কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মারধর করে ১৩ জন কৃষকের ৬৬ একর জমির ধান লুটের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জেলা শহরের রথখলা এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন কৃষকরা। সেখানেই এসব অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কৃষক মো.

মাসুদ মিয়া লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। তিনি বলেন, তিনি, নায়েব আলী, মোস্তফা মিয়া ও সাইফুল মিয়াসহ ১৩ জন কৃষক সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের ছোট ভাই আবদুল হকের কাছ থেকে এক বছরের জন্য ৬৬ একর বোরো জমি লিজ নিয়েছিলেন। প্রতি একর জমি ১৩ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে চাষাবাদসহ প্রতি একরে খরচ পড়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। প্রতি একরে ধান হওয়ার কথা ১০০ মণ। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় এক লাখ টাকা। তিনি (মাসুদ মিয়া) লিজ নিয়েছিলেন ৬ একর জমি।

সংবাদ সম্মেলনে মাসুদ মিয়া উল্লেখ করেন, আবদুল হক মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি পলাতক। এ কারণে তাঁর জমি তিনি লিজ দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীরের রাজনৈতিক বিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু কৃষকরা কী দোষ করেছেন। গত শনিবার কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে সমুদয় ধান জাহাঙ্গীরের লোকজন কেটে নিয়ে গেছেন। এতে কৃষক ও তাদের স্বজনরা বাধা দিতে গেলে হামলা চালানো হয়। হামলায় পাঁচজন কৃষক আহত হন।

আহতরা হলেন– মাসুদ মিয়া (৪০), মোস্তফা মিয়া (৪৫), সাইফুল মিয়া (৪০), কাছুম আলী (৫৫) ও জামির হোসেন (৪৩)। গুরুতর আহত মোস্তফা মিয়া ঢাকায় চিকিৎসাধীন।

বিএনপি নেতা জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীরের ভাষ্য, এসব জমির প্রকৃত মালিকরা থাকেন কিশোরগঞ্জ শহরে। তাদের জমি সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের ছোট ভাই আবদুল হক জোরপূর্বক দখল করেছিলেন। ৫ আগস্টের পর তিনি পালিয়ে গেলে প্রকৃত মালিকরাই জমি আবাদ করেছিলেন। তারা নিজেদের জমির ধান কাটার সময় অভিযোগকারীদের ৫ একরের মতো জমির ধান কাটা হয়ে থাকতে পারে। তাঁকে বিতর্কিত করার জন্যই আবদুল হকের লোকজন সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে কয়েকজন জামা খুলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখিয়েছেন। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা মিঠামইন থানায় গেলে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়। কিন্তু জমির মালিকদের তালিকা দেওয়ার পরও জাহাঙ্গীরের প্রভাবে থানা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।

এ বিষয়ে মিঠামইন থানার ওসি শফিউল আলম দাবি করেন, জমির ধান কাটার তিন-চার দিন আগে কয়েকজন তাঁর কাছে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানান, তারা ধান কাটার ব্যাপারে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। তখন তিনি তাদের জমির কাগজপত্রসহ অভিযোগ দিতে বলেন। কাগজপত্র দেখে অন্যদের সঙ্গে কথা বলে ধান কাটার ব্যবস্থা করে দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা যোগাযোগ করেননি, কোনো লিখিত অভিযোগও দেননি।


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ক শ রগঞ জ আবদ ল হ ম ঠ মইন ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