দলীয় সিদ্ধান্ত পেলে মেয়র পদে শপথ: ইশরাক
Published: 27th, March 2025 GMT
আদালতের রায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ঘোষিত হওয়ার পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় ইশরাক হোসেন বললেন, দলীয় সিদ্ধান্ত পেলেই এই পদে শপথ নেবেন।
২০২০ সালে ডিএসসিসির মেয়র নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করা ইশরাক হোসেন বলেন, “মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করব কি না, সেটা সম্পূর্ণ দলীয় বিষয়।”
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো.
আরো পড়ুন:
সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা কাউন্সিলরদের অপসারণ
সাবেক ৩ সিইসির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা
একই সঙ্গে নৌকা প্রতীকের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের নির্বাচিত হওয়ারকে অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। তাপসকে নির্বাচিত মেয়র হিসেবে সরকার যে গেজেট প্রকাশ করেছিল, সেটিও বাতলি বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আদালত।
অনিয়ম, দুর্নীতি ও অগ্রহণযোগ্যতার অভিযোগে ডিএসসিসির নির্বাচন ও ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেছিলেন ফজলে নূর তাপসের প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ইশরাক।
২০২০ সালের বছর ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ইশরাক হোসেন সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে। বাবার পথ ধরে তিনিও বিএনপির রাজনীতি করেন।
বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ইশরাক হোসেন। তার পক্ষে রায় আসার পর তিনি ও তার সমর্থকরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
আদালত প্রাঙ্গণে ইশরাক বলেন, “২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারির মেয়র নির্বাচনে ডাকাতি হয়েছিল, যা সারা দেশ, দেশের মানুষ দেখেছে। সারা দিন আমার সঙ্গে মিডিয়ার ভাইয়েরা ছিলেন, তারা দেখেছেন। নির্বাচনি প্রচারের প্রথম দিন থেকেই অনিয়ম হচ্ছিল, যা নিয়ে আমরা অভিযোগ দিয়ে আসছিলাম। তখন আমাদের নির্বাচনি প্রচারণাকে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে।”
নির্বাচনে প্রচার মাইক ভেঙে ফেলা, পোস্টার ছিড়ে ফেলা এবং হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের বিষয় তুলে ধরে ইশরাক হোসেন বলেন, “ভোটের দিন সকাল সাড়ে ৯টা-১০টা পর্যন্ত কোনো কোনো কেন্দ্র খোলা ছিল, কোথাও ছিল না। তারপর থেকে সব কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়।”
আদালত প্রাঙ্গণে রায়ে জেতার প্রতিক্রিয়ায় ইশরাক হোসেন ভোটের দিনের জালজালিয়াতির তথ্য তুলে ধরে বলেন, “ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে ভোট জালিয়াতি করে জনরায় কেড়ে নেওয়া হয়। আমার চেয়ে বেশি ভোট দেখাতে তারা দিনব্যাপী কারচুপি করে। আমরা তখন এসব অভিযোগের নথিপত্র ও তথ্য-প্রমাণ দিয়ে মামলা করেছিলাম।”
তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদী হাসিনার পতনের পর ন্যায় বিচারের যে ধারা চালু হয়েছে, সেটি অব্যাহত থাকুক; এটি আমরা চাই।”
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে হওয়া সব নির্বাচন বাতিল করা উচিত কিনা, এমন প্রশ্নে ইশরাক বলেন, “নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে আমরা মামলা করেছিলাম কিন্তু সেখানে অনেক সমস্যা করে রেখেছিল। খুনি হাসিনার খুনি ভাইপো তাপস আদালতে হস্তক্ষেপ করে আমাদের মামলার কার্যক্রম বন্ধ করে রেখেছিল।”
তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তথ্য, সাক্ষী, প্রমাণাদি হাজির করেছি। মামলা লড়ে আমরা জিতে এসেছি। অন্যান্য নির্বাচনের বিষয় সেটা আমার দেখার, মন্তব্য করার বিষয় নয়।”
তার নির্বাচনের সময় আউয়াল কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদী আমলে সাংবিধানিক পদে যারা ছিলেন, তারা তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।”
২০২০ সালের ১৬ মে ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শেখ ফজলে নূর তাপস।
২০২০ সালে করোনার অভিঘাত প্রকট হওয়ার আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচন হয় ফেব্রুয়ারির শুরুতে। ব্যাপক কারচুপির অভিযোগের মধ্যে ভোটের ফলে জয়ী ঘোষণা করা হয় তাপসকে।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে-পরে দলটির শীর্ষ নেতারা দেশ ত্যাগ করেন। তার মধ্যে প্রথম ধাক্কায় দেশ ছেড়ে আর ফেরেননি তাপস।
২০২৪ সালের ৩ জুলাই ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশ ছেড়ে যান মেয়র তাপস।
বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণির ছেলে শেখ ফজলে নূর তাপস। আত্মীয়তার বন্ধনে শেখ হাসিনার ভাইপো তাপস। শেখ পরিবারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
