পরমাণু প্রকল্প নিয়ে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকে ‘অগ্রগতি’, আবার আলোচনায় ঐকমত্য
Published: 26th, April 2025 GMT
ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে দেশটির সঙ্গে তৃতীয় দফায় বৈঠক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার ওমানের রাজধানী মাসকাটে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে আলোচনায় অগ্রগতির কথা জানিয়েছে দুই দেশই। একই সঙ্গে আগামী সপ্তাহে আবারও আলোচনায় বসার বিষয়ে একমত হয়েছে তারা।
শনিবার এ বৈঠকের নেতৃত্ব দেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এবং যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফ। বৈঠকের পর পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আলোচনা ‘ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ’ হয়েছে। আর আব্বাস আরাগচি বলেছেন, আগামী বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন মতপার্থক্য কীভাবে আরও কমানো যায়, তা যাচাই–বাছাই করে দেখবেন তাঁরা।
এর আগে গত দুই সপ্তাহে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় মাসকাট ও ইতালির রাজধানী রোমে। আগামী সপ্তাহের বৈঠক ইউরোপে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। তবে শনিবারের আলোচনায় আরও অগ্রগতি হয়েছে।
২০১৫ সালে ইরানের পরমাণু প্রকল্পসংক্রান্ত একটি চুক্তিতে অংশ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওই চুক্তিতে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত করার বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। নিজের প্রথম মেয়াদে ওই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জানুয়ারিতে আবার ক্ষমতায় বসার পর এ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছেন তিনি।
আরও পড়ুনইরানকে পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণভাবে বাতিল করতে হবে: স্টিভ উইটকফ১৫ এপ্রিল ২০২৫আলোচনায় যে অগ্রগতি হচ্ছে, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প নিজেও। প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে যাওয়ার পথে উড়োজাহাজে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের (ইরান) সঙ্গে অনেক আলোচনা করেছি। আর আমি মনে করি, আমরা একটি চুক্তিতে একমত হতে যাচ্ছি। অন্য যেকোনো বিকল্পের চেয়ে আমি চুক্তি করতে বেশি পছন্দ করব।’
বন্দরে বিস্ফোরণে নিহত ৫
ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাত শতাধিক। জরুরি সেবা বিভাগের বরাত দিয়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার দেশটির দক্ষিণ উপকূলে হরমুজগান প্রদেশের শহীদ রাজাই বন্দরে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
কীভাবে এ বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে বন্দরের কাস্টমস কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রাসায়নিক ও বিপজ্জনক বিভিন্ন পদার্থ রাখার গুদামে আগুন লাগার পর এ বিস্ফোরণ হয়।
আরও পড়ুনপারমাণবিক কর্মসূচি: যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে পিছু হটবে না ইরান১৭ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত হয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
তড়িঘড়ি না করে সংবিধান সংস্কারে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আপত্তি মীমাংসা না করে সংবিধান সংস্কারের দিকে না এগোতে অন্তর্বর্তী সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন নাগরিক সমাজের ৫৩ ব্যক্তি। এতে দেশ দীর্ঘস্থায়ী সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে মতৈক্য না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে আলোচনা চালিয়ে নেওয়ার আহ্বান রেখেছেন তাঁরা।
গত সপ্তাহে ঐকমত্য কমিশন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে তাদের সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক চলার মধ্যে আজ শনিবার এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান এই নাগরিকেরা।
জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরের পর এই সনদ বাস্তবায়নে সুপারিশ গত ২৮ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেয় ঐকমত্য কমিশন। এর পর থেকে বিভিন্ন দলের আপত্তির বিষয়গুলো সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার তফসিলে না থাকা নিয়ে যেমন সমালোচনা হচ্ছে, আবার গণভোটের সময় নিয়েও দলগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই সনদে সই করেনি।
অনৈক্য থাকলে সংকট
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব থেকে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (আপত্তি) বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনৈক্য স্পষ্ট হওয়ার বিষয়টি নজরে আসার কথা জানিয়েছেন বিবৃতিদাতারা।
এই প্রেক্ষাপটে তাঁরা বলেন, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে একদল মানুষের ঐকান্তিক চেষ্টার ফল বহুল আলোচিত এই জুলাই সনদ। সে জন্য তাঁরা ধন্যবাদপ্রাপ্য। তবে এ সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ প্রকাশিত হওয়ার পর নতুন করে অনৈক্যের সুর বেজে উঠেছে। জাতীয় ঐক্যকে প্রাধান্য দিয়ে সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ঐকমত্যে পৌঁছানো পর্যন্ত ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম চলমান থাকা জরুরি।
