জিম্বাবুয়ের উইকেটকিপার কি বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন
Published: 23rd, April 2025 GMT
সিলেট টেস্টের প্রথম সকালের ঘটনা। ব্লেসিং মুজারাবানির লাফিয়ে ওঠা বলগুলো গ্লাভসে রাখতে হিমশিম খাচ্ছিলেন জিম্বাবুয়ের উইকেটকিপার নিয়োশো মায়াভো। কখনো বল ছুটে গিয়ে পড়ছে স্লিপে থাকা শন উইলিয়ামসের সামনে, কখনো ক্রেইগ আরভিনের। নতুন বল, সুইং, বাউন্স—সব মিলিয়েই হয়তো বলটা গ্লাভসে জমাতে পারছিলেন না মায়াভো! এমন ধারণা যদি করে থাকেন, তাহলে আপনার সেই ভুল এতক্ষণে ভাঙার কথা।
নতুন বলের মতো বল পুরোনো হলেও যে জিম্বাবুয়ের উইকেটকিপার হাতে রাখতে পারেন না, সেটি তো নিজেই প্রমাণ করেছেন। টেস্টের প্রথম তিন দিনে একে একে ক্যাচ ছেড়েছেন মুমিনুল হক, মাহমুদুল হাসান ও নাজমুল হোসেনের। তিনটিই ছিল সহজ সুযোগ। সুযোগগুলো মায়াভো নিতে পারলে, তৃতীয় দিন শেষেই ম্যাচ জয়ের কাছে থাকতে পারত জিম্বাবুয়ে।
মায়াভো মুমিনুলের ক্যাচ ছাড়েন টেস্টের প্রথম দিনে। মুমিনুল তখন এক রানও করতে পারেননি। ইনিংসের ১২তম ওভারে মুজারাবানির লাফিয়ে ওঠা এক ডেলিভারি মুমিনুলকে চমকে দিয়ে গ্লাভস ছুঁয়ে যায়। তবে উইকেটের পেছনে থাকা মায়াভো প্রতিক্রিয়া দেখাতেই দেরি করে ফেলেন। সেই ইনিংসে মুমিনুল করেন ৫৬ রান। চিন্তা করুন, ১৯১ রান থেকে ৫৬ চলে গেলে থাকে কত!
পরশু বিকেল মায়াভো ছেড়েছেন মাহমুদুলের ক্যাচ। মুজারাবানির বলে যে ক্যাচটি মায়াভো ছাড়েন, ওটা গ্লাভস হাতে ধরার চেয়ে ছাড়া কঠিন। মুজারাবানির প্রতিক্রিয়াও সেটা সবকিছু বলে দিচ্ছিল। অমন ক্যাচ মিস দেখে শূন্য লাথি মেরে জার্সিতে নিজের মুখ লুকিয়ে রাখেন এই পেসার।
জীবন পেয়ে তৃতীয় দিন শেষে ৬০ রানে অপরাজিত বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।