চলতি বোরো মৌসুমে ধান কাটতে শ্রমিক সংকটে পড়েছেন কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইন ইটনা অষ্টগ্রামের কৃষকরা। হাওরের প্রায় ৩৫ শতাংশ জমির ধান কাটতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন তারা। অন্যদিকে আগাম বন্যা ও অতি বৃষ্টির আশঙ্কায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। 

কৃষকরা বলছেন, হাওরের ৬৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক সংকট ও হারভেস্টার না থাকায় ধান কাটতে পারছেন না তারা। এছাড়া সময়মত সেচের পানি না পাওয়ায় ধান রোপনে অধিকাংশ কৃষকের চারা রোপনে ১ মাস দেরি হয়েছে। এর মধ্যে যদি অতি বৃষ্টি বা বন্যা হয় তাহলে তাদের সোনার ফসল সব নষ্ট হয়ে যাবে। 

বড় হাওরের কৃষক মক্কুল জিরাতি বলেন, ঘাগড়া সেচ স্কিমে স্থানীয় দলাদলির কারণে সেচ স্কিম নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১ মাস পরে চালু হয়েছে। এর কারণে আমি ১ ছটাক ধানও গোলায় তুলতে পারিনি। এই হাওরে অন্য কৃষকের প্রায় ১০০ একর জমি রয়েছে ধানও পাঁকে নি। আরও অন্তত ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে। 

সিরাজ মিয়া বলেন, খাজােেগারিয়া হাওরে আমার ১০ একর জমির ধান এখনও পাঁকেনি। তবে ফলন ভালো হয়েছে। যদি সঠিক সময়ে ধান কাটতে না পারি তবে সব শেষ হয়ে যাবে আমার। 

তিনি জানান, অনেক কৃষক ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় নিজের জন্য অল্প ধান রেখে সব বিক্রি করে দিচ্ছেন। 

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মিঠামইনে ১২৭২ মেট্রিক টন ধান কিনবে তারা। ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ টাকা কেজি আর সিদ্ধ চাল ৪৯ টাকা কেজি। 

মিঠামইন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওবায়দুল ইসলাম অপু বলেন, হাওরের ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। অনেক কৃষকই সুদের টাকার কারণে অগ্রিম ধান বিক্রি করছেন। কয়েকদিন পরে বিক্রি করলে তারা ভালো দাম পেতেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কিশোরগঞ্জের উপপরিচালক ড.

সাদিকুর রহমান বলেন, এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলায় ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ১১৫ হেক্টর বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাওরে ১ লক্ষ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ লক্ষ ৬১ হাজার ১২ মেট্রিক টন চাল। যার বাজারমূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধ নক ষ ত হ ওর র

এছাড়াও পড়ুন:

অ্যাপে পরিচয়-প্রেম, বিয়ে করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলেন চীনের যুবক

ভাষা, সংস্কৃতি ও হাজার মাইলের দূরত্বকে হার মানিয়েছে ভালোবাসা। ভালোবাসার টানে এক তরুণীকে বিয়ে করতে বাংলাদেশে এসেছেন চীনের এক যুবক। গত শুক্রবার রাতে চীন থেকে ঢাকায় পৌঁছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এক তরুণীর বাসায় আসেন তিনি। আজ রোববার আদালতের মাধ্যমে তাঁরা বিয়ে সম্পন্ন করবেন।

চীনের যুবকের নাম ওয়াং তাও (৩৬)। চীনের হোয়ানান প্রদেশের ওয়াং ইচাং চাওয়ের ছেলে তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের তাহের মিয়ার মেয়ে সুরমা আক্তারের (২২) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে তাঁর। সুরমা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন এবং ঢাকার লালবাগে থাকেন। আজ রোববার তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন বলে তরুণীর পরিবার জানিয়েছে।

জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছান চীনের যুবক ওয়াং তাও। বিমানবন্দর থেকে চীনের যুবককে আতিথেয়তা দিয়ে নিজ বাড়ি নাসিরনগরের কুন্ডার কোনাপাড়ায় নিয়ে আসেন তরুণী সুরমাসহ তাঁর পরিবারের লোকজন।

স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও তরুণীর পরিবারের দাবি, দেড় থেকে দুই মাস আগে ডেটিং এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে সুরমার পরিচয় হয়। তাঁরা নিয়মিত চ্যাটে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। বিষয়টি চীনের যুবক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণী নিজ নিজ পরিবারকে জানান। উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাঁরা একে অপরকে বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। পরে চীনের যুবক বাংলাদেশ ও চীনের দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসেন। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে দুপুরের পর থেকে চীনের যুবককে দেখার জন্য সুরমার বাড়িতে ভিড় করেন স্থানীয় লোকজন।

সুরমা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ‘ওয়ার্ল্ড টক’ অ্যাপের মাধ্যমে চীনের যুবক ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে চ্যাট করতেন। একপর্যায়ে তাঁরা পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের সিদ্ধান্তে পৌঁছান।

সুরমার মা নুরেনা বলেন, ‘আমার মেয়ের ভালোবাসা পেতে চীন থেকে যুবক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে চলে এসেছে। ওই যুবক কোনো ধর্মই বিশ্বাস করে না। মেয়েকে বিয়ে করতে প্রয়োজনে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে। আগামীকাল (আজ) রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে মুসলিম রীতি মেনে সুরমাকে বিয়ে করবে চীনের যুবক। এতে দুই পরিবারের সম্মতি আছে। আমরা এই বিয়েতে আনন্দিত। মেয়ের খুশিই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

নাসিরনগর থানার কুন্ডা বিট উপপরিদর্শক (এসআই) জাহান-ই-আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে কুন্ডা গ্রামে যাই। পাসপোর্ট দেখে নিশ্চিত হলাম যে যুবক চীনের নাগরিক। ওই তরুণী ঢাকার লালবাগে থাকেন। ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে তাঁদের পরিচয়। একপর্যায়ে তাঁরা প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। চীনের যুবক ইংরেজি বোঝেন না। তাই কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে কথা বলতেন। তরুণী ও তাঁর পরিবার জানিয়েছে, রোববার হলফনামার মাধ্যমে চীনের যুবক মুসলিম হবেন। তারপর তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন।’ তরুণীর বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, চীনের যুবক এক থেকে দেড় মাস থাকবেন। যাওয়ার সময় হয় ওই তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বা পরে নিয়ে যাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