শুরুতেই একটি কৌতুক। গভীর রাতে পল্টন ময়দানে ভিন গ্রহ থেকে দুই এলিয়েন নেমে এসেছে। একজন তরুণ, অপরজন মধ্যবয়সী। দু’জনেই একটি বন্ধ পেট্রোল পাম্পের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তরুণ এলিয়েনটি পেট্রোল পাম্প দেখে মনে করল, এটি এই গ্রহেরই কোনো প্রাণী হবে! তরুণ এলিয়েন এগিয়ে গিয়ে বলল, ‘আমরা শান্তি স্থাপন করতে এসেছি। আমাদের তোমার নেতার কাছে নিয়ে চলো।’ স্বাভাবিক কারণেই পেট্রোল পাম্প উত্তর দিতে পারল না। উত্তর না পেয়ে তরুণ এলিয়েন রেগে-মেগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। বয়স্ক এলিয়েন বুঝিয়ে বলল, ‘বাছা, ঠান্ডা হও। তোমার জায়গায় আমি হলে আরও নরম হতাম।’ কিন্তু তরুণ সতর্কতা উপেক্ষা করে আবারও পেট্রোল পাম্পের কাছে এগিয়ে গেল। যথারীতি কোনো সাড়া না পেয়ে ‘অপমানিত’ তরুণ এলিয়েন ভয়ানক অস্ত্র বের করে পাম্পের দিকে টার্গেট করে বলল, ‘শোনো, আমরা গণতন্ত্রের জন্য এসেছি! আমাদের অবহেলা করবে না। তোমাদের নেতার কাছে আমাদের নিয়ে চলো। নইলে তোমাদের ধ্বংস করে দেব।’ বয়স্ক এলিয়েন আবার সতর্ক করে বলল, ‘আমার মনে হয় না তোমার সেটি করা উচিত হবে। অযথা ক্ষেপিয়ে তুলো না।’ কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে তরুণ এলিয়েন পেট্রোল পাম্প লক্ষ্য করে গুলি চালাল। ফলে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হলো। বিশাল অগ্নিগোলকের ঝাপটা তরুণ এলিয়েনকে উড়িয়ে নিয়ে ফেলল প্রায় দুইশ গজ দূরে। আগুন আর ধোঁয়ায় চারদিক অন্ধকার। বেশ খানিক পর তরুণ এলিয়েন জ্ঞান ফিরে পেল। তখন বয়স্ক এলিয়েন তাকে ধরে টেনে কোনোমতে নিয়ে গেল স্পেস শাটলে। তরুণ এলিয়েন বলল, ‘কী ভয়ংকর! তুমি কীভাবে জানলে যে সে এত বিপজ্জনক হবে?’ বয়স্ক এলিয়েন একটু কাছে এগিয়ে উত্তর দিল, ‘বহু বছর আগে গ্যালাকটিক মহাকাশ ভ্রমণের সময় আমার পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে জেনেছিলাম, কখনোই অচেনা গ্রহের কোনো প্রাণীর সাথে ঝামেলা করবে না। আগে তাদের মনোভাব বুঝতে চেষ্টা করবে। তারা কী চায়, সেটা জেনে নিয়ে তারপর তাদের জ্ঞান বিতরণ করতে যাবে।’

প্রায় দেড় দশক পরে ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঈদ উদ‌যাপন করেছে দেশবাসী। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর একদিকে নির্বিঘ্ন পরিবেশ, অন্যদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির মাঠে নতুন নতুন প্রতিদ্বন্দ্বীর আবির্ভাব। গ্রামের চায়ের দোকানে রাজনীতির আড্ডায় নির্বাচন, সংস্কার ও আওয়ামী লীগের ফিরে আসা নিয়ে মুখরোচক গল্পও শোনা হয়েছে। সংস্কার নিয়ে বিতর্কে নির্বাচনের দিন-কাল নিয়ে শঙ্কার কথাও উঠে এসেছে। কেউ কেউ গুরু গম্ভীর গলায় এমন আশঙ্কার কথাও শোনাচ্ছেন– মানুষ যেটি বোঝে, সেটিই আগে দেওয়া দরকার। তবে সব আলোচনায় যেটি মনে হলো, আওয়ামী লীগের ফিরে আসা বিষয়ে তারা একমত হতে পারছেন না। 

