Samakal:
2025-09-18@00:16:43 GMT

বিবাদে বিএনপির দু্‌ই নেতা

Published: 24th, April 2025 GMT

বিবাদে বিএনপির দু্‌ই নেতা

আগামী নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে দরকার এলাকায় নিরঙ্কুশ আধিপত্য। তাই কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় তৎপর বিএনপির বড় দুই নেতা– গোলাম আকবর খোন্দকার ও গিয়াস কাদের চৌধুরী। 

দক্ষিণ রাউজানে ছড়ি ঘোরানো গোলাম আকবর নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছেন উত্তর রাউজানও। আর উত্তর রাউজানের ক্ষমতাধর গিয়াস কাদের নজর দিয়েছেন দক্ষিণ রাউজানের দিকে। গত আট মাসে যে ১২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে, এর ছয়টি উত্তর রাউজানে এবং ছয়টি দক্ষিণ রাউজানে। 

রাউজানে খুন হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশ তাঁর অনুসারী বলে দাবি করেন উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গিয়াস কাদের চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তারের নেশায় পেয়েছে গোলাম আকবর খোন্দকারকে। তিনি একের পর এক আমার অনুসারীদের লাশ ফেলছেন। বিষয়টি কেন্দ্রীয় বিএনপি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে জানিয়েছি। বলেছি, খুনিদের গ্রেপ্তার করুন। দক্ষিণ রাউজানে সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশি তৎপরতা বাড়ান। অন্যথায় থামবে না লাশের এই মিছিল।’ 

এই অভিযোগ অস্বীকার করে উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, ‘লাশের রাজনীতি কখনোই করিনি। এলাকার মানুষও তা জানে। গত ১৫ বছর আমি এলাকাতেই ছিলাম। আর দেশ ছেড়ে বিদেশে আরাম-আয়েশ করেছেন গিয়াস কাদের। সুদিনে এলাকায় ফিরে দেখেন তাঁর নিয়ন্ত্রণে নেই কিছুই। তাই আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। একের পর এক লাশ ফেলছেন। এ জন্য তাঁর চাচাতো ভাই আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ফজলে করিমের সঙ্গে থাকা সন্ত্রাসী গ্রুপকে দলে টেনেছেন।’

দুই নেতাই হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করার জোর দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, পুলিশ সক্রিয় হলে, প্রকৃত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে পুলিশ বলছে, রাজনৈতিক চাপে তারা স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছেন না।

বড় দুই নেতার এই বিবাদের প্রভাব পড়েছে নেতাকর্মীর মাঝে। তারাও এখন বিভক্ত হয়ে আছেন দুই বলয়ে। এলাকায় প্রভাব বিস্তারের সুবিধার্থে নেতাকর্মীরা আশ্রয় খুঁজছেন এ দুই নেতার ছায়াতলে। উত্তর রাউজানে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এখন প্রভাব দেখা যাচ্ছে গিয়াস কাদেরের। দক্ষিণ রাউজানে বিএনপির নানা কর্মসূচি নিয়ে সরব থাকছেন গোলাম আকবর খোন্দকার।

৫ আগস্টের পর রাউজানে খুনোখুনির ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন গোলাম আকবর খোন্দকার সমর্থিত রাউজান উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী সমর্থিত সন্ত্রাসীরা নিজেদের মধ্যে নিজেরা খুনোখুনি করে বিএনপিকে কলঙ্কিত করছে। খুনের ঘটনায় উল্টো মূল বিএনপির নেতাকর্মীকে মামলার আসামি করা হচ্ছে। আমরা এ ঘটনায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় কমিটিকে লিখিত জানাব।’

গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী সমর্থিত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবু জাফর চৌধুরী বলেন, ‘এলাকার আধিপত্য বিস্তার ও মাটি-বালুর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে মারামারি ও খুনোখুনির ঘটনাগুলো হচ্ছে। আমরা চাই শান্তির রাউজান। আমাদের নেতা কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, অপরাধী যেই হোক না কেন, তাদের আইনের হাতে তুলে দিতে হবে। আমি নিজেও প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে সব হত্যার সুষ্ঠু বিচার হোক।’ 

