Samakal:
2025-11-02@06:39:57 GMT

বজ্রপাতে ঝরে গেল ১৮ প্রাণ

Published: 29th, April 2025 GMT

বজ্রপাতে ঝরে গেল ১৮ প্রাণ

প্রচণ্ড তাপদাহের পর বৃষ্টি প্রশান্তি না এনে যেন বজ্রপাতের আতঙ্ক নিয়ে এসেছে। গতকাল সোমবার এক দিনেই ১১ জেলায় বজ্রাঘাতে চার শিক্ষার্থীসহ ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় পাঁচজন, কিশোরগঞ্জে তিনজন, নেত্রকোনায় দু’জন এবং খুলনা, শরীয়তপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর ও চাঁদপুরে একজন করে মৃত্যুর খবর 
পাওয়া গেছে।

বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে সরকারি নানা উদ্যোগ আছে। একে দুর্যোগও ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও মৃত্যু কমছে না। ভুল প্রকল্প, বড় গাছ কাটা বন্ধ না হওয়া এবং প্রয়োজনীয় সচেতনতা তৈরির চেষ্টা না থাকায় মৃত্যু রোধ হচ্ছে না, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বজ্রসহ ঝড়বৃষ্টি হওয়ার কারণ সম্পর্কে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, নদী শুকিয়ে যাওয়া, বায়ুদূষণ, জলাভূমি ভরাট হওয়া আর গাছ ধ্বংস হওয়ায় দেশে তাপমাত্রা এক থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। এতে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে আসা আর্দ্র বায়ু আর উত্তরে হিমালয় থেকে আসা শুষ্ক বায়ুর মিলনে বজ্রঝড়ের সৃষ্টি হচ্ছে।

গতকাল কুমিল্লার বরুড়া, মুরাদনগর ও দেবিদ্বারে বজ্রাঘাতে তিন স্কুল শিক্ষার্থী ও দুই কৃষকের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন– ফাহাদ হোসেন (১৩), মোহাম্মদ জিহাদ (১৪), নিখিল দেবনাথ (৫৫), জুয়েল ভূঁইয়া (৩২) ও মীম আক্তার (১০)। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইন উপজেলার তিন হাওরে বজ্রপাতের পৃথক ঘটনায় মারা গেছেন ইন্দ্রজিৎ দাস (৩৫), স্বাধীন মিয়া (১৬) ও ফুলেকা বেগম (৬৫)। নেত্রকোনার দুই উপজেলায় বজ্রাঘাতে মাদ্রাসাশিক্ষক দিদারুল হক (২৫) ও শিশু আরাফাত (১০) নিহত হন। হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে ধান কাটার সময় বজ্রাঘাতে মারা যান দূর্বাসা দাস (৩৫) নামের এক কৃষক। সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হাওর থেকে গরু আনার সময় বজ্রাঘাতে মারা যান কলেজছাত্র রিমন আহমদ তালুকদার (২৪)। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ধান কাটার সময় বজ্রাঘাতে মাখন রবি দাস (৪৮) নামের এক চা শ্রমিক মারা গেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে বজ্রপাতে মারা গেছেন মানিক মিয়া (৬৫) নামের এক কৃষক। চাঁদপুরের কচুয়ায় বজ্রপাতে মারা যান বিশাখা সরকার (৩৫) নামে কিষানি। খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতি গ্রামে বজ্রপাতে নিহত হন যুবক আরিফুল ইসলাম। শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে বজ্রপাতে সেফালী বেগম (৩৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। যশোরের শার্শায় বাড়ির আঙিনায় ধান মাড়াইকালে বজ্রপাতে আমির হোসেন (৪৫) নামের এক কৃষক মারা গেছেন।
কৃষকের মৃত্যুই বেশি

দেশের বজ্রপাত পরিস্থিতি এবং হতাহতের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরাম। প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে প্রাণ গেছে ৩ হাজার ৮৭০ জনের, অর্থাৎ প্রতিবছর ২৭৬ জনের বেশি। সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ২০২১ সালে– ৩৮১ জন। চলতি বছর গতকাল পর্যন্ত ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, কাল থেকে শুরু মে মাসজুড়ে বজ্রপাত ও কালবৈশাখীর পূর্বাভাস আছে।
দুর্যোগ ব‍্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং ডিজাস্টার ফোরামের তথ‍্য বলছে, সারাবিশ্বে বজ্রপাতে যে সংখ্যায় মানুষ মারা যায়, তার এক-চতুর্থাংশই বাংলাদেশে। দেশের হাওর, বাঁওড় ও বিলপ্রবণ জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশই মাঠে থাকা কৃষক, সাড়ে ১৪ শতাংশ বাড়ি ফেরার পথে আর ১৩ শতাংশ গোসল কিংবা মাছ শিকারের সময়। শহরের ভবনগুলোতে বজ্রপাত প্রতিরোধক দণ্ড থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, আকাশে যখন কালো মেঘ হয়, তখনই মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া উচিত। পায়ে জুতা থাকতে হবে। উঁচু গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া যাবে না। খোলা জায়গায় বা মাঠে থাকলে কী করতে হবে, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া আছে। 
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধি)