৫৩ নাগরিকের বিবৃতিতে বলা হয়, তাঁরা মনে করেন সংবিধান যেকোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব এবং সম্মিলনের প্রতীক। সংবিধান ও সংসদের কার্যক্রম, মর্যাদা অটুট রাখতে ঐক্যের বিকল্প নেই। ঐকমত্য কমিশন ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাদ দেওয়ার ফলে এ ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আপত্তির মীমাংসা না করে তাড়াহুড়া করে সংবিধানে সংস্কার আনলে অনৈক্য দীর্ঘস্থায়ী হবে ও বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীর সংকট দেখা দিতে পারে।
জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে ঐক্য না থাকলে ‘ফ্যাসিস্ট’ শক্তির ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে বলে হুঁশিয়ার করে বিবৃতিদাতারা বলেন, যার ফলে সনদ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য নির্ধারিত গণভোট বা জাতীয় নির্বাচন আয়োজনও ব্যর্থ হতে পারে।
দুই বছর বা যৌক্তিক সময়
গত ১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ সুপারিশ হস্তান্তরের পরদিন গতকাল শুক্রবার শেষ হয়েছে। তার এক দিন পরই আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বানে ৫৩ নাগরিকের বিবৃতি এল।
বিবৃতিতে বলা হয়, অন্যান্য দেশের সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একাধিক বছরব্যাপী আলাপ চলতে দেখা যায়। বর্তমান সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া সমীচীন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।
বিবৃতিদাতারা বলেন, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সব বিষয়ে সব দল একমত হবে, এমনটা আশা করা অযৌক্তিক। সে ক্ষেত্রে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদে এবং সংসদের বাইরে এসব আপত্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া জরুরি। আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছালে তা সবার জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশন তাদের দেওয়া ২৭০ দিনের (৯ মাস) সময়সীমা বাড়িয়ে দুই বছর বা যৌক্তিক সময় নির্ধারণ করতে পারে।
ঐকমত্য কমিশন সংবিধান সংস্কার আদেশের যে খসড়া দিয়েছে, সেখানে ২৭০ দিনের মধ্যে প্রস্তাব পাসের কথা বলা হয়েছে। বিকল্প সুপারিশে বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে তা সংসদ তথা সংবিধান সংস্কার পরিষদ পাস না করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে।
ঐকমত্য কমিশনকে কাজ চালিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি এতে নতুন করে লেখক, চিন্তক, অধিকারকর্মী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ অন্যান্য অংশীজনকে সংযুক্ত করার প্রস্তাব রাখেন বিবৃতিদাতারা।
তাঁরা বলেন, অরাজনৈতিক অংশের অংশগ্রহণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার বিভেদ কমিয়ে আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
বিবৃতি দিয়েছেন যাঁরা
গণমাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন সালাহ উদ্দিন শুভ্র, তাতে অন্যরা সম্মতি জানিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। বিবৃতিদাতারা হলেন কবি কাজল শাহনেওয়াজ, শিক্ষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আর রাজী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার ও আমিরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোস্তফা নাজমুল মনসুর তমাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল ফজল, আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ, লেখক ও সম্পাদক রাখাল রাহা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জি এইচ হাবীব; কবি, লেখক ও সংগঠক নাহিদ হাসান, গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আবুল কালাম আল আজাদ, কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদ, নৃবিজ্ঞানী সায়েমা খাতুন, কথাসাহিত্যিক গাজী তানজিয়া, মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন, কথাসাহিত্যিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র, প্রকাশক সাঈদ বারী ও মাহাবুবুর রহমান, কবি মৃদুল মাহবুব, সংগীতশিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অমল আকাশ, কবি ও সংগঠক চিনু কবির, প্রকাশক সাঈদ বারী, কবি ও অনুবাদক জামাল ভাস্কর, সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম সাব্বির, আইনজীবী মমিনুর রহমান, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সংগীতশিল্পী ইমামুল বাকের এপোলো, সাংবাদিক অনি আতিকুর রহমান, কবি ও সাংবাদিক পলিয়ার ওয়াহিদ, কথাসাহিত্যিক রাসেল রায়হান, কবি সানাউল্লাহ সাগর, কবি ও সংগঠক এনামুল হক পলাশ, রাজনৈতিক কর্মী শাকিলা খাতুন, রাজনৈতিক কর্মী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুল মজিদ অন্তর, গবেষক তানভীর আহমেদ, কবি সোয়েব মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেশকাত চৌধুরী, চলচ্চিত্র গবেষক হারুন-অর-রশিদ, কবি ও কথাসাহিত্যিক তছলিমা শাহনুর, কবি মাসুম মুনওয়ার, লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী আরিফ রহমান, কবি ও কথাসাহিত্যিক জব্বার আল নাঈম, মানবাধিকারকর্মী ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য রাফসান আহমেদ, থিয়েটার কর্মী আশরাফুল ইসলাম, কবি ও সম্পাদক সাজ্জাদ বিপ্লব, কথাসাহিত্যিক পিন্টু রহমান, জুলাই যোদ্ধা রকিব লিখন, চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহনেওয়াজ আরেফিন, কবি ও কথাসাহিত্যিক শাদমান শাহিদ, কবি ও কথাসাহিত্যিক আফসানা জাকিয়া, কবি ও অধিকারকর্মী শামীম রেজা এবং কবি ও অধিকারকর্মী ফুয়াদ সাকী।