পেশায় আইনজীবী তাপস ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে তাকে মনোনয়ন দেওয়ার পর তিনি জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করে আউয়াল কমিশন। ওই বছরের ১৬ মে মেয়র হিসেবে শপথ নেন তিনি।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ১৯ আগস্ট ২০২৪ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের ১২টি সিটি কপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দেয় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগের মেয়র রেজাউল করিম অপসারিত হওয়ার পর আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কারচুপির প্রমাণ পাওয়ায় ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর আদালত রেজাউল করিমের ফল বাতিল করে শাহাদাত হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
শাহাদাত হোসেন এখন চট্টগ্রাম সিটির মেয়র। একই পথে ঢাকার দক্ষিণ সিটিতে মেয়র পদে বসার অপেক্ষায় ইশরাক হোসেন।
ঢাকা/মামুন/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ড এসস স ইশর ক হ স ন ২০২০ স ল র শ খ ফজল ড এসস স কর ছ ল সরক র হওয় র প রথম আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
তিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৫ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ
সম্পূরক বৃত্তি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণাসহ তিন দফা দাবিতে অনশনে বসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন তাঁরা।
এর আগে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়।
তিন দফা দাবির অন্যটি হলো ক্যাফেটেরিয়ায় ভর্তুকি প্রদান ও স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চালু।
আজ বুধবার দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে তিন দফা দাবিতে অনশন চালিয়ে যেতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনশনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তাঁদের খোঁজখবর নিতে দেখা যায়।
অনশনে বসা পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ফয়সাল মুরাদ ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ফেরদৌস শেখ, ইতিহাস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শাহীন মিয়া এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অপু মুন্সী।
অনশনকারীদের মধ্যে ফয়সাল মুরাদ ও এ কে এম রাকিব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের পেটে ব্যথা, রক্তচাপ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে।
অনশনকারী অপু মুন্সী বলেন, পারিবারিক কারণে তাঁকে গ্রামে চলে যেতে হয়েছে। তাই গতকাল রাতে তিনি অবস্থান করতে পারেননি।
আজ অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে অনশনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করবেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
অনশনে অংশ নেওয়া শাহীন মিয়া বলেন, প্রশাসন আগের মতোই বাহানা করে যাচ্ছে। হচ্ছে, হবে এ বক্তব্য থেকে বের হতে পারেনি প্রশাসন। আর কোনো টালবাহানা তাঁরা শুনবেন না। তাঁদের দাবি অবশ্যই মানতে হবে। তা না হলে প্রশাসনকে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।
আরেক অনশনকারী ফয়সাল মুরাদ বলেন, প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চলছে, কিন্তু প্রশাসন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ইতিমধ্যে তিনিসহ আরও একজন অনশনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
অনশনকারী এ কে এম রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অবস্থানসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছি, কিন্তু তাতে প্রশাসন কর্ণপাত করেনি। তাই অনশনে যেতে বাধ্য হয়েছি। এ ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। এই নখদন্তহীন প্রশাসন হয়তো আমাদের দাবি মেনে নেবে, নয়তো তাদের নিজেদের রাস্তা মাপতে হবে।’
আরও পড়ুনসম্পূরক বৃত্তি ও জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ তিন দাবিতে অনশনে ৫ শিক্ষার্থী১৯ ঘণ্টা আগেযতক্ষণ তিন দফা দাবি আদায় না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অনশন চলবে জানিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যতক্ষণ শরীরে শেষ রক্তবিন্দু আছে ততক্ষণ তাঁরা অনশন চালিয়ে যাবেন। ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করে অনেকেই এসে সংহতি প্রকাশ করছেন। সকাল থেকে এ সংখ্যা বাড়ছে।
এদিকে গতকাল রাতে অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হন। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম ডিসেম্বরের মধ্যে জকসু নির্বাচন আয়োজনের এবং জানুয়ারি মাস থেকে সম্পূরক বৃত্তি দেওয়ার আশ্বাস দেন।
তবে সুস্পষ্ট রূপরেখা ছাড়া ও প্রশাসন থেকে লিখিত না পাওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে উপাচার্যকে জানিয়েছেন অনশনকারী শিক্ষার্থীরা।