Samakal:
2025-06-15@18:53:00 GMT

বজ্রপাতে ঝরে গেল ১৮ প্রাণ

Published: 29th, April 2025 GMT

বজ্রপাতে ঝরে গেল ১৮ প্রাণ

প্রচণ্ড তাপদাহের পর বৃষ্টি প্রশান্তি না এনে যেন বজ্রপাতের আতঙ্ক নিয়ে এসেছে। গতকাল সোমবার এক দিনেই ১১ জেলায় বজ্রাঘাতে চার শিক্ষার্থীসহ ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় পাঁচজন, কিশোরগঞ্জে তিনজন, নেত্রকোনায় দু’জন এবং খুলনা, শরীয়তপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর ও চাঁদপুরে একজন করে মৃত্যুর খবর 
পাওয়া গেছে।

বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে সরকারি নানা উদ্যোগ আছে। একে দুর্যোগও ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও মৃত্যু কমছে না। ভুল প্রকল্প, বড় গাছ কাটা বন্ধ না হওয়া এবং প্রয়োজনীয় সচেতনতা তৈরির চেষ্টা না থাকায় মৃত্যু রোধ হচ্ছে না, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বজ্রসহ ঝড়বৃষ্টি হওয়ার কারণ সম্পর্কে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, নদী শুকিয়ে যাওয়া, বায়ুদূষণ, জলাভূমি ভরাট হওয়া আর গাছ ধ্বংস হওয়ায় দেশে তাপমাত্রা এক থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। এতে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে আসা আর্দ্র বায়ু আর উত্তরে হিমালয় থেকে আসা শুষ্ক বায়ুর মিলনে বজ্রঝড়ের সৃষ্টি হচ্ছে।

গতকাল কুমিল্লার বরুড়া, মুরাদনগর ও দেবিদ্বারে বজ্রাঘাতে তিন স্কুল শিক্ষার্থী ও দুই কৃষকের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন– ফাহাদ হোসেন (১৩), মোহাম্মদ জিহাদ (১৪), নিখিল দেবনাথ (৫৫), জুয়েল ভূঁইয়া (৩২) ও মীম আক্তার (১০)। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইন উপজেলার তিন হাওরে বজ্রপাতের পৃথক ঘটনায় মারা গেছেন ইন্দ্রজিৎ দাস (৩৫), স্বাধীন মিয়া (১৬) ও ফুলেকা বেগম (৬৫)। নেত্রকোনার দুই উপজেলায় বজ্রাঘাতে মাদ্রাসাশিক্ষক দিদারুল হক (২৫) ও শিশু আরাফাত (১০) নিহত হন। হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে ধান কাটার সময় বজ্রাঘাতে মারা যান দূর্বাসা দাস (৩৫) নামের এক কৃষক। সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হাওর থেকে গরু আনার সময় বজ্রাঘাতে মারা যান কলেজছাত্র রিমন আহমদ তালুকদার (২৪)। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ধান কাটার সময় বজ্রাঘাতে মাখন রবি দাস (৪৮) নামের এক চা শ্রমিক মারা গেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে বজ্রপাতে মারা গেছেন মানিক মিয়া (৬৫) নামের এক কৃষক। চাঁদপুরের কচুয়ায় বজ্রপাতে মারা যান বিশাখা সরকার (৩৫) নামে কিষানি। খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতি গ্রামে বজ্রপাতে নিহত হন যুবক আরিফুল ইসলাম। শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে বজ্রপাতে সেফালী বেগম (৩৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। যশোরের শার্শায় বাড়ির আঙিনায় ধান মাড়াইকালে বজ্রপাতে আমির হোসেন (৪৫) নামের এক কৃষক মারা গেছেন।
কৃষকের মৃত্যুই বেশি

দেশের বজ্রপাত পরিস্থিতি এবং হতাহতের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরাম। প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে প্রাণ গেছে ৩ হাজার ৮৭০ জনের, অর্থাৎ প্রতিবছর ২৭৬ জনের বেশি। সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ২০২১ সালে– ৩৮১ জন। চলতি বছর গতকাল পর্যন্ত ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, কাল থেকে শুরু মে মাসজুড়ে বজ্রপাত ও কালবৈশাখীর পূর্বাভাস আছে।
দুর্যোগ ব‍্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং ডিজাস্টার ফোরামের তথ‍্য বলছে, সারাবিশ্বে বজ্রপাতে যে সংখ্যায় মানুষ মারা যায়, তার এক-চতুর্থাংশই বাংলাদেশে। দেশের হাওর, বাঁওড় ও বিলপ্রবণ জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশই মাঠে থাকা কৃষক, সাড়ে ১৪ শতাংশ বাড়ি ফেরার পথে আর ১৩ শতাংশ গোসল কিংবা মাছ শিকারের সময়। শহরের ভবনগুলোতে বজ্রপাত প্রতিরোধক দণ্ড থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, আকাশে যখন কালো মেঘ হয়, তখনই মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া উচিত। পায়ে জুতা থাকতে হবে। উঁচু গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া যাবে না। খোলা জায়গায় বা মাঠে থাকলে কী করতে হবে, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া আছে। 
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধি)

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন ম র এক উপজ ল র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি কি জামায়াতকে চাপে রাখার কৌশলে