কেউ কেউ বলছেন, পঁচাত্তরের বিপর্যয়ের পর আওয়ামী লীগের ফিরে আসতে সময় লেগেছিল ২১ বছর। এবারের পরিস্থিতি আরও ভিন্ন। চায়ের দোকানের আলাপেই একজন বললেন, আওয়ামী লীগের পতনের সাত মাস পার হলেও দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের কোনো গঠনমূলক রাজনৈতিক নির্দেশনা শোনা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন নিয়ে রাজনীতি কেন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে কয় দিন পরপর? ৭০-এর কাছাকাছি বয়সের একজন হালকা গলায় বললেন, দেখো মিয়ারা, আওয়ামী লীগের ফিরে আসা নিয়ে শোরগোলও কইলাম রাজনীতি! গ্রামের একজন রাজনীতির বাইরে থাকা লোক, যার ভাবনায় ভারত, পাকিস্তান, চীন, আমেরিকা দেশ নেই। তার কাছেই পাওয়া গেল রাজনীতির এই সরল পাঠ! ভাবছি, এই যে, আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনা হবে; আওয়ামী লীগের প্রত্যাবাসন করা হবে– এসবও তবে রাজনীতির অংশ। এ আলোচনা শুরু করা হয় নতুন রাজনীতির জন্য? 

বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি। স্বাভাবিকভাবেই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপির সামনে নতুন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর আভাস মিলছে। একদিকে ৫ আগস্টের পরে রাজনীতির ময়দানে প্রকাশ্য হয়ে ওঠা জামায়াতে ইসলামী, অন্যদিকে গণঅভ্যুত্থানের পরে তৈরি হওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। যদিও এনসিপির দল ঘোষণা ও প্রেস কনফারেন্সের বাইরে গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। এ ছাড়া গণঅধিকার পরিষদ, গণ সংহতি আন্দোলনের মতো রাজনৈতিক দল এবং গণতন্ত্র মঞ্চের মতো রাজনৈতিক জোট ও শক্তি রয়েছে। তবুও মূল আলোচনাটি বিএনপি, এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী নিয়ে। 
এই তিন দলের আগামী নির্বাচন ঘিরে তিন রকম ভাবনা। মোটাদাগে বলতে গেলে, বিএনপি চাইছে প্রয়োজনীয় সংস্কারটুকু শেষ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন। এনসিপি চাইছে রাষ্ট্র কাঠামোর আমূল সংস্কারের পরে নির্বাচন। জামায়াত ইসলামী ঠিক কী চাইছে, সেটি পরিষ্কার না করলেও দলটির নেতাদের বক্তব্যের সারকথা– এখনই নির্বাচনের দরকার নেই। যদিও দলটির নেতারা মুখে বলছেন, আগে হোক সংস্কার, পরে নির্বাচন। 

দেখা যাচ্ছে ‘সংস্কার’ বিষয়টি হয়ে উঠেছে রাজনীতির প্রধান আলোচ্য শব্দ। নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে তিন দলের ভিন্ন ভিন্ন অভিমত পাওয়া গেলেও এক জায়গায় ঐক্য রয়েছে; সংসদ সদস্যদের নিজ দলের বিরুদ্ধে গিয়ে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা দিতে চায় না। অর্থবিল ছাড়া অন্য যে কোনো বিষয়ে সংসদের নিম্নকক্ষের সদস্যদের নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে– সংবিধান সংস্কার কমিশনের এই সুপারিশের সঙ্গে পুরোপুরি একমত নয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি। তিন দলই চায় অর্থবিলের মতো আস্থা ভোটের ক্ষেত্রেও সংসদ সদস্যরা স্বাধীন থাকবেন না। এ ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের নিজ দলের অবস্থানের পক্ষেই থাকতে হবে। বর্তমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ সদস্যরা নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না। যদি দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তাঁর আসন শূন্য হবে। এই বিধানের ফলে সরকারের চাওয়ার বাইরে কোনো আইন বা প্রস্তাব সংসদে পাস হওয়ার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কারও বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হওয়ারও সুযোগ নেই। 

সংস্কার ও নির্বাচন বিতর্ক নিয়ে আলোচনাতে নতুন রাজনৈতিক দলের অভিযোগ, বিএনপি নাকি প্রয়োজনীয় সংস্কার চায় না। দেখা গেল, নতুন রাজনীতির ঘোষণা নিয়ে আসা এনসিপি এবং বিএনপির সংস্কার প্রশ্নে অমিল মোটা দাগে নেই। তবুও দলটি কেন বিএনপি সংস্কারের বিপক্ষে– এমন প্রচারণা চালাচ্ছে? 

রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ জটিল সন্ধিক্ষণ পার করছে। এই দেশের মানুষ বারবার রক্ত দিয়েছে, পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছে। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। ভিন্নমত, মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রশ্নে অভ্যুত্থানের সব শক্তির মধ্যে ঐক্যটা এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি। যে কোনো পক্ষের অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ পুরো দেশকে আবারও গভীর অনিশ্চয়তায় ফেলে দেবে। এটি কাম্য নয়।
 
এহ্‌সান মাহমুদ: সহকারী সম্পাদক, সমকাল; কথাসাহিত্যিক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মত মত র জন ত ন জ দল র র জন ত ক র জন ত র দল র ব ও দলট এনস প ইসল ম ব এনপ আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনীতিতে না জাড়ানোর কারণ জানালেন প্রীতি জিনতা

বলিউড অভিনেত্রী প্রীতি জিনতা এখন অভিনয়ে অনিয়মিত। অভিনয়ে তাকে দেখা না গেলেও নিজের ক্রিকেট দলের হয়ে মাঠে তাকে প্রায়ই দেয়া যায়। মাঝে গুঞ্জন উঠেছিলে রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন তিন। অবশ্য এবিষয়ে টুঁশব্দও করেননি এই অভিনেত্রী।

এদিকে মাস তিনেক আগে কংগ্রেসের পক্ষ অভিযোগ তোলা হয়েছিল, প্রীতি জিনতার ১৮ কোটি টাকার ঋণ নাকি মকুফ করে দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। শুধু তাই নয়, প্রীতি নাকি তার সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বিজেপির হাতে সঁপে দিয়েছেন- এমন অভিযোগও ওঠে। এরপর বলিউড নায়িকার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার জল্পনা শুরু হয়।

সম্প্রতি এক্স হ্যান্ডলে প্রীতি জিনতাকে একজন জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি ভবিষ্যতে বিজেপিতে যোগ দেবেন? আপনার গত কয়েক মাসের টুইট দেখে তো তেমনটাই মনে হচ্ছে। জবাবে অভিনেত্রী বলেন, ‘সোশাল মিডিয়ায় ব্যবহারকারীদের এটাই একটা সমস্যা। সবাই এত বিচার করতে বসে যান সবকিছু নিয়ে। আমি যেমনটা আগে বলেছি, মন্দিরে, মহাকুম্ভে যাওয়া কিংবা নিজের পরিচয় নিয়ে আমি গর্বিত। তার মানে এই নয় যে এসমস্ত কারণে আমি বিজেপিতে যোগ দেব।’

প্রীতি বলেন, ‘ভারতের বাইরে থাকার ফলে আমি দেশের প্রকৃত মূল্য উপলব্ধি করতে পেরেছি এবং আর পাঁচজন ভারতীয়র মতোই গর্ববোধ করি আমার দেশকে নিয়ে।’

রাজনীতিতে না আসার কারণ গত ফেব্রুয়ারি মাসেও জানিয়েছিলেন প্রীতি জিনতা। সেসময় তিনি বলেন, ‘রাজনীতি আমার দ্বারা হবে না। বিগত কয়েক বছরে একাধিক রাজনৈতিক দল আমাকে টিকিট দিতে চেয়েছে। এমনকি রাজ্যসভার আসনের প্রস্তাবও এসেছিল। তবে আমি বিনম্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ, আমার ইচ্ছে নেই। আর আমাকে ‘সৈনিক’ বললেও অতিরঞ্জিত হবে না। কারণ, আমি একজন আর্মি পরিবারের সন্তান। আমার বাবা সৈনিক এবং আমার দাদাও। আর্মি পরিবারের সন্তান হওয়ায় আমাদের মানসিকতা খানিক আলাদা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিজেদের উত্তর ভারতীয়, দক্ষিণ ভারতীয় কিংবা হিমাচলী বা বাঙালি বলে ভাবি না, আমাদের পরিচয় শুধুমাত্র ভারতীয়। আর হ্যাঁ, দেশভক্তি আমাদের রক্তে।’ সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
  • সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক
  • পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
  • প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি
  • গাজীপুরে জমি নিয়ে বিরোধে সংঘর্ষ, হাতুড়িপেটায় একজন নিহত
  • সিদ্দিককে মারধর ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি
  • একাধিক সুযোগ পেয়েও কেন রাজনীতিতে জাড়াননি প্রীতি জিনতা
  • সুযোগ পেয়েও কেন রাজনীতিতে জাড়াননি প্রীতি জিনতা
  • রাজনীতিতে না জাড়ানোর কারণ জানালেন প্রীতি জিনতা