ইকুয়েডরে মোরগ লড়াইয়ের সময় সেনাবাহিনীর সাজে বন্দুকধারীদের গুলি, নিহত ১২
Published: 20th, April 2025 GMT
লাতিন আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরে মোরগ লড়াইয়ের আয়োজনে বন্দুকধারীদের গুলিতে ১২ জন নিহত হয়েছেন। সামরিক বাহিনীর ভুয়া সাজপোশাকে ছিলেন ওই বন্দুকধারীরা। গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটির উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলে মানাবি প্রদেশের লা ভ্যালেন্সিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গত শুক্রবার তারা মানাবি থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার অভিযানের সময় অস্ত্র এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নকল পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে। গুলির ঘটনায় একটি ফৌজদারি তদন্ত শুরু করেছে প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, মোরগ লড়াইয়ের আয়োজনস্থলে ঢুকে বন্দুকধারীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকেন। এ সময় উপস্থিত দর্শনার্থীরা প্রাণ বাঁচনোর চেষ্টা করেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হামলাকারীরা একটি অপরাধী চক্রের সদস্য। তাঁদের প্রতিপক্ষের সদস্যরা মোরগ লড়াইয়ের আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন।
ইকুয়েডরে প্রায় ২০টি অপরাধী চক্র সক্রিয় আছে বলে মনে করা হয়। দেশটির প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া বলেছেন, ইকুয়েডরের বিভিন্ন বন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ কোকেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে পাঠানো হয়। এই কোকেন ইকুয়েডরে আসে প্রতিবেশী দেশ কলম্বিয়া ও পেরু থেকে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অপ্রত্যাশিত কিছু পেলে পালনীয় ৫টি আদব
আল্লাহ তাআলা মানুষকে নানাভাবে পরীক্ষা করেন। কখনো কষ্ট দিয়ে, আবার কখনো অপ্রত্যাশিত ভালো দিয়ে। মানুষের পরিকল্পনার বাইরে যে সুখ হঠাৎ নেমে আসে, তা শুধু নিয়ামত নয়; বরং আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ।
এ নিয়ামত আসে কোনো ঘোষণা ছাড়াই, কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই। তবু এটি মুমিনের অন্তরে আনন্দের বাতাস বইয়ে দেয়।
তবে এ নিয়ামত পেয়েই মানুষ যদি ভুল পথে হাঁটে কিংবা অহংকারে ভেসে যায়, তাহলে তা বরকত হারাতে পারে। এ কারণে আল্লাহর অপ্রত্যাশিত নিয়ামত এলে কিছু বিশেষ আদব মানা জরুরি। এতে নিয়ামত স্থায়ী হয়, হৃদয় নরম হয় এবং বান্দা আল্লাহর আরও সান্নিধ্য লাভ করে।
হঠাৎ পাওয়া সুখ মানুষকে বিভোর ও বিস্মিত করে তোলে। এমন সময় মুমিনের প্রথম ও প্রধান প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত, নিশ্বাসের সঙ্গে শোকরের বহিঃপ্রকাশ।১. তাৎক্ষণিক শোকর আদায়হঠাৎ পাওয়া সুখ মানুষকে বিভোর ও বিস্মিত করে তোলে। এমন সময় মুমিনের প্রথম ও প্রধান প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত, নিশ্বাসের সঙ্গে শোকরের বহিঃপ্রকাশ। এটি কেবল একবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলার মাধ্যমে হতে পারে।
আরও পড়ুনঅবসরে ইবাদত মুমিনের নিয়ামত১০ মার্চ ২০২৩আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে অবশ্যই আমি তা বাড়িয়ে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহলে (জেনে রাখো) আমার শাস্তি খুবই ভয়াবহ।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৭)
