নির্বাচন নিয়ে সরকারের কথার স্টাইল ভালো না: সোহেল
Published: 30th, April 2025 GMT
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন-নবী খান সোহেল বলেছেন, ‘‘নির্বাচন নিয়ে সরকারের কথার স্টাইল ভালো না। আমাদের ধৈর্যের বাঁধ কেউ যেন না ভাঙে।’’
বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকালে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
এ সময় হাবিব উন-নবী খান সোহেল বলেন, ‘‘আমরা সরকারকে সময় দিয়ে নির্দিষ্ট সময় চেয়েছি। কিন্তু আমাদেরও ধৈর্যের সীমা আছে।’’
আরো পড়ুন:
যারা রাজনীতি করি, তারাই হিন্দু-মুসলমানে ভাগ করেছি: মির্জা ফখরুল
জনগণের সরকারের দায়িত্ব খুব কঠিন ও চ্যালেঞ্জের: এ্যানি
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা সীমা যদি ক্রস করেন, মনে রাখবেন, বিএনপি কিন্তু আন্দোলন স্থগিত রেখেছে, আন্দোলন বন্ধ করে দেয় নাই। বিএনপির বিরুদ্ধে কথা-বার্তা বললে চিন্তা ভাবনা করে বলবেন। বিএনপি সব শক্তিকে মোকাবেলা করে আজকে এ পর্যায়ে এসেছে।’’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উদ্দেশ করে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘‘১৫ দিনের মুক্তিযোদ্ধা যদি এসে বলে ১৫ বছরের মুক্তিযোদ্ধাদের, আপনাদের কোনো অবদান নাই। আমরাই সব, আপনারা যানগা, তা কি হয়?’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের নেতা তারেক রহমান পুরো আন্দোলনটার নেতৃত্ব দিলেন। এখন শুনি অমুক মাস্টার মাইন্ড, তমুক মাস্টার মাইন্ড।’’ এ সময় তিনি সমাবেশে আসা নেতা-কর্মীদের জিজ্ঞেস করেন, ‘‘এরা কারা?’’ নেতাকর্মীরা তখন এরা ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ বলে স্লোগান তোলেন।
সারওয়ার হোসেন লিটনের সঞ্চালনায় ও সাইদুজ্জামান মোস্তফার সভাপতিত্বে তখন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেছ আলী মামুন, আবু ওয়াহাব আকন্দ, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, জেলা ও উপজেলার নেতারা।
সম্মেলনে প্রথম অধিবেশন শেষে দুই জন প্রার্থী থাকায় তাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতারা আলোচনার মাধ্যমে সভাপতি হিসাবে সারওয়ার হোসেন লিটনকে ঘোষণা করেন। সাধারণ সম্পাদক পদে পাঁচ জন প্রার্থীকে নিয়ে আলোচনায় সিদ্ধান্তে না পৌঁছাতে পেরে ভোট গ্রহণ করা হয়। রাতে ভোট গ্রহণ শেষে সাধারণ সম্পাদকের নাম জানা যায়নি।
ঢাকা/রুমন/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব এনপ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তান কি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের পথে?
গত সপ্তাহে কাশ্মীরের পেহেলগামের একটি মনোরম তৃণভূমিতে ২৬ জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হলো। মূলত ধর্মের ভিত্তিতে ঘাতকরা তাদের বেছে বেছে হত্যা করে। আমরা ঘটনার হৃদয়বিদারক সাক্ষ্য পড়েছি। কীভাবে কাছ থেকে পুরুষদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে– পরিবারের সদস্যদের সেই দৃশ্য দেখতে হয়েছে। এতে প্রায় সবাই ছিল হিন্দু। এসব হত্যাকাণ্ড ছিল অযৌক্তিক। এ ছাড়া আমরা পড়েছি, কীভাবে কাশ্মীরি ট্যুরিস্ট গাইড ও শিশুদের বিনোদন রাইডের পনি অপারেটররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক ভারতীয় পর্যটককে উদ্ধার করেছিলেন।
এই হামলা কারা ঘটিয়েছে, তা মৃতদের পরিবারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়– সেটা পাকিস্তানি কিংবা স্থানীয় কাশ্মীরি হোক, অথবা উভয় সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী। তাদের জীবন নিঃশেষ হয়ে গেছে। পাশাপাশি ভারত সরকারের চতুরতার সঙ্গে গড়ে তোলা স্বাভাবিকতার মুখোশও ধ্বংস হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটনের উত্থানের ফলে এই মুখোশ টিকেছিল।
আমরা আগেও অনেকবার এখানে এসেছি। প্রায় চার দশক ধরে কাশ্মীর রক্তপাতের চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। মাঝে মাঝে শান্ত থাকে। স্বাভাবিকতার জয়ধ্বনিপূর্ণ ঘোষণা এবং শান্তির সঙ্গে নীরবতার ইচ্ছাকৃত মিশ্রণের মধ্যে কেটেছে, যাতে এখানে আবারও ভ্রমণে যাওয়া যায়। ২০১৯ সালেও এখানে বিরাজমান স্বাভাবিক অবস্থা এবং সংঘাতের অবসানের কথা বলা হয়েছিল।
কিন্তু সেই ভাবমূর্তি ভেঙে যায় ফেব্রুয়ারিতে, যখন জইশ-ই-মোহাম্মদ নামে পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী একটি আধাসামরিক বাহিনীর গাড়িতে আক্রমণ করে। এতে ৪০ ভারতীয় সৈন্য হত্যা করা হয় এবং দুই দেশকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়। ১৯৪৮ সাল থেকে তারা যে তিনটি যুদ্ধ করেছে, তাতে বহু দিক থেকে দেশ দুটি সর্বদা যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ছিল। নির্দিষ্ট সময় পরপর তারা যুদ্ধের চারপাশে ঘুরতে থাকে; তারপর ফিরে আসে এবং অস্ত্র ও বাগ্বিতণ্ডা চলে।
এই বিপর্যয়কর বৈপরীত্যের মধ্য দিয়ে একটি প্রজন্ম এখন শেষের দিকে, যার বেশির ভাগ ক্ষতি কাশ্মীরিদের গুনতে হয়েছে। তাদের ৭০ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে, প্রায় ১০ হাজার হয়েছে নিখোঁজ এবং ২ লাখের বেশি কাশ্মীরি পণ্ডিত (হিন্দু) বাস্তুচ্যুত। এর কারণ ১৯৮৯ সালে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং বোমা বিস্ফোরণ বা পেহেলগামের মতো হামলায় ভারতীয় নাগরিকের নিহত হওয়ার ঘটনা। এটা বলা অযৌক্তিক– এ ধরনের সহিংসতা শূন্য থেকে উদ্ভূত। কারণ ব্যাপক সহিংসতার উৎস আমাদের ইতিহাস ও রাজনীতি উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে। যেমন ১৯৪৭ সালে ধর্মীয় ভিত্তিতে দেশভাগের এখনও জ্বলন্ত ক্ষত এবং কাশ্মীর নিয়ে বিরোধের অমীমাংসিত প্রকৃতি।
২০১৮ সাল থেকে ভারত দিল্লির নিযুক্ত করা গভর্নরের মাধ্যমে সরাসরি এ অঞ্চল শাসন করে আসছে। পরের বছর মোদি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের সীমিত স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে। যদিও এখন একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী আছেন, তবু পদকে কার্যকরভাবে নামমাত্র করে তোলা হয়েছে। সরকারের এসব সিদ্ধান্ত এতটাই বিকৃত হয়ে ওঠে, এই মাসের শুরুতে একটি উচ্চস্তরের নিরাপত্তা সভায় বর্তমান ক্ষমতাসীন এক কাশ্মীরিকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। অঞ্চলটির ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে ভারত কাশ্মীরের অভ্যন্তরে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যমান সীমান্তে প্রায় পাঁচ লাখ সৈন্য নিয়ে একটি বিশাল সামরিক বাহিনী বলবৎ রেখেছে। স্থানীয় বা পাকিস্তানি পৃষ্ঠপোষকতায় সশস্ত্র গোষ্ঠীদের জন্য এসব উর্বর ভূমি অবাক করার মতো কিছু নয়।
মির্জা ওয়াহিদ: ইংল্যান্ডভিত্তিক কাশ্মীরের লেখক; দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম