কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর তরফ থেকে সে সকল মানুষের জন্য হজ ফরজ, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখে।’ (সুরা আল–ইমরান, আয়াত: ৯৭) হজ সম্পন্নকারীকে ‘হাজি’ বলা হয়।
সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য ওমরাহ পালন করা সুন্নত। ওমরাহর ফরজ দুটি—ইহরাম ও তাওয়াফ। ওয়াজিব দুটি—সাফা ও মারওয়া সাঈ করা এবং মাথা মুণ্ডন করা বা চুল কাটা। হজের নিয়তকে ইহরাম বলা হয়। সম্পাদন পদ্ধতি অনুসারে হজ তিন প্রকার—১.
শুধু হজের ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পন্ন করলে একে ‘ইফরাদ হজ’ (একক হজ) বলা হয়। ইফরাদ হজ পালনের জন্য ঢাকা থেকে শুধু হজের ইহরামের নিয়ত করে মক্কা শরিফে পৌঁছার পর তাওয়াফ ও সাঈ করে ইহরাম না ছেড়ে ১০ জিলহজ হজ সম্পন্ন হওয়ার পর ইহরাম ত্যাগ করতে হবে।
হজ ও ওমরাহর জন্য একত্রে ইহরামের নিয়ত করে একই ইহরামে তা সম্পন্ন করলে তাকে ‘কিরান হজ’ বা যৌথ হজ বলা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে একমাত্র হজ ছিল ‘কিরান হজ’। কিরান হজ পালনের জন্য ঢাকা থেকে ওমরাহ ও হজের একত্রে ইহরামের নিয়ত করে মক্কা শরিফে পৌঁছার পর প্রথমে ওমরাহর তাওয়াফ ও সাঈ করে ইহরাম না ছেড়ে সেই ইহরামেই হজ সম্পাদন করে ১০ জিলহজ ইহরাম ত্যাগ করতে হবে।
একই সফরে প্রথমে ওমরাহর ইহরামের নিয়ত করে, তা সম্পন্ন করার পর হজের জন্য নতুন করে ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পাদন করাকে ‘তামাত্তু হজ’ বা সুবিধাজনক হজ বলা হয়। বাংলাদেশ থেকে অধিকাংশ হাজি তামাত্তু হজ করে থাকেন। তামাত্তু হজের ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে শুধু ওমরাহর ইহরামের নিয়ত করে মক্কা শরিফ পৌঁছে তাওয়াফ ও সাঈ করে চুল কেটে বা মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম সমাপ্ত করতে হবে। এরপর ৭ জিলহজ তারিখে হজের জন্য নতুন করে ইহরামের নিয়ত করে ১০ জিলহজ তা সম্পন্ন করতে হবে।
সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য ওমরাহ পালন করা সুন্নত। ওমরাহর ফরজ দুটি—ইহরাম ও তাওয়াফ। ওয়াজিব দুটি—সাফা ও মারওয়া সাঈ করা এবং মাথা মুণ্ডন করা বা চুল কাটাকিরান ও তামাত্তু হজে ‘দমে শোকর’ বা কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব। এতে অপারগ হলে ১০টি রোজা পালন করতে হবে। এর মধ্যে অন্তত তিনটি রোজা হজকালীন মক্কা শরিফে রাখতে হবে।
হজ পালনরত হাজিরা ৯ জিলহজ (হজের বা আরাফার দিন) ও ১০ জিলহজ (কোরবানির ঈদের দিন) ছাড়া অন্য দিনগুলোতে রোজা রাখতে পারবেন। যাঁরা হজ পালনরত নন, তাঁরা ৯ জিলহজ রোজা রাখা সুন্নত এবং ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ রোজা রাখা নিষিদ্ধ।
হজের ফরজ তিনটি—১. ইহরামের নিয়ত বা ইচ্ছা করা; ২. অকুফে আরাফাহ করা, ৯ জিলহজ জোহর থেকে ১০ জিলহজ ফজরের পূর্ব পর্যন্ত যেকোনো সময় আরাফাহ ময়দানে অবস্থান করা এবং ৩. তাওয়াফে জিয়ারত করা, ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো সময় কাবাঘরের তাওয়াফ (সাত চক্কর) করা।
পুরুষেরা ইহরাম অবস্থায় খোলা চাদর পরিধান করবেন, মাথা খালি রাখতে হবে এবং এমন স্যান্ডেল পরিধান করতে হবে, যাতে পায়ের পাতা খোলা থাকে। নারীদের ইহরামের বিশেষ কোনো পোশাক নেই; তবে মুখমণ্ডল খোলা রাখতে হবে।
ইহরাম অবস্থায় যেসব কাজ নিষিদ্ধ: প্রাণী হত্যা, রতিক্রিয়া, অন্যায় আচরণ, কলহ-বিবাদ ইত্যাদি (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯৭)
হজের ওয়াজিব সাতটি—১. আরাফাত থেকে মিনায় ফেরার পথে মুজদালিফা নামক স্থানে ১০ জিলহজ ফজর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কিছু সময় অবস্থান করা; ২. সাফা ও মারওয়ায় সাঈ করা; ৩. রমিয়ে জিমার—১০, ১১ ও ১২ জিলহজ জামারায় শয়তানকে পাথর মারা; ৪. তামাত্তু ও কিরান হজে দমে শোকর বা কোরবানি দেওয়া; ৫. মাথার চুল কেটে বা মুণ্ডন করে ইহরাম ত্যাগ করা; ৬. বিদায়ী তাওয়াফ করা; ৭. মদিনা শরিফে রওজাতুন নবী (সা.) জিয়ারত করা।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক র ন হজ স ঈ কর র জন য অবস থ ওমর হ
