এক সপ্তাহে ৪০ মরদেহের ডিএনএ সংগ্রহ করল সিআইডি
Published: 14th, December 2025 GMT
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ অজ্ঞাতনামা ১১৪ জনের পরিচয় শনাক্তে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ব্যবস্থাপনায় মরদেহ উত্তোলনের কাজ চলছে। গত এক সপ্তাহে ৪০টি মরদেহ তোলা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী মরদেহের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। অজ্ঞাতনামা শহীদদের স্বজনদের সঙ্গে ডিএনএ নমুনা মিলিয়ে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা হবে।
আজ রোববার সন্ধ্যায় সিআইডির গণমাধ্যম শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ৭ ডিসেম্বর সকাল থেকে রাজধানীর রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থান থেকে এই মরদেহ উত্তোলন করা হচ্ছে। ঢাকা জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এ কাজে সহযোগিতা করছে।
সিআইডি বলছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার (ওএইচসিএইচআর) মাধ্যমে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফনডিব্রাইডার আর্জেন্টিনা থেকে ঢাকায় এসে পুরো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকেরাও এ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। কবর থেকে মরদেহ তোলার আগেই তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
সিআইডির গণমাধ্যম শাখার তথ্য অনুসারে, রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থান থেকে গত এক সপ্তাহে ৪০টি মরদেহ তোলা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ ডিসেম্বর ২টি, ৮ ডিসেম্বর ৪টি, ৯ ডিসেম্বর ৬টি, ১০ ডিসেম্বর ৬টি, ১১ ডিসেম্বর ৭টি, ১৩ ডিসেম্বর ৭টি এবং রোববার আরও ৮টি মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি অত্যন্ত শ্রমসাধ্য কাজ। আন্তর্জাতিক মিনেসোটা প্রটোকল সম্পূর্ণরূপে মেনেই কাজটি করা হচ্ছে। মরদেহ তোলার পর তার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ, ময়নাতদন্ত করে পুনরায় দাফন করা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী এসব মরদেহের ডিএনএ নমুনা, ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। এই কাজ চলমান থাকবে।’
সাতটি শহীদ পরিবারের ১১ স্বজন ডিএনএ নমুনা দিয়েছেননমুনা সংগ্রহের বিষয়ে জসীম উদ্দিন খান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পরিচয় জানতে সাতটি শহীদ পরিবারের ১১ জন স্বজন তাঁদের ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন। অজ্ঞাতনামা সব কটি মরদেহ তোলার পর তাঁদের ডিএনএ নমুনার সঙ্গে স্বজনদের নমুনা মিলিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করা হবে। তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করাই এখন আমাদের মূল কাজ।’
সিআইডির তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত জুলাইয়ে যাত্রাবাড়ী থেকে নিখোঁজ হওয়া সোহেল রানা (২৮), গোপীবাগ থেকে নিখোঁজ রফিকুল ইসলাম (৫০), উত্তরা থেকে নিখোঁজ মো.
