আগামী নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে দরকার এলাকায় নিরঙ্কুশ আধিপত্য। তাই কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় তৎপর বিএনপির বড় দুই নেতা– গোলাম আকবর খোন্দকার ও গিয়াস কাদের চৌধুরী।
দক্ষিণ রাউজানে ছড়ি ঘোরানো গোলাম আকবর নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছেন উত্তর রাউজানও। আর উত্তর রাউজানের ক্ষমতাধর গিয়াস কাদের নজর দিয়েছেন দক্ষিণ রাউজানের দিকে। গত আট মাসে যে ১২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে, এর ছয়টি উত্তর রাউজানে এবং ছয়টি দক্ষিণ রাউজানে।
রাউজানে খুন হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশ তাঁর অনুসারী বলে দাবি করেন উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গিয়াস কাদের চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তারের নেশায় পেয়েছে গোলাম আকবর খোন্দকারকে। তিনি একের পর এক আমার অনুসারীদের লাশ ফেলছেন। বিষয়টি কেন্দ্রীয় বিএনপি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে জানিয়েছি। বলেছি, খুনিদের গ্রেপ্তার করুন। দক্ষিণ রাউজানে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশি তৎপরতা বাড়ান। অন্যথায় থামবে না লাশের এই মিছিল।’
এই অভিযোগ অস্বীকার করে উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, ‘লাশের রাজনীতি কখনোই করিনি। এলাকার মানুষও তা জানে। গত ১৫ বছর আমি এলাকাতেই ছিলাম। আর দেশ ছেড়ে বিদেশে আরাম-আয়েশ করেছেন গিয়াস কাদের। সুদিনে এলাকায় ফিরে দেখেন তাঁর নিয়ন্ত্রণে নেই কিছুই। তাই আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। একের পর এক লাশ ফেলছেন। এ জন্য তাঁর চাচাতো ভাই আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ফজলে করিমের সঙ্গে থাকা সন্ত্রাসী গ্রুপকে দলে টেনেছেন।’
দুই নেতাই হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করার জোর দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, পুলিশ সক্রিয় হলে, প্রকৃত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে পুলিশ বলছে, রাজনৈতিক চাপে তারা স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছেন না।
বড় দুই নেতার এই বিবাদের প্রভাব পড়েছে নেতাকর্মীর মাঝে। তারাও এখন বিভক্ত হয়ে আছেন দুই বলয়ে। এলাকায় প্রভাব বিস্তারের সুবিধার্থে নেতাকর্মীরা আশ্রয় খুঁজছেন এ দুই নেতার ছায়াতলে। উত্তর রাউজানে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এখন প্রভাব দেখা যাচ্ছে গিয়াস কাদেরের। দক্ষিণ রাউজানে বিএনপির নানা কর্মসূচি নিয়ে সরব থাকছেন গোলাম আকবর খোন্দকার।
৫ আগস্টের পর রাউজানে খুনোখুনির ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন গোলাম আকবর খোন্দকার সমর্থিত রাউজান উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী সমর্থিত সন্ত্রাসীরা নিজেদের মধ্যে নিজেরা খুনোখুনি করে বিএনপিকে কলঙ্কিত করছে। খুনের ঘটনায় উল্টো মূল বিএনপির নেতাকর্মীকে মামলার আসামি করা হচ্ছে। আমরা এ ঘটনায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় কমিটিকে লিখিত জানাব।’
গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী সমর্থিত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবু জাফর চৌধুরী বলেন, ‘এলাকার আধিপত্য বিস্তার ও মাটি-বালুর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে মারামারি ও খুনোখুনির ঘটনাগুলো হচ্ছে। আমরা চাই শান্তির রাউজান। আমাদের নেতা কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, অপরাধী যেই হোক না কেন, তাদের আইনের হাতে তুলে দিতে হবে। আমি নিজেও প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে সব হত্যার সুষ্ঠু বিচার হোক।’
আসন্ন নির্বাচনে রাউজান থেকে এমপি পদে মনোনয়ন চাইবেন গোলাম আকবর খোন্দকার। গত ১৫ বছর এলাকায় থাকায় দলে শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে তাঁর। এই অবস্থান ধরে রাখতে চান তিনি পুরো রাউজানে।
এবার রাউজান থেকে নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন গিয়াস কাদের চৌধুরীও। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের আলাদা একটি প্রভাব আছে রাউজানে। তিনি একে কাজে লাগাতে চাচ্ছেন। বিগত সরকারের সময়ে বেশ কয়েক বছর এলাকায় ছিলেন না গিয়াস কাদের, ছিলেন দুবাইয়ে। গোলাম আকবর খোন্দকার এটিকে সামনে এনে গিয়াসের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীকে সংগঠিত করছেন। তবে গিয়াস কাদের বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ছিলেন তিনি। এ জন্য বিদেশ যেতে বাধ্য হয়েছেন।
সম্পাদনা: বাবু
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: খ ন র ঘটন ন ত কর ম ব এনপ র এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।
আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।