এছাড়াও পড়ুন:
দেশবাসী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়: আমীর খসরু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের মানুষ ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এবং নতুন প্রজন্মও ভোট দিতে পারেনি। তাই, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়।
সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের যে ত্যাগ, সে পথেই দেশ অগ্রসর হবে।
প্রধান উপদেষ্টার মতো বিএনপিও রোজার আগে বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতি চায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সংস্কারের বিষয়টি ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে ড. ইউনূস, তারেক রহমান এবং বিএনপির সকল নেতৃবৃন্দ আগেই বলেছেন।
তিনি মনে করেন, ঐকমত্য হতে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।
বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করে। বিচার বিভাগ বিচার করবে এবং বিচারের আওতায় আনারও বিষয় আছে। যারা বিচারের আওতায় আসবে, তার জন্য আরো প্রায় ছয় মাস সময় আছে। আর যারা এর মধ্যে আসবে না, তাদের জন্য তো আগামী সরকার আছে।
সরকারের কি এখন নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোনো পথ নেই। এ বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করছেন।
জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার বিশেষ সম্পর্ক করছে, বিএনপি বিষয়টি কীভাবে দেখছে? এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, “আমি একটা জিনিস মনে করি, আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে এখানে সবার মতামত নেওয়ার সুযোগ আছে। সুতরাং, সবাই তাদের মতামত দিতে পারে। আমার মনে হয়, এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় পাওয়া, সবাই নিজেদের মতামত দেবে। এর মধ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”
বিএনপি এত দিন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বললেও এখন কেন ফেব্রুয়ারিতে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক সময়। এবং এত সময়ও লাগার কোনো কারণ নেই। বিএনপি আগে ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের কথা বলেছে। সুতরাং, ফেব্রুয়ারি আরো দীর্ঘ সময়। তবে, যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।
আমীর খসরু বলেন, “আমি আগেও বলেছি, যত বেশি ঐকমত্যের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারব, সেটা জাতির জন্য তত ভালো। আমরা যে ঐকমত্যের মধ্যে এসেছি, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।”
তিনি আরো বলেন, “ঐকমত্য থাকার ফলেই আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। সুতরাং, আমরা চেষ্টা করব, যেখানেই সম্ভব ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব।”
তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকে নির্বাচনে নিরপেক্ষতার বিষয়ে কোনো আলোচনা বা বার্তা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখনই নির্বাচন শুরু হবে, তখনই সরকার নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের ধারণা হলো— একটি নিরপেক্ষ সরকার। সুতরাং, নির্বাচনে সেই নিরপেক্ষতা সরকার নিশ্চিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান বলেছেন, এখানে যতটুকু ঐকমত্য হবে, সংস্কারও ততটুকুই হবে। বাকি অংশটা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির কাছে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। এটি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, নির্বাচনের পরেও এটি চলমান থাকবে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক