নেত্রকোনায় স্বজনদের হামলায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নিহত
Published: 21st, April 2025 GMT
নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায় জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে কায়সার ইমরান ওরফে বাবুল (৫৯) নামের আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ভাই-ভাতিজারা পিটিয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার রাতে উপজেলার দুওজ ইউনিয়নের শ্রীরামপাশা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত কায়সার ইমরান শ্রীরামপাশা গ্রামের প্রয়াত সিদ্দিকুর রহমানের বড় ছেলে। তিনি দুওজ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক না পেয়ে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তবে পরাজিত হন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই রতন মিয়াকে পুলিশ আটক করেছে।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা, থানা-পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কায়সার ইমরান তাঁর ভাই রতন মিয়া ও কামাল মিয়ার ছেলেদের সঙ্গে যৌথভাবে একটি সেচপাম্প দিয়ে জমিতে পানি দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি কায়সারের বোরো খেতে তাঁর ভাতিজারা প্রয়োজনীয় পানি দিচ্ছিলেন না। এ ছাড়া সেচপাম্পের আয়ের অংশ কায়সারকে দেওয়া হতো না। এসব নিয়ে বেশ কয়েকবার তাঁদের সঙ্গে কায়সারের ঝগড়া হয়। এলাকার মানুষ এগুলো মীমাংসার চেষ্টাও করেন। গতকাল রাত পৌনে ৯টার দিকে এ নিয়ে কায়সার তাঁর ভাই-ভাতিজাদের সঙ্গে বাড়িতে আলোচনায় বসেন। এ সময় সেচপাম্পের পাশাপাশি পারিবারিক জমি নিয়েও উভয় পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ছোট ভাই রতন মিয়া ও ভাতিজা বাপ্পি মিয়া কায়সারের ওপর হামলা চালান। এরপর কায়সারকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন আটপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই রতন মিয়াকে আটক করে।
এ বিষয়ে জানতে নিহত ব্যক্তির অপর ভাই কামাল মিয়ার মুঠোফোন নম্বরে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কায়সার ইমরানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তাঁর ভাই–ভাতিজারা বাড়ি থেকে সটকে পড়েন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের আটকের চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ই রতন ম য়
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা
অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১৪ তরুণ। কিন্তু দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাঁচ মাস ধরে তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজনদের দাবি, দালালের প্রলোভনে পড়ে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।
ইউরোপের কোনো দেশে গেলে সচ্ছলতা আসবে, এমন ধারণা নিয়ে প্রতিবছর মাদারীপুর থেকে শত শত তরুণ সেখানে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। তবে অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কেউবা দালালের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে কাটাচ্ছেন বন্দিজীবন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলার ৪৫ জন লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছেন অন্তত ৩৫০ তরুণ। নিখোঁজ আছেন তিন শতাধিক।
সবশেষ নিখোঁজ তরুণদের সবার বাড়ি রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নে। তাঁরা হলেন পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর ব্যাপারীর ছেলে সালমান ব্যাপারী, চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার, একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায়, নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈ, কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসির ছেলে খলিল খালাসি, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, নয়াকান্দি বাজিতপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, একই গ্রামের সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, শ্রীনাথদী বাজিতপুরের জলিল বয়াতীর ছেলে আল আমিন বয়াতি ও শ্রীনদী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ঘরামির ছেলে আলী ঘরামি। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।
স্বজনদের অভিযোগ, মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বাজিতপুর এলাকার বাবুল হাওলাদার ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৬ লাখ টাকা করে নেন। পরে লিবিয়ায় বন্দী করে আদায় করেন আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এর পর থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বাবুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
মাদারীপুরের ১৪ তরুণ ইতালি যেতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালালের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে তাদের ছবি হাতে স্বজনেরা