আসন্ন নির্বাচনে রাউজান থেকে এমপি পদে মনোনয়ন চাইবেন গোলাম আকবর খোন্দকার। গত ১৫ বছর এলাকায় থাকায় দলে শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে তাঁর। এই অবস্থান ধরে রাখতে চান তিনি পুরো রাউজানে। 

এবার রাউজান থেকে নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন গিয়াস কাদের চৌধুরীও। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের আলাদা একটি প্রভাব আছে রাউজানে। তিনি একে কাজে লাগাতে চাচ্ছেন। বিগত সরকারের সময়ে বেশ কয়েক বছর এলাকায় ছিলেন না গিয়াস কাদের, ছিলেন দুবাইয়ে। গোলাম আকবর খোন্দকার এটিকে সামনে এনে গিয়াসের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীকে সংগঠিত করছেন। তবে গিয়াস কাদের বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ছিলেন তিনি। এ জন্য বিদেশ যেতে বাধ্য হয়েছেন।


সম্পাদনা: বাবু

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: খ ন র ঘটন ন ত কর ম ব এনপ র এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

পদ স্থগিত নেতার পক্ষে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বিবৃতি, দ্রুত মুক্তি দাবি

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদাপাথর লুটের মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিনের মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে উপজেলা বিএনপি। গতকাল সোমবার উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। কেন্দ্র থেকে পদ স্থগিত হওয়া একজন নেতার পক্ষে এমন বিবৃতি দেওয়ায় দলের ভেতরে ও বাইরে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

গত শনিবার রাতে সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকা থেকে সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৯)। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। গত ১১ আগস্ট কেন্দ্রীয় বিএনপি চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ দলীয় নীতি ও আদর্শবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করে।

গতকাল উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মন্নান ও সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সাহাব উদ্দিন বিগত স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রসৈনিক ও মিথ্যা মামলায় নির্যাতিত নেতা। তাঁকে সাদাপাথর লুটের মামলায় মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানোয় উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করা হয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মন্নানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আকবরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি সাহাব উদ্দিনের চাচাতো ভাই। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা মাঠে আছি। আমরা তাঁকে ভালোভাবে চিনি। তিনি কোনো লুটপাটে ছিলেন না। বরং লুটপাটের বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে আমরা মিছিল, মানববন্ধন করেছি। এ তথ্য আমরা মৌখিকভাবে জেলা বিএনপিকেও জানিয়েছি।’

উপজেলা বিএনপির বিবৃতিতে সাহাব উদ্দিনের বিষয়ে ‘মিথ্যা অভিযোগে সদ্য পদ স্থগিত হয়েছে’ বলে দাবি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা রিসিভ করেননি। তাই এ বিষয়ে জেলা বিএনপির অবস্থান ও কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে। এমন অবস্থায় উপজেলা বিএনপি কীভাবে ওই নেতার পক্ষে বিবৃতি দেয়, সেটা অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। ব্যক্তির অপকর্মের দায় কেন সংগঠন নেবে? বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।

সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি প্রায় ১৫০ একর জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। গত ১৭ মার্চ প্রথম আলোয় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ১৮ মার্চ সরকারি জমি উদ্ধারে অভিযানে নামে স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭০ একর জমি উদ্ধার করে এবং ১০০টি পাথর ভাঙার যন্ত্র উচ্ছেদের পাশাপাশি প্রায় ৫০টি টিনশেড ঘর উচ্ছেদ করা হয়।

এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সরকারি জমি দখলের ঘটনায় ১৯ মার্চ সাহাব উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জেলা বিএনপি। পাশাপাশি অভিযোগ তদন্তে জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশিক উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

গত ১০ এপ্রিল ভোলাগঞ্জে পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে সাহাব উদ্দিন ও তাঁর স্বজনেরা জমি দখল ও লুটপাটে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজেলা সভাপতির নেতৃত্বে এমন অপরাধ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।

সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাঁকে ‘সাদাপাথর লুটপাটে অভিযুক্ত অন্যতম মূলহোতা’ হিসেবে উল্লেখ করে। সাদাপাথর লুটের ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় গত ১৫ আগস্ট খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা এক হাজার থেকে দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদ স্থগিত নেতার পক্ষে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বিবৃতি, দ্রুত মুক্তি দাবি