ঢাকা-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ রুটে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়, জিম্মি যাত্রীরা
Published: 2nd, May 2025 GMT
ঢাকা-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ রুটে চলাচলকারী গাজীপুরের কাপাসিয়া, কিশোরগঞ্জ জেলা সদর, পাকুন্দিয়া, কটিয়াদি, হেসেনপুর, নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলাসহ আশপাশের লাখ লাখ মানুষ পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। সবগুলো পরিবহন কোম্পানি যাত্রীদের কাছ থেকে গেটলক সার্ভিসের ভাড়া আদায় করলেও বাসগুলোতে সেবা মিলে লোকাল সার্ভিসের। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে যাত্রীদেরকে অনেক সময় মারধরের শিকার হতে হয়।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় ‘ঢাকা পরিবহন’, ‘প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন’ ও ‘ভাওয়াল পরিবহনে’র প্রায় শতাধিক বাস কাপাসিয়া সদর থেকে ঢাকা গেলেও বর্তমানে কাপাসিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজধানী কিংবা গাজীপুর সদরের উদ্দেশ্যে কোনো বাসই যাত্রা শুরু করে না। ফলে যাত্রার শুরুতে সিট মিলে না এখানকার অধিকাংশ যাত্রীর। এমনকি লোকাল সার্ভিসের মতো সেবাদাতা ২টি পরিবহনের বাস ছাড়া অন্যান্য বাসগুলোকে কাপাসিয়া সদরে এবং আশপাশের অধিকাংশ স্টপেজে যাত্রী উঠানামা করতে দেওয়া হয় না। ফলে ওই নির্দিষ্ট পরিবহনের বাসে যাত্রীরা তাদের ব্যাগ ও ছোট খাট জিনিস নিয়ে উঠতে গিয়ে মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন।
পরিবহন সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে কাপাসিয়া হয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি, পাকুন্দিয়া, হোসেনপুর ও কিশোরগঞ্জ এলাকায় জলসিড়ি এক্সপ্রেসের ৬৪টি, অনন্যা পরিবহনের ৪৭টি, উজানভাটি পরিবহনের ২৬টি এবং অনন্যা ক্লাসিকের ৫৪টি যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। পাশাপাশি মহাখালী বাসটার্মিনালের উত্তর পাশের একটি পেট্রোল পাম্প এলাকা থেকে কাপাসিয়া হয়ে নরসিংদী জেলার মনোহরদীর চালাকচর পর্যন্ত ‘সম্রাট পরিবহনে’র ৪৫টি এবং সম্রাট ট্রান্সলাইনের ১৯টি যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। তাছাড়া গাজীপুর সদর থেকে কাপাসিয়ার সর্ব উত্তরের জনবহুল স্থান টোক বাজার পর্যন্ত ‘পথের সাথী রাজদূত’ পরিবহনের প্রায় ৪০টির মতো যাত্রবাহী বাস চলাচল করে থাকে।
কাপাসিয়া সদরের আমিনুর রহমান নামের এক যাত্রী জানান, গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে কাপাসিয়ার দূরত্ব মাত্র ২৯ কিলোমিটার। সেখান থেকে ‘অনন্যা পরিবহন’, ‘অনন্যা ক্লাসিক’ ও ‘জলসিড়ি এক্সপ্রেসের’ বাসে কাপাসিয়া আসতে যাত্রীদেরকে ২০০ টাকা দিয়ে একটি টিকিট কিনতে হয়। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে কাউন্টার থেকে বলা হয়, যেহেতু কাপাসিয়ায় তাদের স্টপেজ নেই; তাই টোক বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত টিকিট কিনে কাপাসিয়া যেতে হবে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে নানা কটু কথা শুনতে হয় এবং হেনস্তার শিকার হতে হয়।
উপজেলার টোক ইউনিয়নের বীর উজুলী এলাকার মোজাম্মেল হোসেন জানান, বীর উজুলি থেকে গাজীপুর চৌরাস্তার দূরত্ব ৪৪ কিলোমিটার এবং অনন্যা ক্লাসিক পরিবহনের টিকিটের গায়ে ১৫০ টাকা লেখা থাকলেও এখানে ভাড়া আদায় করা হয় ১৯০ টাকা।
টোক এলাকার ব্যবসায়ী আমানউল্লাহ জানান, টোক থেকে কাপাসিয়ার দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার হলেও পথের ‘সাথী রাজদূত’ পরিবহনে ভাড়া আদায় করা হয় ৫০ টাকা এবং গাজীপুরের দূরত্ব ৫২ কিলোমিটার হলেও ভাড়া আদায় করা হয় ১৫০ টাকা। অন্যান্য পরিবহনগুলোতে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে টোক পর্যন্ত ভাড়া গুণতে হয় ১৭০ টাকা থেকে ২শ’ টাকা পর্যন্ত। খিরাটি এলাকার মো.
মো. আলী হোসেন নামে কিশোরগঞ্জ এলাকার একজন যাত্রী জানান, ঢাকা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে কিশোরগঞ্জের দূরত্ব ১০২ কিলোমিটার হলেও অনন্যা পরিবহনে তাদেরকে ভাড়া দিতে হয় ৩৩০ টাকা। ঢাকা-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ সড়কে ভাড়া নৈরাজ্যের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত বলে তিনি জানান।
জ্বালানি তেলের দাম উঠানামার পর সর্বশেষ ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল বিআরটিএ দূরপাল্লার বাসে প্রতিকিলোমিটার ২ টাকা ১২ পয়সা ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। ভাড়ার এই নতুন হার ডিজেলচালিত বাসের জন্য প্রযোজ্য হবে এবং সিএনজিচালিত বাসে ভাড়া এক পয়সাও বাড়ানো যাবে না বলে সতর্ক করা হয়। কিন্তু ঢাকা-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ ও ঢাকা-কাপাসিয়া-মনোহরদী সড়কে চলাচলরত সাতটি কোম্পানির বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া লেখা থাকে। তদুপরি টিকিটের গায়ে আবারো নতুন করে সিল মেরে গড়ে সাড়ে তিন টাকা থেকে পাঁচ টাকা কিলোমিটার হারে ভাড়া আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি কোম্পানিগুলো সরকার নির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে নিজেদের মতো করে একটি ভাড়ার তালিকা করে রেখে দেন। সাধারণ যাত্রীরা তালিকা দেখতে চাইলে তা দেখিয়ে অনেকটা জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। কোনো কোনো কোম্পানি বেশির ভাগ বাস সিএনজিচালিত হলেও তারা তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি ভাড়া আদায় করলেও তেলের দাম কমার পর সরকার ভাড়া কমালে তা আমলে নেয়নি। পরিবহন কোম্পানির মালিকরা সংঘবদ্ধ ও প্রভাবশালী হওয়ায় এ পথের যাত্রীরা ভাড়া নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেও কোনো সুফল পান না বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবহন নেতা দাবি করেন, এ সড়কে অতিরিক্ত বাসের কারণে ভয়াবহ যানজট হয়। এ কারণে বর্তমানে তাদের বাসগুলো পর্যাপ্ত যাত্রী পাচ্ছেন না এবং যাতায়াতে সময় বেশি লাগায় ট্রিপ কমে গেছে।
এ বিষয়ে গাজীপুর বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, কোনো অবস্থাতেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না, এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালমা আক্তার জানান, যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার বিষয়টি তার জানা ছিল না। খুব শীঘ্রই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে যারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ পর বহন র এল ক র অনন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।