এ শোকর কেবল উচ্চারণ নয়, হৃদয়ের গভীর তৃপ্তি, নরম ভাব এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার স্রোত। হঠাৎ কোনো সমস্যার সমাধান, অপ্রত্যাশিত সুসংবাদ বা অচিন্তিত কল্যাণ—এসবের পেছনে আল্লাহর অদৃশ্য রহমত কাজ করে। একটি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ সেই রহমতকে আরও বৃদ্ধি করে।
২. সঠিক ক্ষেত্রে নিয়ামতের ব্যবহারঅপ্রত্যাশিত সম্পদ, সুযোগ বা সুবিধা—এগুলো কখনো কখনো মানুষের ইমানের প্রকৃত মূল্যায়নের মাধ্যম।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিনে কোনো বান্দার কদম একটুও নড়বে না, যতক্ষণ সে পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে… এবং সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে; কীভাবে অর্জন করেছে এবং কোথায় তা ব্যয় করেছে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৪১৭)
নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না।কোরআন, সুরা নাহল, আয়াত: ২৩অর্থাৎ অনাহূত নিয়ামত শুধু সুখ নয়, এটি আমানতও। মুমিন সেই আমানতকে হালকাভাবে নেন না; বরং তা কল্যাণে ব্যয় করেন, নিজের প্রয়োজন পূরণে ব্যবহার করেন এবং অপচয় থেকে দূরে রাখেন।
৩. হৃদয়ে বিনয় স্থাপননিয়ামত যত বড়ই হোক, তা যেন মানুষকে আত্মম্ভরী না বানায়। কারণ, অহংকার নিয়ামতকে অল্প সময়েই নিভিয়ে দেয়। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ২৩)
মুমিন যখন অপ্রত্যাশিত ভালো পান, তখন তিনি যেন মনে রাখেন, এটি আমার যোগ্যতার ফল নয়; বরং আল্লাহর অনুগ্রহ মাত্র। এ ভাবনাই নিয়ামতের বরকতকে মজবুত করে।
আরও পড়ুনঅবসর সময় মুমিনের জীবনে নিয়ামত২৬ জুন ২০২০৪. সিজদায়ে শোকরসিজদায়ে শোকর কেবল মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতার প্রকাশই নয়, বরং এটি নবীজির সুন্নাহ অনুসরণের এক অনন্য নিদর্শন এবং তাঁর প্রতি গভীর ভালোবাসারও প্রতিফলন। আবু বাকরা (রা.) বলেছেন, ‘নবীজি (সা.) কোনো সুসংবাদ পাওয়া মাত্রই কৃতজ্ঞতায় সিজদায় লুটিয়ে পড়তেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২৭৭৪)
এ সিজদা হৃদয়কে নম্র করে, নিয়ামতের কদর বাড়ায় এবং আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতার বার্তা পৌঁছে দেয়। হঠাৎ পাওয়া কল্যাণ যদি মুমিনের হৃদয়কে সিজদায় না নিয়ে যায়, তবে সেটি কেবল উপভোগেই সীমিত থাকে, আধ্যাত্মিকতায় পৌঁছায় না।
হঠাৎ পাওয়া কল্যাণ যদি মুমিনের হৃদয়কে সিজদায় না নিয়ে যায়, তবে সেটি কেবল উপভোগেই সীমিত থাকে, আধ্যাত্মিকতায় পৌঁছায় না।৫. নিয়ামতের কথা সঠিক মানুষকে জানানোপ্রতিটি নিয়ামতের প্রতি হিংসুক থাকে। এ কারণে নিয়ামত ঘোষণা করার আদবও ইসলাম নির্ধারণ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই নিয়ামতপ্রাপ্তদের পেছনে অনেক হিংসুক থাকে, তাই তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্ক হও।’ (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৮/১৯৮)
অপরিকল্পিতভাবে সবাইকে নিয়ামতের কথা জানানো অনেক সময় নজর লাগার কারণ হতে পারে। ফলে নিয়ামত অমঙ্গল, বেবরকতি ও নানা ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়ে যেতে পারে। তাই নিয়ামত শেয়ার করার ক্ষেত্রেও বিচক্ষণতা জরুরি।
নিয়ামত শুধু সেসব মানুষকেই জানানো উচিত, যাঁরা সত্যিকার অর্থে শুভাকাঙ্ক্ষী, ঈর্ষামুক্ত ও বিশ্বস্ত।
রায়হান আল ইমরান : লেখক ও গবেষক
আরও পড়ুন‘হে প্রতিপালক, আপনার শোকর আদায়ের সামর্থ্য দিন’০৩ ডিসেম্বর ২০২৫