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন ম র এক উপজ ল র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

অ্যাপে পরিচয়-প্রেম, বিয়ে করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলেন চীনের যুবক

ভাষা, সংস্কৃতি ও হাজার মাইলের দূরত্বকে হার মানিয়েছে ভালোবাসা। ভালোবাসার টানে এক তরুণীকে বিয়ে করতে বাংলাদেশে এসেছেন চীনের এক যুবক। গত শুক্রবার রাতে চীন থেকে ঢাকায় পৌঁছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এক তরুণীর বাসায় আসেন তিনি। আজ রোববার আদালতের মাধ্যমে তাঁরা বিয়ে সম্পন্ন করবেন।

চীনের যুবকের নাম ওয়াং তাও (৩৬)। চীনের হোয়ানান প্রদেশের ওয়াং ইচাং চাওয়ের ছেলে তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের তাহের মিয়ার মেয়ে সুরমা আক্তারের (২২) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে তাঁর। সুরমা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন এবং ঢাকার লালবাগে থাকেন। আজ রোববার তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন বলে তরুণীর পরিবার জানিয়েছে।

জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছান চীনের যুবক ওয়াং তাও। বিমানবন্দর থেকে চীনের যুবককে আতিথেয়তা দিয়ে নিজ বাড়ি নাসিরনগরের কুন্ডার কোনাপাড়ায় নিয়ে আসেন তরুণী সুরমাসহ তাঁর পরিবারের লোকজন।

স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও তরুণীর পরিবারের দাবি, দেড় থেকে দুই মাস আগে ডেটিং এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে সুরমার পরিচয় হয়। তাঁরা নিয়মিত চ্যাটে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। বিষয়টি চীনের যুবক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণী নিজ নিজ পরিবারকে জানান। উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাঁরা একে অপরকে বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। পরে চীনের যুবক বাংলাদেশ ও চীনের দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসেন। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে দুপুরের পর থেকে চীনের যুবককে দেখার জন্য সুরমার বাড়িতে ভিড় করেন স্থানীয় লোকজন।

সুরমা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ‘ওয়ার্ল্ড টক’ অ্যাপের মাধ্যমে চীনের যুবক ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে চ্যাট করতেন। একপর্যায়ে তাঁরা পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের সিদ্ধান্তে পৌঁছান।

সুরমার মা নুরেনা বলেন, ‘আমার মেয়ের ভালোবাসা পেতে চীন থেকে যুবক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে চলে এসেছে। ওই যুবক কোনো ধর্মই বিশ্বাস করে না। মেয়েকে বিয়ে করতে প্রয়োজনে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে। আগামীকাল (আজ) রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে মুসলিম রীতি মেনে সুরমাকে বিয়ে করবে চীনের যুবক। এতে দুই পরিবারের সম্মতি আছে। আমরা এই বিয়েতে আনন্দিত। মেয়ের খুশিই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

নাসিরনগর থানার কুন্ডা বিট উপপরিদর্শক (এসআই) জাহান-ই-আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে কুন্ডা গ্রামে যাই। পাসপোর্ট দেখে নিশ্চিত হলাম যে যুবক চীনের নাগরিক। ওই তরুণী ঢাকার লালবাগে থাকেন। ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে তাঁদের পরিচয়। একপর্যায়ে তাঁরা প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। চীনের যুবক ইংরেজি বোঝেন না। তাই কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে কথা বলতেন। তরুণী ও তাঁর পরিবার জানিয়েছে, রোববার হলফনামার মাধ্যমে চীনের যুবক মুসলিম হবেন। তারপর তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন।’ তরুণীর বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, চীনের যুবক এক থেকে দেড় মাস থাকবেন। যাওয়ার সময় হয় ওই তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বা পরে নিয়ে যাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