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপি নেতারা জামায়াতে ইসলামীকে ছাড় দিচ্ছেন না। গত চার মাসে দল দুটির নেতাকর্মীর মধ্যে অন্তত তিন জায়গায় মারামারি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ার জেরে বিএনপির সঙ্গে তাদের দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। স্থানীয় নেতারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে পাল্টাপাল্টি ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছেন। স্থানীয় লোকজন মনে করেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতকে চাপে রাখতেই বিএনপি এমন কৌশল নিচ্ছে।
আড়াইহাজার উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-২ আসন। এখানে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন অধ্যাপক ইলিয়াস মোল্লা। শনিবার নেতাকর্মী নিয়ে তিনি মাহমুদপুর ইউনিয়নের গহরদী এলাকায় যান। সেখানে বাধা দেন স্থানীয় বিএনপি কর্মীরা। এ বিষয়ে তাঁর পক্ষে আড়াইহাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা জামায়াতের (উত্তর) আমির মনিরুল ইসলাম।
জামায়াত নেতাদের অভিযোগ, শনিবার বিকেলে গহরদী বাদশা বাড়ি এলাকায় গণসংযোগ করছিলেন অধ্যাপক ইলিয়াস মোল্লা। এ সময় ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শাহজাহান শিকারির নেতৃত্বে ২০-২৫ জন বিএনপি নেতাকর্মী লাঠিসোটা নিয়ে পথসভায় বাধা দেন। দুই পক্ষের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তর্কাতর্কি হলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। হামলায় আহত হন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াতের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, দলের কর্মী আসাদুল্যাহ, কাউসার মিয়া, আলাউদ্দিন মিয়া, ওসমান গণি, নুরু মিয়া ও আলাউদ্দিন মিয়া। মাহবুবুর রহমান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
গত ১৭ মার্চ একই ইউনিয়নের কল্যান্দী মোল্লাপাড়া জামে মসজিদের সামনে জামায়াত আয়োজিত ইফতার মাহফিল বিএনপি কর্মীদের হামলায় পণ্ড হয়ে যায়। তখন জামায়াত নেতা মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করেছিলেন, ইফতারের ৪০ মিনিট আগে মাহমুদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশারের নেতৃত্বে তাঁর ১০-১৫ জন অনুসারী ইফতার মাহফিলে বাধা দেন। তারা 
প্যান্ডেল খুলে নিতে বললে আতঙ্কিত হয়ে জামায়াত কর্মীরা সরে যান। 
এ দুই ঘটনার বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাসুম শিকারি বলেন, ‘আড়াইহাজারে জামায়াতের এমন কোনো সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে উঠেনি, তাদের নিয়ে আলোচনা করতে হবে। ইফতার মাহফিল বা গণসংযোগে বাধা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। নিজেরা আলোচনায় আসার জন্য তারা বিএনপিকে দোষারোপ করছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, জামায়াতের কার্যক্রমে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশ নিচ্ছেন। এরাই অতীতে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী ও নিরীহ মানুষদের ওপর হামলা ও নির্যাতন করেছিল। চিহ্নিত এসব আওয়ামী দোসরদের জামায়াতের কর্মসূচিতে দেখে স্থানীয় লোকজনের তোপে পড়ে দলটি। এর সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই বলেও মন্তব্য করেন।
জামায়াত নেতাদের অভিযোগ, ৭ ফেব্রুয়ারি দলীয় আমির ডা. শফিকুর রহমান নারায়ণগঞ্জ আসেন। এ বিষয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের টেকপাড়ায় একটি প্রস্তুতি সভা হয়। সেখান থেকে ফেরার পথে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক মোল্লার নেতৃত্বে তাদের অপদস্থ করা হয়। হামলায় অন্তত সাতজন কর্মী আহত হন। এক পর্যায়ে বিএনপির ওই নেতা এলাকায় সব কর্মসূচি পালনে জামায়াত কর্মীদের নিষেধ করেন।
সর্বশেষ হামলার পর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে শনিবার রাতে এক বিবৃতি দেওয়া হয়। দলের নারায়ণগঞ্জ জেলা আমির মুহাম্মদ মমিনুল হক সরকার ও সেক্রেটারি মুহাম্মদ হাফিজুর 
রহমানের বিবৃতিতে দলের গণসংযোগে হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে।
এসব বিষয়ে জামায়াত নেতা অধ্যাপক ইলিয়াস মোল্লা বলেন, বিনা উস্কানিতে তাদের নেতাকর্মীর ওপর হামলা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিএনপির শীর্ষ 
নেতারা কী অবস্থান নিচ্ছেন, তা দেখছেন তারা। ঘটনাগুলোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহম্মেদের ভাষ্য, ‘দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে জামায়াত নেতাকর্মীর ওপর বিএনপির নেতাকর্মীর হামলার অভিযোগ পুরোপুরি ঠিক নয়। আমি যতদূর জেনেছি, তাদের দলের নেতাকর্মীর সঙ্গে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা অংশ নিচ্ছে। ফলে জামায়াতকে নিয়ে স্থানীয় লোকজনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে জামায়াতের স্থানীয় নেতারা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়ছেন।’ তিনি বলেন, এরপরও যদি দলের কোনো নেতাকর্মী জামায়াতের কর্মসূচিতে অপ্রীতিকর কিছু ঘটান, তাহলে খোঁজখবর নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেবেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