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে যাঁরা শহীদ গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১১৪ জনের পরিচয় জানা যায়নি। অজ্ঞাতনামা এসব মরদেহ রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে গণকবর দেওয়া হয়েছিল। বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে লাশগুলো দাফন করেছিল।
সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, রায়েরবাজার কবরস্থানে তারা জুলাইয়ে ৮০ জনের ও আগস্টে ৩৪ জনের মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছিল।
এসব মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে গত ৪ আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পুলিশি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে আবেদনটি করেন মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক মাহিদুল ইসলাম।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ মরদ হ ত ল কবরস থ ন ড স ম বর ল ইসল ম স আইড র মরদ হ র রব জ র স গ রহ তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
আদিল একাই পিলখানার বাঙ্কার উড়িয়ে দিয়েছিলেন
আজিমপুর কলোনির ২৪/৩ রোডের দ্বিতল বাড়িটি ছিল আদিল খানদের বাড়ি। তার বাবার নাম আব্দুল গনি খান(বার এট ল) মায়ের নাম সেকান্দার জাহান। আদিল খান তখন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি ভারতে মেলাঘর থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করে ঢাকায় ফিরে আসেন। এসেই যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য যোগাড় করা শুরু করেন।
সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি মাদারটেক লিয়াকতের চাচাতো ভাই এর বাসা থেকে নৌকাযোগে ১২ জন এর একটি দল নিয়ে রওনা হন আগরতলা মেলাঘর এর উদ্দেশ্য। তিন চারদিন পর মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে সিএনবি রোডে পৌঁছান আদিল। সিএনবি রোডে পৌঁছে দেখেন শতশত লোক বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌকা নিয়ে এসে জমা হয়ে আছে। সবার নৌকার বাতি নেভানো, নদীর একটু উঁচুতে সিএনবি রোড। ভারতে যাওয়া জন্য মাত্র ১০/১২ ফুট রাস্তা- অতিক্রম করতে পারলেই পৌঁছে যাবে সীমান্তের ওপারে ভারতে। কিন্তু দুর্ভাগ্য ঘন ঘন পাকিস্তান সামরিক যান, সিএনবি রোড ধরে আসা যাওয়া করছে। লোকদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে, পাকিস্তানিরা খবর পেয়ে গেছে, কেউ বলছে বর্ডার বোধহয় সিল করে দিয়েছে। এ অবস্থায় কোথাও লুকিয়ে থাকার সুযোগ না পেয়ে অগত্যা তাদের ফিরতে হলো। আদিল ভাই ঢাকায় ফিরে যুবকদের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। এরপর জনমানুষের মধ্যে মিশে একের পর এক আক্রমণ-অপারেশন চালান।
আরো পড়ুন:
২২টি যুদ্ধের পর শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া
টাঙ্গাইল শত্রুমুক্ত হয় ১১ ডিসেম্বর
১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের চার তারিখ দিবাগত রাত।পবিত্র শবেবরাত রাতে আদিল ভাই একাই একটি দুঃসাহসী অভিযানের সিদ্ধান্ত নিলেন। আজিমপুর কবরস্থান থেকে আজিমপুর বেবী আইসক্রিম এর মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে ভিক্ষুক থালা হাতে বসে ছিলো দান খয়রাত পাওয়ার আশায় । লোকজন কবরস্থানমুখী- পবিত্র রজনীতে আত্মীয় স্বজনের কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে। তাদের সাথে মিশে গেলেন আদিল খান।পায়জামা-পাঞ্জাবী পরে গায়ে চাদর জড়িয়ে হাতে একটি বড় ঠোঙা নিয়ে কবরস্থানে প্রবেশ করলেন। আজিমপুর কবরস্থানের পেছনে ভাঙ্গা সীমানা প্রাচীরের পাশ দিয়ে তখনকার ইপিআর (বর্তমান বিজিপি) পিলখানা হেড কোয়ার্টার এর তিন নম্বর গেইট। ঢাকা নিউ মার্কেটের দুই নম্বর গেইট মাত্র ১৩/১৪ ফুট দূরে।
হাতের ঠোঙ্গা থেকে বের করে আনলেন ব্রিটিশ মেইড ১/২ পাউন্ডের একটি মাইন। মাইনের সেফটি পিন চিকন নাইলনের রশি দিয়ে এক মাথা বাঁধা ছিল। ১৫ ফুট রশির অপর প্রান্ত হাতের কব্জিতে বেঁধে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে ছুঁড়ে দিলেন দেয়ালের অপর দিকে পিলখানার বাঙ্কারে।
মাইনটা যখন বাঙ্কারের উপরে উঠে শূন্যে, তখন হাতের রশিতে টান পড়তেই মাইনের পিনটা খুলে গেলো।বাঙ্কারের উপরে মাইনটা ফাঁটল - প্রচন্ড শব্দ মনে হচ্ছিল আকাশ থেকে বাজ পড়ল। চারিদিকে শব্দের প্রতিধ্বনি - শোনা মাত্রই আদিল ছুটে পালালেন। উড়ে গিয়েছিলো পাক-বাহিনীর পিলখানার বাঙ্কার।
ঢাকা/লিপি