কোনো ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, ঐকমত্য কমিশনের এমন প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

আজ শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জামায়াতে ইসলামীর এই অবস্থানের কথা জানান দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।

নায়েবে আমির বলেন, ঐকমত্য কমিশনের বেশ কিছু প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা একমত হয়েছি। আরও অনেকগুলো বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। অমীমাংসিত বিষয়গুলোতে পুনরায় আলোচনা হবে।

জামায়াতে ইসলামী জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে। তবে তারা মনে করে, এই কাউন্সিলে রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতিকে রাখা ঠিক হবে না। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের ক্ষেত্রে জামায়াতের অবস্থান হলো, সংবিধান সংশোধন, অর্থ বিল ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্য বিষয়গুলোতে সংসদ সদস্য স্বাধীনভাবে, অর্থাৎ দলের বিরুদ্ধেও ভোট দিতে পারবেন।

নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, এই তিন বিষয় ছাড়া ঐকমত্য কমিশনের অন্য প্রস্তাবগুলোর সঙ্গে একমত পোষণ করেছে জামায়াতে ইসলামী।

সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের পক্ষে জামায়াতের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্বের অন্তত ৬০টি দেশে এই পদ্ধতি সফলভাবে চলমান। কাজেই আমরা মনে করি, যে দল যতগুলো ভোট পাবে, তার ভিত্তিতে সংসদে তারা প্রতিনিধিত্ব করবে।

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে জামায়াতের প্রতিনিধিদল জানায়, সংসদের বর্তমান পরিধি হবে নিম্নকক্ষ এবং এর ভিত্তিতে একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। তবে এই পদ্ধতি কবে থেকে বাস্তবায়িত হবে, তা এখনো আলোচনা হয়নি।

এ ছাড়া আলোচানায় বহুত্ববাদের ধারণাকে পরিহার করে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপনের বিষয়টি পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত পাঁচটি কমিশনের সুপারিশ নিয়ে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে সকাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৈঠকে সংবিধান সংস্কার, বিচারব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও নির্বাচন কমিশন সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়।

অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক বিচারপতি এমদাদুল হক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন রাজনৈতিক দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জামায়াতের আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির। প্যানেল সদস্য হিসেবে আছেন মহিউদ্দিন সরকার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ প রস ত ব সদস য ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এখন দেশের ১৮ কোটি মানুষের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘এই সনদ নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জারি করা হোক এবং প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করা হোক। তবে এই গণভোট অবশ্যই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই হতে হবে, নির্বাচনের পরে নয়।’

আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে তৃতীয় ধাপে তৃতীয় দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রফিকুল ইসলাম খান। এ সময় উপস্থিত ছিলে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।

জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই আবারও রাস্তায় নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেন রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর সে সময়কার দলগুলোর ঐকমত্য থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতায় থাকা দলগুলো সেটি (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) যথাসময়ে বাস্তবায়ন করেনি। পরে আন্দোলনের মাধ্যমেই তা সংবিধানে যুক্ত হয়।

জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়েছিল বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের মাধ্যমে। আদালতের ওপর প্রভাব বিস্তার করে এ রায় দেওয়ানো হয়েছিল। তাই বিচার বিভাগকে আবার বিতর্কের মুখে না ফেলে সংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে জামায়াত।

জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ঐকমত্য কমিশন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে চারটি বিকল্প নিয়ে কাজ করেছে, যার মধ্যে কমিশন সংবিধানিক আদেশের প্রস্তাবটি সমর্থন করেছে। এই আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের ২২টি আর্টিকেল বাস্তবায়িত হতে পারে। এটি আইনিভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি।

এক প্রশ্নের জবাবে হামিদুর রহমান বলেন, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করার এখতিয়ার সংসদের নেই, এবং এ ধরনের পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই গণভোটের প্রয়োজন হয়।

জামায়াতে ইসলামী জনগণের অভিপ্রায়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে জামায়াতের এ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাই হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন।

জুলাই সনদের যে আদর্শ ও চেতনা, তা বাস্তবায়ন হওয়া উচিত এবং যারা এই আদর্শের পথে হাঁটবে না, জনগণ তাদের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করেন হামিদুর রহমান আযাদ। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ এটি প্রমাণ করে যে এ দেশের তরুণসমাজ ও জনগণ নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা চায় এবং জুলাই বিপ্লবের যোদ্ধাদের পক্ষেই রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের সুপারিশ, একমত নয় দলগুলো
  • ‘সংবিধান আদেশ’ জারির সুপারিশ করতে পারে কমিশন: আলী রীয়াজ
  • জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল
  • কমিটি গঠন, প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত 
  • বর্ধিত মেয়াদের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ
  • বিএনপি নির্বাচনমুখী কর্মসূচিতে যাবে
  • দলগুলোর সঙ্গে বুধবার আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন
  • ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হতে হবে
  • জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ফের এক মাস বাড়ল
  • সব দলের সম্মতিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে এবি পার্টি