্রী এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ও বর্তমান নেতারা অংশ নেন।

একটি দলকে ইঙ্গিত করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ইনিয়ে-বিনিয়ে বলছে যে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল। আমরা মাঝেমধ্যে জিজ্ঞাসা করি, সেই মুক্তিযুদ্ধ কি পাকিস্তানের পক্ষে ছিল? জনগণের সামনে কিছুদিন পরে তারা হয়তো বলবে যে তারাই একমাত্র মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, আমরা করিনি। এ রকম অনেক বক্তব্য আপনারা ভোটের ময়দানে শুনতে পাবেন। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ অনেক সচেতন। এখন আর ধর্মের বিড়ি বিক্রি করে বাংলাদেশের জনগণের সামনে ভোট চাওয়া যাবে না। তারপরও আমাদের মাঠে–ময়দানে পরিকল্পনা নিয়ে যেতে হবে।’

আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘যারা নিজের দেশের নাগরিককে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা করেছে, নারী–শিশুনির্বিশেষে শতসহস্র মানুষকে হত্যা করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, এই ইতিহাস যেন আমরা ভুলে না যাই।’

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত ‘শ্বেতপত্র’–এর কথা উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ যে পরিমাণ টাকা তছরুপ করেছে, সেটা দিয়ে বাংলাদেশের দুটি শিক্ষা বাজেট করা যায়। তিনটি স্বাস্থ্য বাজেট করা যায়। ব্যাংকিং ও নন–ব্যাংকিং ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর থেকে যে লুটপাট হয়েছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় যে ঋণ দেওয়া হয়েছে, যেটি তছরুপ হয়েছে, সেটা দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। ১৪টি মেট্রো সিস্টেম নির্মাণ করা যেত। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে ব্যাংকিং লুটপাটের মধ্য দিয়ে, সেটা বিলিয়ন ডলারে না বলে অঙ্কে বোধ হয় ২৯ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা প্রসঙ্গেও অনুষ্ঠানে কথা বলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক যাত্রাকে বিভিন্নভাবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য গণতন্ত্রের উত্তরণ হতে হবে। সেই গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি সফল ঘোষণা গতকাল হয়েছে, যেটাকে আমরা তফসিল বলছি, নির্বাচনী তফসিল।’

কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘কেউ কেউ বলেছে নো পিআর, নো ইলেকশন। কেউ কেউ বলেছে আগে স্থানীয় সরকার ইলেকশন, না হলে নো ইলেকশন। আর কেউ কেউ বলেছে একই দিনে গণভোট আর নির্বাচন হলে আমরা মানি না। আমি কারও নাম নিতে চাই না। তারা গণতন্ত্রের বিপক্ষের শিবির। তারা নিজেদের মতো করে গণতন্ত্র চায়। তাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা আলাদা।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা
  • হাদির ওপর হামলা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: সালাহউদ্দিন 
  • আওয়ামী লীগের ভোট পেতে একটি দল তাদের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করে না: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • মর্গ্যান গার্লস স্কুলে পরীক্ষাকালীন সময়ে জামায়াত প্রার্থীর সভা,  ক্ষোভ