অযত্নে ভাসানীর স্মৃতিচিহ্ন, বিলুপ্তপ্রায় প্রতিষ্ঠানগুলোও
Published: 17th, April 2025 GMT
বাংলাদেশ ও দেশ ভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের অন্যতম ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। অথচ সরকার বদলের কালপরিক্রমায় মাওলানা ভাসানীর প্রতিষ্ঠিত অনেক স্মৃতিচিহ্ন নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে। বিলুপ্ত হয়েছে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানও এবং বাকিগুলো যথাযথ পরিচর্যা ও সংরক্ষণের অভাবে ক্ষয়ে যাচ্ছে।
টাংগাইলের সন্তোষের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যে মাওলানা ভাসানীর স্মৃতি বিজরিত এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকটিই আজ বিলুপ্ত। বাকিগুলো বিলুপ্তির পথে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাওলানা ভাসানীর স্মৃতি বিজড়িত জিনিসগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে না। মাও সেতুং প্রদত্ত ঐতিহাসিক ট্রাক্টর রুমটির দরজা ভাঙ্গা। ফলে যে কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারে। মাওলানা ভাসানীর রোপণ করা অধিকাংশ গাছ কয়েক বছর আগেই কেটে ফেলা হয়েছে।
ভাসানী পরিষদের সভাপতি আজাদ খান ভাসানীর অভিযোগ, স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারগুলোর অবহেলায় মাওলানা ভাসানীর প্রতিষ্ঠিত ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ১২টি দাতব্য প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং বাকিগুলোর অবস্থাও বেশ শোচনীয়। তার জীবদ্দশায় বেশ কয়েকটি দাতব্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, রোপণ করেছিলেন নানা রকমের দেশি গাছ। সেগুলো এখন নেই বললেই চলে।
ভাসানী পরিষদের অভিযোগ, কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই রাস্তা প্রশস্ত করার অযুহাত দেখিয়ে মাওলানা ভাসানীর রোপণ করা পুরনো সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে কয়েক বছর আগে। ১৯৭০ সালে নির্মিত ৫০০ মানুষের ধারণক্ষমতার দরবার হল, যেখানে ভাসানী বক্তৃতা দিতেন। সেটা ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে অবহেলায়। এই দরবার হলে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ডাকে প্রথম সর্বদলীয় সম্মেলন হয় ১৯৭১ সালের ৯ জানুয়ারি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঐতিহাসিক এই হলটি পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। মৃত্যুর পর মাওলানা ভাসানীকে এই দরবার হলের পাশে শায়িত করা হয়। বর্তমানে দরবার হলের ভিতরে কাঠের স্তম্ভগুলোও ক্ষয় হয়ে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রয়েছে কাঠামোটিও। হলের পাশে স্থাপিত ভাসানী জাদুঘরে সংরক্ষিত ভাসানী স্মারকগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটির অবস্থা শোচনীয়। মৃত্যুর আগে স্বাধীন বাংলাদেশে ভাসানী সন্তোষ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করেন।
ভাসানীর মৃত্যুর পর ১৯৮৩ সালে সরকার এ আইন প্রণয়ন করে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে এবং তার সম্পত্তি দেখাশুনা ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য সব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য মেয়াদ নির্ধারণ করে। কিন্তু দীর্ঘ ব্যবধানের পর অবশেষে ১৯৯৯ সালে তৎকালীন সরকার সন্তোষ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান করে।
তবে মাওলানা ভাসানীর অনুসারীদের অভিযোগ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ট্রাস্টি বোর্ড সমঝোতা স্মারকের শর্তাবলীর সঙ্গে অবহেলা করছে। পাশাপাশি আর্থিক বরাদ্দ ও জনবল সংকটের কারণে অন্যান্য সহযোগী সংস্থার কার্যক্রমও কার্যত বন্ধ। একের পর এক সরকারের ট্রাস্টি বোর্ড সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার পর মাওলানা ভাসানীর প্রতিষ্ঠিত ২৫ টি শিক্ষা ও অন্যন্যা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২টি ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এটাকে ইতিহাস থেকে মাওলানা ভাসানীর স্বপ্ন, কর্ম ও স্মৃতি মুছে ফেলার অংশ বলেও মনে করছেন তারা।
ভাসানী পরিষদের সভাপতি আজাদ খান ভাসানী বলেন, “মাওলানা ভাসানীর শেষ একটি স্বপ্ন ছিল সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি এই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় করেছিলেন কাগমারী পরগনা খ্যাত সন্তোষের এই পূণ্য ভূমিতে। তিনি জীবিত থাকাকালে এখানে অনেকগুলো প্রকল্প গ্রহণকরেছিলেন। প্রায় ২৫টার মতো প্রতিষ্ঠান তিনি রেখে গিয়েছেন। যার মধ্যে ১২টি হারিয়ে গেছে ক্যাম্পাস থেকে। আর বাকিগুলো খুব ধুকে ধুকে চলছে এবং অনেকগুলো ধ্বংসের পথে।”
তিনি বলেন, “মাওলানা ভাসানী তার কর্ম ও স্মৃতির মধ্যে বেঁচে আছেন। তার স্মৃতিকর্মগুলোর মধ্যে যেগুলো ধ্বংসের হয়ে গেছে, সেগুলো আবার নতুনভাবে তৈরি করা এবং যেগুলো রয়েছে, সেগুলো আরো ভালোভাবে সংরক্ষণ ও গতিশীল করার জন্য সরকার এবং দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।”
তিনি আরো বলেন, “মাওলানা ভাসানী সারাটা জীবন মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছেন। তিনি যে লড়াই সংগ্রাম অসমাপ্ত রেখে গেছেন, সেটা ২০২৪ এর গণঅভূত্থানের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। মাওলানা ভাসানীর স্বপ্ন ছিল, শোষণ ও বৈষম্যহীন একটি বাংলাদেশ সারা পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এমন একটি বাংলাদেশ আগামীর প্রজন্ম বাস্তবায়ন করবে বলে আমার বিশ্বাস।”
মাওলানা ভাসানীর স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণের ব্যাপারে মাভাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড.
