যখন বৈশাখের সকালটা কুয়াশা সরিয়ে রঙের খেলা শুরু করে, তখনই যেন এ অঞ্চলের বাংলাভাষী মানুষের প্রাণ জেগে ওঠে। ঢোলের শব্দে, পান্তা-ইলিশের গন্ধে, লাল-সাদা শাড়ির ছটায় বাংলা নববর্ষ হয়ে ওঠে এক উজ্জ্বল, আনন্দঘন, বর্ণিল দিন।  
কিন্তু এই উল্লাস-আনন্দ কি কেবল অভিজাত সৌরভে মোড়ানো? নাকি এর পেছনে আছে দীর্ঘ এক সাংস্কৃতিক অভিযাত্রা—রাজনীতি, প্রতিরোধ আর আত্মপরিচয়ের সন্ধান?

বাংলা নববর্ষের সূচনা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে। কেউ বলেন, মোগল সম্রাট আকবর রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে হিজরি ও সৌর বর্ষের মিলনে ‘ফসলি সন’ চালু করেছিলেন।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, সম্রাট আকবর তৎকালীন খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে উপদেষ্টা ফতেউল্লা সিরাজীকে নতুন পঞ্জিকা তৈরি করার দায়িত্ব দেন। ফতেউল্লা সিরাজী ছিলেন সম্রাট আকবরের দরবারের একজন বিদ্বান আলিম ও প্রশাসনিক উপদেষ্টা। বাংলা সনের সংস্কারের দায়িত্ব পেয়ে তিনি স্থানীয় সৌর সন ও আরবি হিজরি সন মিলিয়ে একটি নতুন পঞ্জিকা তৈরি করেন। তাঁর উদ্যোগেই প্রবর্তিত এই বর্ষপঞ্জি থেকেই বর্তমান বাংলা সনের সূচনা, যা শুরু হয় ১৫৮৪ সালে সম্রাট আকবরের শাসনামলে।

কেউ কেউ আবার মনে করেন, এর শিকড় আরও প্রাচীন বিক্রমি সনে, যার প্রবর্তক ছিলেন রাজা বিক্রমাদিত্য। এই সন খ্রিষ্টপূর্ব ৫৭ সালে শুরু হয়েছিল এবং উত্তর ভারতে এখনো ব্যবহৃত হয়।

আবার অনেকে মনে করেন, বাংলার প্রথম স্বাধীন শাসক রাজা শশাঙ্ক নিজ প্রশাসনিক প্রয়োজনে একটি বর্ষপঞ্জি চালু করেন। ইতিহাসবিদেরা মনে করেন, শশাঙ্ক তাঁর রাজ্যাভিষেকের সময় আনুমানিক ৬১২ খ্রিষ্টাব্দ থেকেই সনটি চালু করেন।

যদিও বিক্রম সন এবং রাজা শশাঙ্কের বাংলা সন চালুর বিষয়ে মতভেদ ও বিতর্ক রয়েছে এবং এ দুজনের পক্ষে নির্দিষ্ট প্রমাণও সীমিত, আকবরের পক্ষেই জোরালো প্রমাণ পাওয়া যায়। তবুও বিক্রম সন ও শশাঙ্ক বাংলা পঞ্জিকার ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

তবে একটি ব্যাপার স্পষ্ট—পয়লা বৈশাখ এই দিনটি যুগে যুগে রূপ বদলেছে, অর্থও বদলেছে।  

পয়লা বৈশাখে নতুন বছরের শুরুতে কৃষকদের সব খাজনা পরিশোধ করতে হতো। এদিন জমিদারেরা তাঁদের প্রজাদের মিষ্টিমুখ করালেও উৎসবটি ছিল মূলত জমিদার ও অভিজাত শ্রেণির; সাধারণ মানুষের জন্য এটি কোনো উৎসব ছিল না। জমিদারদের হালখাতার অনুষ্ঠানে মিষ্টিমুখ মানে ছিল কিছুটা রেহাই, কিন্তু সে রেহাই সম্মানজনক ছিল না—ছিল একপেশে দয়ার দান। শ্রমজীবী মানুষ কখনোই ইলিশ-পান্তা দিয়ে নববর্ষ উদ্‌যাপন করত না। তারা করত রোদে-ঘামে, ধানের ভাতে জীবনের উৎসব।

