ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের সময় বাড়ল
Published: 24th, April 2025 GMT
শেয়ারবাজারের নেগেটিভ ইকুইটি বা ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের সময় বাড়ানো হয়েছে। শর্তসাপেক্ষে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ারবাজারের ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতির ক্ষেত্রে ছাড় পাবেন।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক জরুরি সভায় আজ বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এত দিন বিষয়টি নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিল। এ কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) ও মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএসইসির জরুরি সভা শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিএসইসি জানিয়েছে, এই সুবিধা নিতে হলে প্রত্যেক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংককে তাদের ঋণাত্মক ঋণ হিসাব বা অনিরূপিত (আনরিয়ালাইজড) লোকসানের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতির সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। সেই পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ ৩০ জুনের মধ্যে কমিশনে জমা দিতে হবে। যারা এই পরিকল্পনা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দেবে, তারা নিরাপত্তা সঞ্চিতির ক্ষেত্রে এই সুবিধা পাবে।
শর্তসাপেক্ষে এই সুবিধা দেওয়ার কারণ হিসেবে জানা যায়, ঋণাত্মক ঋণ হিসাব নিয়ে একেক প্রতিষ্ঠানের সমস্যা একেক রকম। কারও নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ বা প্রভিশনিং করতে হবে বেশি, কারও কম। এই বাস্তবতায় শর্তসাপেক্ষে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অতীতে সর্বজনীনভাবে বারবার সময় বাড়ানোর পরও প্রতিষ্ঠানগুলো এই সমস্যার সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো যেন নিজে থেকে এই সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়, সে জন্য শর্ত আরোপ করেছে বিএসইসি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সার্বিকভাবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে সময় বাড়ানো হলেও পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিকল্পনাসাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানভেদে এই সময়সীমা আরও বাড়তে পারে।
ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের এই সমস্যা তৈরি হয় মূলত ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর। ওই ধসের পর শেয়ারের ব্যাপক দরপতনের কারণে শেয়ারের বিপরীতে দেওয়া বিপুল ঋণ আর আদায় করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার শেয়ারের বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় শেয়ার বিক্রি করেও পুরোপুরি ঋণ সমন্বয়ের সুযোগ নেই। সে জন্য এসব ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের বিপরীতে এত দিন নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিংয়ে ছাড় পেয়ে আসছিল প্রতিষ্ঠানগুলো। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে এই সময় শেষ হয়। ফলে নিয়ম অনুযায়ী, ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ঋণাত্মক ঋণের বিপরীতে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা দেখা দেয়। আবার ঋণ সমন্বয় করতে গিয়ে ঋণাত্মক ঋণ হিসাবে থাকা শেয়ার বিক্রির চাপও তৈরির সম্ভাবনা তৈরি হয়। উভয় ক্ষেত্রেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ঋণাত্মক ঋণ হিসাব সমন্বয়ে আরও সময় চায় ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। ডিবিএ ও বিএমবিএর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিএসইসির হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়। এ নিয়ে শেয়ারবাজারের শীর্ষ ২০ ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা গত মঙ্গলবার বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকও করেন।
বিএসইসিতে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের পর এ বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকে শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিনিধিরা ২০৩০ সাল পর্যন্ত ঋণাত্মক ঋণ হিসাব ও লোকসানে থাকা ডিলার হিসাবের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে ছাড়ের দাবি জানিয়েছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ স ব র ব পর ত শ য় রব জ র সময় ব ড় ন ব এসইস র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরো পড়ুন:
সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি।
এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল