কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে তানিয়া আক্তার নামে এক সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তানিয়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের বোরণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।

মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে সেজে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ ও ১৫ বছর ধরে চাকরি করার অভিযোগে সম্প্রতি শফিকুল মিয়া নামে এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে তানিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। শফিকুল উপজেলার ঢাকী গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। 

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মিঠামইন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, তানিয়া আক্তারের বাড়ি উপজেলার ঢাকী গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে। চাচা গোলাম ফারুক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। গোলাম ফারুক ২০১০ সালে তাঁর আপন ভাই জিতু মিয়ার মেয়ে তানিয়াকে নিজের সন্তান বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষিকা পদে চাকরি পাইয়ে দেন। বিষয়টি তখন স্থানীয় অন্য মুক্তিযোদ্ধারা জানতেন। তারা তা প্রকাশ করেননি। তথ্য গোপন করে সরকারি চাকরি লাভ ও গত ১৫ বছর ধরে প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি চাকরি করছেন তানিয়া। 

অভিযোগকারী শফিকুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে দেশে এত বড় আন্দোলন হয়ে সরকার বিদায় হয়েছে। সেই জায়গায় মুক্তিযোদ্ধার কন্যা সেজে ১৫ বছর চাকরি করছেন ওই শিক্ষিকা। তিনি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে শিক্ষিকা তানিয়া ও বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম ফারুকের বিচার দাবি করেন।

সরেজমিনে সোমবার ঢাকী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে তানিয়ার গ্রামের বাড়িতে গেলে পুরো বিষয়টি খোলাসা হয়। অভিযোগ প্রসঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম ফারুকের কাছে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, তানিয়া তাঁর ঔরশজাত সন্তান। এলাকায় কিছু লোকের সঙ্গে জমিসংক্রান্ত বিষয়ে তাদের বিরোধ রয়েছে। তারা তানিয়ার বিষয়ে অপপ্রচার করছেন। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম ফারুকের ভাই জিতু মিয়ার কাছে এ প্রসঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই তানিয়ারে কেমনে চাকরি দিছে হে জানে। তানিয়া আমার মেয়ে।’ 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তানিয়ার একজন চাচিসহ ঘনিষ্ঠ স্বজন ও প্রতিবেশীরা জানান, তানিয়া জিতু মিয়ার মেয়ে। মুক্তিযোদ্ধা গোলাম ফারুক দুটি বিয়ে করেছেন। তার দুই স্ত্রীর পক্ষেই ছেলেমেয়ে আছে। তানিয়া গোলাম ফারুকের মেয়ে না। কীভাবে সরকারি চাকরি হয়েছে তারা জানেন না। শুধু শুনেছেন চাচা মুক্তিযোদ্ধা। এই কারণে চাকরিটা হয়েছে। 

উপজেলার বোরণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে কথা হয় শিক্ষিকা তানিয়া আক্তারের সঙ্গে। তানিয়া দাবি করেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম ফারুক তাঁর বাবা। তাদের গ্রামে একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে জমি নিয়ে তাঁর পরিবারের বিরোধ চলছে। এ কারণে প্রতিপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তানিয়ার জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি কার্ড) তাঁর বাবার নাম গোলাম ফারুক। কিন্তু মায়ের নাম হেলেনা। যিনি স্বজনদের দাবি অনুযায়ী তানিয়ার আসল মা। 

এ বিষয়ে মিঠামইন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও অপর বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তাদের ভাষ্য, বিষয়টি অনেকে জানলেও এতদিন কেউ মুখ খোলেনি। এখন যেহেতু তদন্ত হচ্ছে মূল বিষয়টা বের হয়ে আসবে। উপজেলায় এরকম আরও অনেক ঘটনা রয়েছে। 

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাদিকুর রহমান বলেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তিনি বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন। তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সঠিক তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ কর মকর ত তদন ত করছ ন ব ষয়ট উপজ ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থা, প্রস্তুতি না নেওয়া আত্মঘাতী

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও প্রস্তুতি নিয়ে রাখা দরকার বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এমন বিশ্বে আমরা বাস করি, প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি আমাদের ঘিরে থাকে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থার মধ্যে রয়ে গেছে। সকালের খবরে দেখলাম, হয়তো গুজব, যে আজকেই শুরু হয়ে যাবে যুদ্ধ। প্রস্তুতি না নেওয়াটা আত্মঘাতী। আধাআধি প্রস্তুতির কোনো জায়গা নাই।’

গতকাল বুধবার রাজধানীর বীরউত্তম এ কে খন্দকার ঘাঁটিতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। খবর বিবিসি বাংলা ও বাসসের।

নিজেকে ‘যুদ্ধবিরোধী মানুষ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে যুদ্ধ হোক– এটা আমরা কামনা করি না।’ যুদ্ধের প্রস্তুতি অনেক সময় যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়– এ রকম ধারণার বিষয়ে ঘোরতর আপত্তির কথা জানান ড. ইউনূস।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত আধুনিক বিমানবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

দেশপ্রেম ও পেশাদারিত্ব আগামী দিনের নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার মূল ভিত্তি উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিমানবাহিনীর সব সদস্যের প্রতি যুগোপযোগী ক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন এবং পেশাগত ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি অব্যাহত মনোযোগ বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা একটা নিরাপদ, উন্নত ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার, রাডার সংযোজনের জন্য বিমানবাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে সরকার।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা নিয়মিতভাবে বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও অনুশীলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জ্ঞান-দক্ষতাকে যুগোপযোগী করতে সদা সচেষ্ট রয়েছেন।’

তিনি দেশের বিমানবন্দরগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিমানবাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।

মহড়া কেবল একটি সাময়িক অনুশীলনই নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটি আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমানবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার পরিচয় বহন করে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কার্যকর আকাশ প্রতিরক্ষার পাশাপাশি বিস্তীর্ণ সমুদ্র এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। 

এর আগে বিমানঘাঁটিতে এসে পৌঁছলে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। অনুষ্ঠানস্থলে বিমানবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর বিতরণ প্রধান উপদেষ্টার

গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে নির্মিত ঘর বিতরণ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। গতকাল সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এসব ঘর বিতরণ করেন।

ওই বন্যায় অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম। অসংখ্য বাড়িঘর সম্পূর্ণরূপে ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নির্মাণের সামর্থ্য নেই, এ রকম তিনশ পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ফেনীতে ১১০টি, নোয়াখালীতে ৯০টি, কুমিল্লায় ৭০টি ও চট্টগ্রামে ৩০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। দুটি কক্ষ, কমন স্পেস, শৌচাগার, রান্নাঘরসহ বারান্দা রয়েছে। ৪৯২ বর্গফুট আয়তনের ঘরে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৯৪ টাকা এবং ৫০০ বর্গফুটের ঘরে প্রাক্কলিত ব্যয় ৭ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেনাবাহিনী ঘরগুলো নির্মাণ করেছে।

অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান বক্তব্য দেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত ও বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বন্দর ব্যবস্থাপনায় এমন অপারেটরদের সম্পৃক্ত করতে হবে, যাতে এগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।

বৈঠকে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘দেশের নৌবন্দরগুলোর বর্তমান হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে ১ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ইউনিট, যা সঠিক পরিকল্পনা ও কর্মপন্থার মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে ৭ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ইউনিটে উন্নীত করা সম্ভব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