১৯৮৯ সালের কথা। তখনকার স্বৈরাচার এরশাদ শাসনের ছায়া পেরিয়ে একঝাঁক সাহসী ছাত্র-শিল্পী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের নেতৃত্বে রাজপথে বেরিয়ে এল এক প্রতীকী আনন্দের বহর—আনন্দ শোভাযাত্রা। বাঘ-সিংহ, মুখোশ, পাখি আর হাতি—সব মিলিয়ে যেন এক জীবন্ত ক্যানভাস। প্রতিটি রং, প্রতিটি রূপ ছিল প্রতিবাদের ভাষা। তারা বলল, ‘আমরা কে?’ আর উত্তরে তুলে ধরল, ‘আমরা প্রতিবাদী, আমরা সংস্কৃতির আলোয় পথ খুঁজি।’ তাদের প্রতিবাদের সেই রঙিন বহর ছিল নিছক শোভাযাত্রা নয়, ছিল এক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে নান্দনিক প্রতিরোধ।

সেই মুহূর্ত থেকেই পয়লা বৈশাখ হয়ে ওঠে সংস্কৃতির শক্তিতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দিন। এবং আজ, অনেক বছর পর, ২০২৫ সালের নববর্ষ হতে যাচ্ছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাবর্তন—প্রথমবারের মতো বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন হবে এক ফ্যাসিস্ট সরকার, শেখ হাসিনার দমন-পীড়নমুক্ত পরিবেশে। দুনিয়া কাঁপানো জুলাই বিপ্লব এনে দিয়েছে আমাদের সেই পরিবেশ।

এরশাদ পতনের সময়কার মতো যেভাবে নববর্ষ হয়েছিল মুক্তির প্রতীক, এবারও নববর্ষ ফিরে আসছে মানুষের দখলে—সংস্কৃতির স্বাধীন প্রকাশ আর রাজনৈতিক মুক্তচিন্তার মঞ্চ হয়ে। ভবিষ্যৎ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ উৎসব হিসেবে।

এই আনন্দ শোভাযাত্রাই পরে হয়ে ওঠে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ১৯৯৬ সালে ‘মঙ্গল’ শব্দটি যুক্ত হয়। নামের এই পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তা এড়িয়ে গিয়ে বলা যায়—এই পদযাত্রা এখন এক কল্যাণবোধের প্রতীক। ২০১৬ সালে ইউনেসকো এটিকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয়। বিশ্ব বলল, এটি শুধুই উৎসব নয়, এটি এক ‘কল্যাণচিন্তার পদযাত্রা’।

আজকাল পয়লা বৈশাখ মানেই পান্তা-ইলিশ। অথচ ইতিহাস বলে, কৃষক-প্রজাদের কাছে এই দিনটি ছিল খাজনা দেওয়ার আতঙ্কের দিন। পয়লা বৈশাখে নতুন বছরের শুরুতে কৃষকদের সব খাজনা পরিশোধ করতে হতো। এদিন জমিদারেরা তাঁদের প্রজাদের মিষ্টিমুখ করালেও উৎসবটি ছিল মূলত জমিদার ও অভিজাত শ্রেণির; সাধারণ মানুষের জন্য এটি কোনো উৎসব ছিল না। জমিদারদের হালখাতার অনুষ্ঠানে মিষ্টিমুখ মানে ছিল কিছুটা রেহাই, কিন্তু সে রেহাই সম্মানজনক ছিল না—ছিল একপেশে দয়ার দান। শ্রমজীবী মানুষ কখনোই ইলিশ-পান্তা দিয়ে নববর্ষ উদ্‌যাপন করত না। তারা করত রোদে-ঘামে, ধানের ভাতে জীবনের উৎসব।

