নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায় জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে কায়সার ইমরান ওরফে বাবুল (৫৯) নামের আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ভাই-ভাতিজারা পিটিয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার রাতে উপজেলার দুওজ ইউনিয়নের শ্রীরামপাশা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত কায়সার ইমরান শ্রীরামপাশা গ্রামের প্রয়াত সিদ্দিকুর রহমানের বড় ছেলে। তিনি দুওজ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক না পেয়ে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তবে পরাজিত হন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই রতন মিয়াকে পুলিশ আটক করেছে।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা, থানা-পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কায়সার ইমরান তাঁর ভাই রতন মিয়া ও কামাল মিয়ার ছেলেদের সঙ্গে যৌথভাবে একটি সেচপাম্প দিয়ে জমিতে পানি দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি কায়সারের বোরো খেতে তাঁর ভাতিজারা প্রয়োজনীয় পানি দিচ্ছিলেন না। এ ছাড়া সেচপাম্পের আয়ের অংশ কায়সারকে দেওয়া হতো না। এসব নিয়ে বেশ কয়েকবার তাঁদের সঙ্গে কায়সারের ঝগড়া হয়। এলাকার মানুষ এগুলো মীমাংসার চেষ্টাও করেন। গতকাল রাত পৌনে ৯টার দিকে এ নিয়ে কায়সার তাঁর ভাই-ভাতিজাদের সঙ্গে বাড়িতে আলোচনায় বসেন। এ সময় সেচপাম্পের পাশাপাশি পারিবারিক জমি নিয়েও উভয় পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ছোট ভাই রতন মিয়া ও ভাতিজা বাপ্পি মিয়া কায়সারের ওপর হামলা চালান। এরপর কায়সারকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন আটপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই রতন মিয়াকে আটক করে।

এ বিষয়ে জানতে নিহত ব্যক্তির অপর ভাই কামাল মিয়ার মুঠোফোন নম্বরে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কায়সার ইমরানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তাঁর ভাই–ভাতিজারা বাড়ি থেকে সটকে পড়েন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের আটকের চেষ্টা চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ ই রতন ম য়

এছাড়াও পড়ুন:

‘স্বপ্ন ছিল বুকে জড়িয়ে ধরার, এখন আশা দাফনটা যদি অন্তত করতে পারি’

সাদা রঙের দেয়াল ঘেরা সাদামাটা ছোট্ট একটি হলঘর। ডজনখানেক মা ও স্ত্রী চুপচাপ বসে আছেন সামনের সারিতে। বাবা, ভাই ও বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছেন পেছনের দিকে, দেয়াল ঘেঁষে। সবার চোখ স্থির ফিলিস্তিনের গাজার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের ওই কক্ষের একটি স্ক্রিনের দিকে। সেখানে দেখানো হচ্ছে পচে-গেলে যাওয়া মরদেহের ছবি। এসব দেহাবশেষের কোনো একটি হয়তো তাঁদেরই এক প্রিয়জনের।

গাজার স্থানীয় কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে এখানে এসেছে পরিবারগুলো। নিবিষ্টভাবে ছবিগুলো দেখছেন পরিবারের সদস্যরা। এ আশায় যে, ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত এই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যদি নিখোঁজ স্বজনকে শনাক্ত করা যায়।

মরদেহগুলো সম্প্রতি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে হওয়া বন্দী বিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ হস্তান্তর করেছে। মরদেহগুলোতে নির্যাতন ও পচনের সুস্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। তবে এগুলো ফেরত দেওয়া হয়েছে শনাক্তকরণের কোনো উপায় ছাড়াই। এমনকি মৃত্যুর তারিখ বা স্থানেরও উল্লেখ করা হয়নি।

গাজায় ডিএনএ পরীক্ষার সরঞ্জাম না থাকায় স্বজনদের জন্য তাঁদের প্রিয়জনকে শনাক্ত করার একমাত্র উপায় হলো পচে-গলে বিকৃত হয়ে যাওয়া মরদেহের ছবি মনোযোগ দিয়ে দেখা। এটি যেমন নিদারুণ যন্ত্রণাভরা এক প্রক্রিয়া, ঠিক তেমনই আর কোনো উপায়ও নেই।

স্ক্রিনে দেখানো পচে-গলে যাওয়া মরদেহের ছবি দেখে স্বজনদের শনাক্তের চেষ্টা। গাজার নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স; ১৮ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘স্বপ্ন ছিল বুকে জড়িয়ে ধরার, এখন আশা দাফনটা যদি অন্তত করতে পারি’