তিনি বলেন, “আমি থাকি বা না থাকি, ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার স্মৃতিফলক, স্মৃতিচিহ্ন সবগুলো সংরক্ষিত থাকুক- সেটা মনে প্রাণে চাই। এর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারবে, মাওলানা ভাসানী একজন আদর্শ পুরুষ। তার ন্যায়-নিষ্ঠতা, মজলুমের প্রতি দরদ, সংগ্রামী জীবন, তার ভিতরের স্প্রিড, আধ্যাত্মিকতা- সবকিছু মানুষ ফলো করে উদ্বুদ্ধ হোক, এটা আমি চাই। এছাড়া আমি চাই, আমাদের নতুন প্রজন্ম জ্ঞান-বিজ্ঞানের পাশাপাশি চারিত্রিক দিক দিয়ে ভাসানীর মত বলিষ্ঠ হবে।”
চীনের মাও সেতুং মাওলানা ভাসানীকে যে ট্রাক্টরটি উপহার দিয়েছিলেন কক্ষটির দরজা ভাঙা। ফলে যে কেউ প্রবেশ করতে পারবে অনায়াসেই৷
ঢাকা/আবিদ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ছ ল ন সরক র ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
জনতার প্রত্যাশা পরবর্তী কর্মপরিকল্পনায় কাজে লাগাতে চাই : মাসুদুজ্জামান
নারায়ণগঞ্জের জনগণের প্রত্যাশা, অভিজ্ঞতা ও উন্নয়নমূলক চাহিদাকে কেন্দ্র করে পরিচালিত “মাসুদুজ্জামানের প্রত্যাশার ক্যানভাস” ৪ দিন ব্যাপী কার্যক্রমের সমাপনী অনুষ্ঠান বুধবার সকালে চাষাড়া শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী, বিশিষ্ট সমাজসেবী, ও ক্রীড়ানুরাগী মাসুদুজ্জামান। বিগত চার দিন যাবৎ সদর ও বন্দরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, সরকারি তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারী হাজী ইব্রাহীম আলমচান স্কুল এন্ড কলেজ ও মদনপুর নাজিম উদ্দিন ভূইয়া কলেজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দিনব্যাপী জনমত গ্রহণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
যেখানে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন এবং মাদক, যানযট, ছিনতাই ও সন্ত্রাস-সহ শিক্ষা, পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা, যুব উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও স্থানীয় সেবা–ব্যবস্থা বিষয়ে প্রায় ২,০০০ মানুষ তাদের প্রত্যাশা ও মতামত লিখিতভাবে ক্যানভাসে তুলে ধরেন।
আজকের সমাপনী অনুষ্ঠানে মাসুদুজ্জামান বলেন, “নারায়ণগঞ্জের মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা জানাই আমাদের প্রকৃত লক্ষ্য। যে পরিবর্তন মানুষ দেখতে চায়, তাদের কাছ থেকেই তা সরাসরি জানা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি জানান, গত চারদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে পরিচালিত “জনতার প্রত্যাশার ক্যানভাস” কার্যক্রমে সংগ্রহ করা সব লিখিত মতামত ইতোমধ্যে নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং এগুলো ভবিষ্যতের পরিকল্পনা, গবেষণা ও নীতি–প্রস্তাবনার ভিত্তি হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অবকাঠামো, সড়কব্যবস্থা, নগরসেবা ও স্থানীয় সুযোগ–সুবিধার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অনেক সময় নাগরিকের প্রকৃত চাহিদা পরিকল্পনায় প্রতিফলিত হয় না, যার ফলে অসামঞ্জস্যপূর্ণ নকশা, এবং উন্নয়ন অবকাঠামোয় সীমাবদ্ধতা দেখা দেয় যা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো নারায়ণগঞ্জেও এমন উদাহরণ রয়েছে, যেখানে মানুষের বাস্তব সমস্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকায় বিভিন্ন প্রকল্প টেকসই হয়নি বা সাধারণ মানুষের উপকারে আসেনি।
জনসাধারণের মতামতের গুরুত্ব আজ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আমরা বিশ্বাস করি নাগরিকদের প্রত্যাশা, অভিজ্ঞতা ও বাস্তব সমস্যাকে ভিত্তি করে টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনবান্ধব উন্নয়নের পথ তৈরি হয়।
এই উদ্যোগে মানুষ সরাসরি লিখিতভাবে জানিয়েছেন তারা কোন পরিবর্তন চান, কোন সমস্যার সমাধান জরুরি এবং স্থানীয় উন্নয়ন নিয়ে তাদের অভিমত কী। সব মতামত অগ্রাধিকার অনুযায়ী শ্রেণিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করা হয়েছে, যা পরবর্তী কর্মপরিকল্পনার জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজে লাগাতে চাই।
আজকের আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দরের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ।
জনতার প্রত্যাশার ক্যানভাস” নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য একটি উন্মুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক প্ল্যাটফর্মের ভূমিকা পালন করেছে, যেখানে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ স্বাধীনভাবে তাঁদের চাহিদা, সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন।
সংগৃহীত এই লিখিত মতামতই নারায়ণগঞ্জের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন–অগ্রাধিকার নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হবে— মনটাই বিশ্বাস করেন নারায়ণগঞ্জের সাধারন জনগণ।