ফরাসি দার্শনিক জঁ বদ্রিয়ার বলেছিলেন, ‘আধুনিক সমাজে অনেক কিছুই বাস্তব নয়—তাকে বাস্তবের চেয়ে উজ্জ্বলতর এক “হাইপার রিয়েলিটি”তে রূপান্তরিত করা হয়।’ পয়লা বৈশাখও কি এমনই এক রূপান্তর? যেখানে প্রতীক থাকে, ইতিহাস হারিয়ে যায়?

বাংলার ইতিহাস এই নববর্ষে লুকিয়ে আছে। রাজা শশাঙ্ক ও সেন আমলে বৌদ্ধ নিপীড়ন, চর্যাপদের ম্লান বিদায়, খিলজির বিজয়ের পর বাংলা ভাষার বিকাশ—সবই যেন এক সাংস্কৃতিক সহাবস্থানের সূচনা করে। এই সহাবস্থানে গড়ে ওঠে বৈচিত্র্যময় বাংলা সাহিত্য, সংগীত ও চিত্রকলার ভিত্তি।

পশ্চিম ও পূর্ব বাংলার ভাষাভাষী, হিন্দু ও মুসলমান—সবাই ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে বড় হলেও এই দিনে তারা এক সাংস্কৃতিক সংলাপে মিলিত হয়।
বাঙালির নববর্ষ কেবল ‘ঐতিহ্য’ নয়। এটি ইতিহাসের টানাপোড়েন, শ্রেণি বিভাজনের প্রতিবাদ এবং আত্মপরিচয়ের এক রঙিন আলেখ্য।

আজকের দিনে পয়লা বৈশাখ অনেকের কাছে শুধুই সেলফি-সেশন, গান-নাচের সময়। কিন্তু এর পেছনে লুকিয়ে থাকা গল্পগুলো জানাটাই আসল উদ্‌যাপন।

ঐতিহ্যকে বুঝে তার সম্মান করা—এটাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
সুতরাং প্রশ্ন উঠেই যায়—আপনি কোনটি উদ্‌যাপন করছেন? ঐতিহ্য, না হাইপার রিয়েলিটি?

জয়নাল আবেদীন শিশির যুগ্ম সদস্যসচিব, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)
[email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আকবর র নববর ষ আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’ আয়োজনের জন্য আর্থিক অনুদান চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। অনুদানের চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব সুপারিশ করেছেন; যার একটি কপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা ও বিতর্ক।

ঘটনাকে অনেকেই ‘চাঁদাবাজি’ বলে ফেইসবুকে সমালোচনা করেছেন। তবে বিষয়টিকে ‘ভয়াবহ মিডিয়া ট্রায়াল’ বলে অভিহিত করেছেন সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। তিনি জানান, অনেকেই তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করে। তাহলে যত প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয় সবই চাঁদাবাজি।

গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন আম্মার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী।

আরো পড়ুন:

‘ডাকসু হলো, রাকসু হলো, চাকসু কেন থেমে গেল’

আনাতোলিয়ান রোভার চ্যালেঞ্জে বিশ্বে তৃতীয় ইউআইইউ

ফেসবুকে অনুদান চাওয়ার চিঠির অনুলিপি দিয়ে অনেকেই লিখেছেন, ৭৬ লাখ টাকা তোলার জন্য ৭০ প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এই সাবেক সমন্বয়ক মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) তার ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, “দুই দিনের অনুষ্ঠানের জন্য ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকার অনুদানের জন্য একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। ২১ প্রতিষ্ঠান থেকে ৬৫ লাখ টাকার আর্থিক অনুদানের আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৪ প্রতিষ্ঠানে চিঠি পৌঁছানো হয়েছে।”

কোনো প্রতিষ্ঠানে ইংরেজিতে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, কোনোটিতে বাংলায়। চিঠির সঙ্গে অনুষ্ঠান এবং বাজেটের বিস্তারিত যুক্ত করে দেওয়া হয় বলে চিঠিতে লেখা রয়েছে।

বাংলায় করা একটি আবেদনে বলা হয়েছে, “রাজশাহীর গৌরবময় ইতিহাসে ৩৬ জুলাই একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনটি আমরা ‘জুলাই আন্দোলন’ হিসেবে স্মরণ করি, যেখানে বহু তরুণ শহীদ হয়েছিলেন এবং অনেকে আহত হয়েছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকারের সংগ্রামে। এই ঐতিহাসিক ঘটনার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা আয়োজন করতে যাচ্ছি ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’। এই উৎসবে রাজশাহীর শহীদ পরিবার, আহতদের পরিবার, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সম্মানিত সমন্বয়কবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও তরুণ প্রজন্মকে তাদের আত্মত্যাগের গল্প জানানো।”

আবেদনপত্রে সালাউদ্দিন আম্মার ছাড়াও সই করেছেন কেএসকে হৃদয়। তিনি ৩৬ জুলাই মুক্তির উৎসবের আয়োজক এবং ক্যাম্পাস বাউলিয়ানার পরিচালক ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা। গত ৯ জুলাই তাদের প্রস্তাবনায় সুপারিশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। তিনি লিখেছেন, ‘স্ট্রংলি রিকমেনডেড’।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাছে ২১ জুলাই একটি আবেদন করা হয়েছে। তারা ২৩ জুলাই ২ লাখ টাকা অনুমোদনও করেছে।

চিঠির বিষয়ে সাবেক সমন্বয়ক আম্মার বলেন, “রাবি প্রশাসনকে প্রস্তাব দেওয়ার পর তারা জানিয়েছিলেন, আর্থিক সহায়তা দিতে না পারলেও তারা অন্যান্য সহযোগিতা করবেন। এরপর উপাচার্যের সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সিটি করপোরেশনে আবেদন করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “নগর ভবনে শুধু আমরাই অনুদানের জন্য চিঠি দিয়েছি, তা নয়। বিভিন্ন বিভাগের প্রোগ্রাম আয়োজনের ক্ষেত্রেও সেখানে অনুদান চেয়ে থাকে। আমরা একটা প্রোগ্রাম আয়োজন করব, সেজন্য সিটি করপোরেশন বরাবর একটা অনুদান চেয়ে চিঠি দিয়েছি। সেই প্রোগ্রামের স্পন্সর হিসেবে আমরা তাদের লোগোটা ব্যবহার করব। আর এটাকে যদি কেউ চাঁদাবাজি বলে, তাহলে স্পন্সর নিয়ে যত প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয়, সবই চাঁদাবাজি।”

এদিকে, সাবেক এ সমন্বকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে সমালোচনা শুরু হলে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ‘আমার কিছু কথা ছিল’ শিরোনামে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন রাবির ছাত্র উপদেষ্টা ড. আমিরুল ইসলাম কনক।

পোস্টে তিনি লিখেছেন, “স্পন্সরশিপের সব টাকা একই প্রতিষ্ঠান দেয় না। সবাই কিছু করে দিলে একটা বড়ো এমাউন্ট হয়। আর্টসেলের মতো একটা টিমের জন্য খরচ, প্লেন ফেয়ার, আপ্যায়ন, শহীদ-আহতসহ ছাত্র-শিক্ষক-জনতা জুলাই যোদ্ধাদের উত্তরীয়, সম্মাননা, ক্রেস্ট, হল ভাড়া, ডেকোরেশন, আলোকসজ্জা, আল্পনা, ডিজিটাল মনিটর, সাউন্ড সিস্টেম. লেবার ও স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়া শিক্ষার্থীদের আপ্যায়ন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আপ্যায়ন, ট্রাভেলিং ফ্যাসিলিটির গাড়ী ভাড়া, হোটেল খরচ, চা-কফি-নাস্তা, অন্যান্য পারফরমারদের সম্মানী ও যাতায়াত খরচ সব মিলিয়ে সর্বকালের একটা মেগা বাজেটের প্রোগ্রামে কোটি টাকা খরচ হওয়া অস্বাভাবিক? যন্ত্রীসহ নানান লোকেদের সম্মানী যোগ করলে আরও বাড়ে।”

তিনি আরো লিখেছেন, “আর যেহেতু মিডিয়া পার্টনারের অনেকে মিলে পৃথক পৃথক এমাউন্ট দেয়, কাজেই টাকা সংগ্রহ করে পাওনাদারকে পরিশোধের যে প্যারা তা ভুক্তভোগীই জানে। নিয়ম মেনে অন্যান্য প্রোগ্রামের আয়োজকদের জন্য যে খসড়া বাজেট ও আবেদন, তেমন দেখে আমি নিজেও সুপারিশ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটির সুপারিশ না থাকলে কেউ টাকা দিতে আস্থা পায় না। তাহলে এটাকে চাঁদা বলে প্রচার করা অনৈতিক।”

ছাত্র উপদেষ্টা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে বড়ো বড়ো কনসার্ট ও প্রোগ্রাম হয় স্পন্সরশিপ নিয়েই। একেকজন একেকটি পার্ট হিসেবে টাকা দেন। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর আগে বিবেচনা করা উচিত ছিল। রাবিতে স্মরণকালের একটা মেগা বাজেটের প্রোগ্রাম করার কথা ভবিষ্যতে কেউ করতে উৎসাহ পাবে কি না সংশয় রয়েছে। আর সমন্বয়কের চাঁদাবাজি নামক প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে জুলাই অর্জনকেই প্রশ্নের মুখে ফেলা হলো। নিজের গায়ে থুতু ফেলে যারা চাঁটছে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে।”

এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। তবে তিনি তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, “রেকোমেন্ডেশন চেয়েছে, কিন্তু পায়নি- এমন মনে করতে পারি না। আমি মনে করি, কো-কারিকুলার, এক্সট্রা-কারিকুলার, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য আমাদের ছাত্র-ছাত্রিরা যে উদ্যোগ নেবে, তাতে আমার দিক থেকে সহযোগিতা থাকা প্রয়োজন। এটা আমি শুরু থেকেই করে আসছি।”

তিনি আরো বলেন, “আজ ঠিক এই ধরনের একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সোর্স থেকে একের পর এক আমাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে। আমি একদম প্রথম দিন থেকে যেভাবে এই সমস্ত উদ্যোগের সাথে ছিলাম, সেভাবেই থাকতে চাই। কিন্তু পরিবেশ এতটাই বিষাক্ত যে, এরপর যেকোনো উদ্যোগে সাহায্য করার আগে আমাকে ১০ বার ভাবতে হবে।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাইয়ের ১১ নাটক নিয়ে শিল্পকলায় উৎসব
  • ভৌতিক গল্প নিয়ে কানাডায় নুহাশ
  • রাউজানে উত্তেজনা থামেনি, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বিএনপির দুই পক্ষের
  • তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন
  • থমথমে পরিস্থিতিতে এক পক্ষের বিক্ষোভের ডাক
  • চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা
  • রাউজানে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত, গিয়াস কাদেরের পদ স্থগিত
  • রাউজানে বিএনপি নেতা গোলাম আকবরের গাড়িবহরে হামলা, আহত ২০
  • রাউজানে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ–গুলি, উত্তর জেলা আহ্বায়কসহ আহত ২০
  • আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার