২ হাজার টাকায় সন্তান বিক্রি, রক্ত বেচে ফিরিয়ে আনলেন মা
Published: 8th, April 2025 GMT
স্বামীর নির্যাতনে শারীরিক অসুস্থতা আর মেয়েকে হারিয়ে মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিলেন সাথী বেগম (২০)। এখন ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালে বিছানায়। হাসপাতালে থেকেও ভুলে যায়নি মমত্ববোধ। সুযোগ পেলেই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে চুম এঁকে দিচ্ছে কপালে আর দুই গালে।
মানসিক ভারসাম্য কিছুটা হারালেও চোখের ভাষায় যেন বুঝিয়ে দিচ্ছেন কেমন ছিল পারিবারিক নির্যাতন। একমাত্র কন্যা সন্তানকে মাদকের টাকা যোগাতে স্বামী বিক্রি করে দিলেছিল মাত্র ২ হাজার টাকায়। বিষয়টি জানার পর সাথী বেগম নিজের রক্ত বিক্রি করে দুই হাজার টাকা ফেরত দিয়ে একমাত্র মেয়েকে ফিরিয়ে আনেন। মায়ের এই ভালবাসার একমাত্র মেয়ের বয়স এখন মাত্র ৮ মাস। পরম মমতায় মেয়েকে নিয়ে সাথী বেগমের দিন কাটছে এখন রাস্তায় রাস্তায়।
মেয়েকে সাথে নিয়ে0 খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ভিক্ষা করেন সাথী বেগম। বিষয়টি নজরে আসে ‘স্বপ্ন ফেরিওয়ালা’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের। মা ও মেয়ের চিকিৎসার্থে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছে সংগঠনটি।
সাথী বেগমের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের সাথী বেগমের মা দ্বিতীয় বিয়ে করলে তার বাবাও দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপরই সৎ মায়ের সংসারে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হতে থাকেন তিনি। এক পর্যায়ে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বলাকইড় উত্তরপাড়া গ্রামের মুরাদ মোল্ল্যার সাথে বিয়ে দেওয়া হয় তাকে। কয়েক মাস সুখের সংসার হলেও এরপর সাথী বেগমের উপর নেমে আসে নির্যাতন। মুখ বুঝে নির্যাতন সহ্য করার বছর খানের পর তাদের সংসার আলোকিত করে আসে ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান।
এরই মধ্যে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন স্বামী মুরাদ মোল্ল্যা। নেশার টাকা জোগাড় করতে না পারায় চার মাস বয়সী কন্যা সন্তানকেই মাত্র দুই হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন পাষণ্ড নেশাগ্রস্ত বাবা মুরাদ মোল্লা। এরপর বিভিন্নভাবে খোঁজ খবর নিয়ে মাসখানেক আগে নিজের রক্ত বিক্রি করে দুই হাজার টাকা ফেরত দিয়ে একমাত্র মেয়েকে ফিরিয়ে আনে পরম মমতাময়ী মা সাথী বেগম।
মাদকসেবী ও বহু বিবাহ করা স্বামী নাড়িছেড়া সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ায় তার সাথে সম্পর্কের ছেদ টানেন সাথী বেগম। ফলে বাবার বাড়ি এবং স্বামীর বাড়ি কোথায় ঠাঁই হয় না তার। ভালবাসার একমাত্র মেয়েকে সাথে নিয়ে রাস্তায় ঠাঁই হলে। ঘুরে বেড়ান এদিক-সেদিকে। তবে মাস খানেক আগে সাথী বেগমের পায়ের উপর দিয়ে রিক্সার চাকা উঠে গেলে তা পা ভেঙে যায়। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে না পারায় পা বেঁকে গেছে তার। সার্জারী করানো জরুরি হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে পরিবার পাশে না থাকায় হাসপাতালে নার্স ও অন্যান্য রোগীর স্বজনরাই যেন তার আপন হয়ে উঠেছে। মা আর মেয়েকে তারাই দেখাশোনা করছেন।
ভাঙা পা নিয়ে হাসপাতারের বিছানায় শুয়ে সাথী বেগম বলেন, “যে স্বামী আমার সন্তানকে বিক্রি করে দিতে পারে তার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। ভিক্ষা করেই যদি খেতে হয় তাহলে স্বামী দিয়ে কী হবে? মেয়েকে এভাবেই বাঁচাব। আমি এখন রাস্তার মানুষ।”
স্বামীর বিচার চান কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সাথী বেগম বলেন, “বিচার চেয়ে কী হবে? জানোয়ারকে শাস্তি দিয়ে কি মানুষ বানানো যায়? তাকে কোথায় খুঁজে পাবেন যে শাস্তি দিবেন? আমি বিচার চাই না, আমি নিরাপদ একটা আশ্রয় চাই। সেখানে মেয়েকে নিয়ে নিরাপদে থেকে কাজ করে মেয়েকে মানুষের মত মানুষ করতে পারব।”
‘স্বপ্ন ফেরিওয়ালা’ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম বলেন, “সাথী বেগম পা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সন্তান কোলে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করছে। এই দৃশ্য দেখে এই অবস্থার কথা জানতে চাই। তখন সাথী বেগম তার জীবনের করুণ কাহিনী আমার কাছে বলেন। বিষয়টি সংগঠনকে জানালে সকলের সিদ্ধান্ত নিয়ে সাথী বেগমের চিকিৎসার জন্য আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করি এবং চিকিৎসা করতে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তার দেখানো হয়েছে। ডাক্তার সাথীকে ভর্তি করেছেন। অপারেশন করলে রোগী সুস্থ হয়ে যাবেন বলে আমাদের জানান। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে চিকিৎসার খরচ বহন করতে প্রস্তুতি নিয়েছি।”
সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রহমান মানিক বলেন, “সাথী বেগম নিজেই একজন বাচ্চা। তার কোলে রয়েছে আরো একটি বাচ্চা। আমরা তার চিকিৎসা করাছি। তবে তার দাবী একটি নিরাপদ আশ্রয়ের। আমরা চেষ্টা করব তাকে একটি নিরাপদ আশ্রয় দিতে।”
মমতাময়ী এ মায়ের চিকিৎসার জন্য সমাজের বৃত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা.
ঢাকা/বাদল/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর একম ত র ম য় গ প লগঞ জ স গঠন র ন র পদ ব গম র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পর ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বেরোবি
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নিয়ে অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে শিক্ষার্থীদের। গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গেজেট প্রকাশ হয়ছে গঠনতন্ত্র।
এরই মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর হতে যাচ্ছে কাঙিক্ষত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ব্যাকসু নির্বাচন। তবে এর জন্য আমরণ অনশন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মসুচিই পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
‘আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে চাই’
বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের মডেল প্রদর্শন
জুলাই অভ্যুত্থান পর গণরুম ও গেস্ট রুমের যে সাংস্কৃতি ছিল, তা এখন বন্ধ হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কমকাণ্ডে সামিল হওয়াও বাধ্যতামুলক নয়।
তাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ছাত্র সংসদ। যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বেরোবির বিধিমালা অনুযায়ী, ১৩টি পদে সরাসরি নির্বাচন ও হল সংসদে নয়টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সব ধরনের কথা তুলে ধরতে পারবেন।
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখর রায় বলেন, “সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও লেজুরবিত্তিক রাজনীতি ব্যতীত একটি নির্বাচন হোক। যোগ্য, আদর্শ, উত্তম চরিত্র ও মনের প্রার্থী বিজয়ী হোক। নির্বাচিত হয়ে তারা হয়ে উঠুক বেরোবির একেকজন যোগ্য প্রতিনিধি। তারা ন্যায়ের পক্ষে থাকুক । তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাক বেরোবি।”
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদ সাজিদ বলেন, “ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দাবি, অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার প্রধান মঞ্চ। এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠ পৌঁছে যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে। কিন্তু এজন্য সংসদকে দলীয় প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। প্রকৃত অর্থে ছাত্র সংসদ তখনই সফল, যখন তা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের সমস্যার সমাধান ও কল্যাণে কাজ করে।”
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন ছাত্র সংসদ চাই, যেখানে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে এবং সব শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হয়ে কাজ করবে। সবমিলিয়ে সবার বিশ্বস্ত জায়গা হবে এই ছাত্র সংসদ।”
ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী