জীবনে দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিপক্ষে জামায়াতে ইসলামী
Published: 26th, April 2025 GMT
কোনো ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, ঐকমত্য কমিশনের এমন প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
আজ শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জামায়াতে ইসলামীর এই অবস্থানের কথা জানান দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
নায়েবে আমির বলেন, ঐকমত্য কমিশনের বেশ কিছু প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা একমত হয়েছি। আরও অনেকগুলো বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। অমীমাংসিত বিষয়গুলোতে পুনরায় আলোচনা হবে।
জামায়াতে ইসলামী জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে। তবে তারা মনে করে, এই কাউন্সিলে রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতিকে রাখা ঠিক হবে না। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের ক্ষেত্রে জামায়াতের অবস্থান হলো, সংবিধান সংশোধন, অর্থ বিল ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্য বিষয়গুলোতে সংসদ সদস্য স্বাধীনভাবে, অর্থাৎ দলের বিরুদ্ধেও ভোট দিতে পারবেন।
নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, এই তিন বিষয় ছাড়া ঐকমত্য কমিশনের অন্য প্রস্তাবগুলোর সঙ্গে একমত পোষণ করেছে জামায়াতে ইসলামী।
সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের পক্ষে জামায়াতের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্বের অন্তত ৬০টি দেশে এই পদ্ধতি সফলভাবে চলমান। কাজেই আমরা মনে করি, যে দল যতগুলো ভোট পাবে, তার ভিত্তিতে সংসদে তারা প্রতিনিধিত্ব করবে।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে জামায়াতের প্রতিনিধিদল জানায়, সংসদের বর্তমান পরিধি হবে নিম্নকক্ষ এবং এর ভিত্তিতে একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। তবে এই পদ্ধতি কবে থেকে বাস্তবায়িত হবে, তা এখনো আলোচনা হয়নি।
এ ছাড়া আলোচানায় বহুত্ববাদের ধারণাকে পরিহার করে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপনের বিষয়টি পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত পাঁচটি কমিশনের সুপারিশ নিয়ে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে সকাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৈঠকে সংবিধান সংস্কার, বিচারব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও নির্বাচন কমিশন সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক বিচারপতি এমদাদুল হক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন রাজনৈতিক দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জামায়াতের আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির। প্যানেল সদস্য হিসেবে আছেন মহিউদ্দিন সরকার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ প রস ত ব সদস য ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত হতাশাজনক’ বলেছে দলটি।
আজ শুক্রবার রাতে এনসিপির এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহউদ্দিন সিফাত বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।
এনসিপির বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আলোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এনসিপি। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে লন্ডনে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি ‘সংসদ নির্বাচন’ বিষয়ে দলটিকে আস্থায় আনতে সফল হয়েছে সরকার। জাতীয় ঐক্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। কিন্তু বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রধান দাবি তথা বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করে এনসিপি।
নির্বাচন প্রশ্নে সরকার কেবল একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও দাবিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলে বারবার প্রতীয়মান হচ্ছে—এ কথা উল্লেখ করে এনসিপি আরও বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, জুলাই সনদ কার্যকর করা এবং বিচারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন গণ-অভ্যুত্থানকে স্রেফ একটি ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে পরিণত করবে এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন–আকাঙ্ক্ষাকে অবদমিত করবে।
জনগণের দাবি তথা জুলাই সনদ রচনা ও কার্যকর করার আগে নির্বাচনের কোনো তারিখ ঘোষিত হলে তা জনগণ মেনে নেবে না বলে উল্লেখ করেছে এনসিপি। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংস্কারের বিষয়গুলোর ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও জুলাই সনদ রচনা এবং কার্যকর করেই আসন্ন জুলাইকে যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করার উদ্যোগ নিতে সরকারকে জোর দাবি জানাচ্ছে এনসিপি।’
জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে জুলাই সনদ কার্যকর করা ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হওয়া উচিত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনসিপি।