বাংলাদেশের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অন্য কোথাও নেই
Published: 5th, April 2025 GMT
“বাংলাদেশের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অন্য কোথাও নেই। এদেশের হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান সকল ধর্মের মানুষ মিলেমিশে যার যার ধর্মীয় উৎসব পালন করে থাকে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসবে অনেক বেশি পূণ্যার্থীরা অংশ নিয়েছেন।”
বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.
শনিবার (৫ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাষ্টমী পুণ্য স্নানোৎসবের পরিদর্শনে এসে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা, জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) রাত ২টা থেকে শুরু হয়ে ৫ এপ্রিল রাত ১২টা ৫১ পর্যন্ত দুই দিনব্যাপী লাঙ্গলবন্দের এই স্নানোৎসব চলবে। স্নানের লগ্ন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবে মেতে উঠেছেন দেশ-বিদেশ থেকে আসা লাখো পুণ্যার্থী। লাঙ্গলবন্দের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পুণ্যার্থীর ঢল নেমেছে।
ঢাকা/অনিক/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল ঙ গলবন দ
এছাড়াও পড়ুন:
বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
নীল-সাদা পোশাকে সজ্জিত হয়ে নানা বয়সী মানুষ এসে জড়ো হতে থাকেন। যেন শহরের হৃদয়ে নেমে আসে গ্রামবাংলার ঘ্রাণ। মেঘলা আকাশের নিচে কণ্ঠে সুর, পায়ে তাল, কল্পনায় বর্ষার রূপই দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় গতকাল রোববার এভাবে উদযাপন হলো ‘বর্ষা উৎসব ১৪৩২’।
বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে আষাঢ়ের প্রথম দিনে রাগ, রস ও রং মিলে তৈরি হলো এক বর্ষামুখর ক্যানভাস। এবারের আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন নবীন সংগীতশিল্পী সোহানী মজুমদার। সেতারের কোমল তারে বেজে ওঠে রাগ ‘আহীর ভৈরব’। রাগভিত্তিক এ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মিলে যায় প্রাচ্যের সংগীত ঐতিহ্য ও বর্ষার আধ্যাত্মিকতা। সেই মুহূর্তে বকুলতলায় যেন ভেসে বেড়ায় বৃষ্টির সুর আর আকাশের নরম আলো।
‘বর্ষাকথন’ পর্বে বর্ষার ভাবনা, পরিবেশ ও সময়ের প্রেক্ষাপটে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান।
ঘোষণা পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট এবং সভাপতিত্ব করেন লেখক ও গবেষক অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সংস্কৃতিকর্মী নুসরাত ইয়াসমিন রুম্পা।
ঘোষণাপত্র পাঠে জানানো হয়, ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে আজ ঋতুচক্রে দেখা দিচ্ছে অসামঞ্জস্য। গ্রীষ্ম হয়ে উঠছে খরতর, বর্ষা রুষ্ট, বসন্ত ক্ষীয়মাণ। এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে মানুষের সীমাহীন ভোগবাদী আচরণ, প্রকৃতির ওপর অনবরত অনাচার। ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত, সমুদ্রজল স্ফীত, ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত– প্রকৃতি আজ সংকটে।
এ প্রসঙ্গে মানজার চৌধুরী সুইট সমকালকে বলেন, এ উৎসব শহুরে জীবনে আমরা প্রায় ১৮ বছর ধরে পালন করে আসছি। উৎসবের শিকড় নিহিত রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষামঙ্গল’-এ। আমরা তারই উত্তরসূরি হয়ে আষাঢ়ের প্রথম দিনটিকে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিই। এতে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, বরং তার সংকটও তুলে ধরা হয়। আমরা চাই, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক
গড়ুক, তার বিপন্নতাকে বুঝুক এবং তা রক্ষায় সক্রিয় হোক।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, এ ধরনের উৎসবই সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ। শিকড়ের দিকে ফিরে যাওয়ার মধ্যে নিহিত আমাদের সংস্কৃতি ও চেতনার পুনর্জাগরণ।
বর্ষা মানে নতুন জন্মের বারতা। সেই বারতা ছড়িয়ে দিতে উৎসবে প্রতীকীভাবে শিশু-কিশোরের হাতে তুলে দেওয়া হয় বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা। এই চারাগুলো শুধু বৃক্ষ নয়, বরং হয়ে উঠেছে সবুজ ভবিষ্যতের আশ্বাস।
উৎসবে একক সংগীত পরিবেশন করেন ইয়াসমিন মুশতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ও নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা।
রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন অণিমা রায়, শামা রহমান, মকবুল হোসেন ও ফেরদৌসী কাকলি। লোকসংগীত পরিবেশন করেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, শ্রাবণী গুহ রায় ও এস এম মেজবাহ। আধুনিক গান গাইতে মঞ্চে ওঠেন রত্না সরকার।
দলীয় সংগীতে অংশ নেয় সীমান্ত খেলাঘর আসর (শিশু-কিশোর), সুর বিহার, বহ্নিশিখা, সুর নন্দন এবং সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি ও আসান উল্লাহ তমাল। শিল্পবৃত্ত শিশু-কিশোর দল পরিবেশন করে আবৃত্তি ও নৃত্য কোলাজ।
নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেয় ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যাক্ষ, স্পন্দন, বেমুকা ললিতকলা কেন্দ্র, সিনথিয়া একাডেমি অব আর্টস ও নৃত্যম।